অথবা, মীমাংসা দর্শনের অনুমানের অবয়ব বলতে কী বুঝ?
অথবা, মীমাংসা অনুমানের অবয়ব কী?
অথবা, মীমাংসকদের মতে অবয়ব কাকে বলে?
উত্তর৷ ভূমিকা : মীমাংসা দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি জৈমিনি। মীমাংসা দর্শনকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা : ১. জ্ঞান (Knowledge) ২. তত্ত্ব (Metaphysics) এবং ৩. নীতি ও ধর্ম (Ethics and Religion)। প্রমাণ হলো যথার্থ জ্ঞান লাভের প্রণালি বা উপায়। জৈমিনির মতে, প্রমাণ তিন প্রকারের। যথা : ১. প্রত্যক্ষ, ২. অনুমান ও ৩. শব্দ।
কিন্তু প্রভাকরের মতে প্রমাণ পাঁচ প্রকারের । যথা : ১. প্রত্যক্ষ, ২. অনুমান, ৩. শব্দ, ৪. উপমান ও ৫. অর্থাপত্তি। কুমারিল ভট্ট প্রভাকর মিত্র প্রদত্ত পাঁচ প্রকার প্রমাণের সাথে আর একটি প্রমাণ যোগ করেন। সেটি হলো অনুপলব্ধি । সুতরাং কুমারিলের মতে প্রমাণ ছয় প্রকার। যথা : ১. প্রত্যক্ষ, ২. অনুমান, ৩. শব্দ, ৪. উপমান, ৫. অর্থাপত্তি এবং ৬. অনুপলব্ধি । নিম্নে মীমাংসা দর্শনের অনুমান প্রমাণ আলোচনা করা হলো :
অনুমানের অবয়ব (The Constituents of inference): অনুমান সম্পর্কে মীমাংসকদের আলোচনা ন্যায় দর্শন বা নৈয়ায়িক মতের অনুরূপ। অনুমান শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো জ্ঞানের পশ্চাৎগামী জ্ঞান। যে বাক্যগুলো দ্বারা অনুমান সাধিত হয় সেই বাক্যগুলোকে অনুমানের অবয়ব বলা হয়। মীমাংসকদের মতে, যে কোন অনুমানে তিনটি পদ থাকবে।
যথা : সাধ্য (Major); পক্ষ (Minor), হেতু বা লিঙ্গ বা সাধন (Middle) যা অনুমিত হয় তা সাধ্য, যার মধ্যে সাধ্যের অস্তিত্ব অনুমান করা হয় তা পক্ষ এবং যে জিনিসের প্রত্যক্ষের ভিত্তিতে অনুমান করা হয় তা হেতু বা লিঙ্গ বা সাধন পদ।
উদাহরণ : ঐ পর্বতে ধূম আছে। যেখানে যেখানে ধূম আছে সেখানে সেখানে অগ্নি আছে। ঐ পর্বতে অগ্নি আছে। উপর্যুক্ত অনুমানে অগ্নি হলো সাধ্য, কারণ ঐ অনুমানে অগ্নি অনুমিত হয়েছে। পর্বত হলো পক্ষ, কারণ পর্বতের মধ্যে অগ্নির অস্তিত্ব অনুমান করা হয়েছে আর ধূম হলো হেতু কারণ ধূমের ভিত্তিতে অগ্নিকে অনুমান করা হয়েছে। পাশ্চাত্য যুক্তিবিজ্ঞানীরাও প্রত্যেক ন্যায় অনুমানে সাধ্য, পক্ষ ও হেতু এ তিনটি পদের অস্তিত্ব স্বীকার করেন। মীমাংসকদের মতে, প্রত্যেক অনুমানে অন্তত তিনটি বচন থাকবে। এ তিনটি বচন নিরপেক্ষ হবে এবং সদর্থক বা নঞর্থক উভয়ই হতে পারে। যেভাবে সাধারণত অনুমান করা হয় এবং উপর্যুক্ত দৃষ্টান্তে আমরা যেভাবে অনুমান করছি তা হতে দেখা যায়- প্রথম বচনে পক্ষ (পর্বত) হেতুর (ধূমের) প্রত্যক্ষ, দ্বিতীয় বচনে হেতুর (ধূমের) সঙ্গে সাধ্যের (অগ্নির)
সার্বিক সম্পর্ক স্মরণ এবং তৃতীয় বচনে (পর্বত) সাধ্যের (অগ্নির) অস্তিত্ব অনুমান করা হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মীমাংসকদের জ্ঞানতত্ত্বে অনুমান সম্পর্কে যে আলোচনা করা হয়েছে তা
ভারতীয় দর্শনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মূলত ভারতীয় দর্শন যে বিচার বিযুক্ত নয় এবং অতিসূক্ষ্ম বিচার বিশ্লেষণের উপ প্রতিষ্ঠিত মীমাংসকদের অনুমান সম্পর্কিত আলোচনায় সে কথাই প্রমাণিত হয়।