
ডিগ্রী অনার্স মাস্টার্স পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে পেতে Whatsapp এ ম্যাসেজ করুন। Whatsapp 01979786079
মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘আত্মবিলাপ কবিতা অবলম্বনে কবির মর্মবেদনার স্বরূপ বিশ্লেষণ কর।
admin
- 0
অথবা, “আত্মবিলাপ কবিতা যন্ত্রণাপীড়িত কবির মর্মান্তিক আর্তনাদ।”- উক্তিটির যথার্থতা যুক্তিসহ বিচার কর।
উত্তর ভূমিকা : আধুনিক বাংলা কবিতার জনক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩) ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। পাশ্চাত্য সাহিত্য-সংস্কৃতির পূজারি মধুসূদন ধূমকেতুর মতাে বাংলা সাহিত্যচর্চায় মনােনিবেশ করে বাংলা সাহিত্যকে উন্নতির চরম শিখরে পৌছে দিয়ে গিয়েছেন। মেঘনাধবধ কাব্য কবির শ্রেষ্ঠ কীর্তি হলেও বাংলা গীতিকবিতার ক্ষেত্রেও তিনি অসামান্য কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন। আত্মবিলাপ’ মাইকেল মধুসূদন দত্তের একটি শ্রেষ্ঠ মন্ময় গীতি কবিতা। কবিতাটিতে কবি মনুষ্যজীবনের ভুলভ্রান্তির মর্মবেদনাকে নিজের মর্মবেদনার আঙ্গিকে ব্যক্ত করেছেন।
কবির আত্মােপলব্ধি: কি আশায় বাঁধি খেলাঘর, বেদনার বালুচরে’- কথাটি আধুনিককালের হলেও শতাধিক বছর পূর্বে মহাকবি মধুসূদন নিজের জীবন পরিক্রমায় এ কথার মর্ম হাড়ে হাড়ে অনুভব করেছিলেন। বস্তুত আশায় বুক বেঁধেই মানুষ বেছে থাকে। হতাশায় যখন মানুষের দেহ-মন আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে তখন আশাই তাকে বাঁচিয়ে তুলতে পারে। আশা জ্বলন্ত প্রেরণা শক্তি কর্মের পথে মানুষকে ধাবিত করে। আশার পিছনে পিছনে ছুটােছুটি কর্মোদ্যমী মানুষজনের সাফল্যকে ছিনিয়ে আনতে চায়। কিন্তু
আশী যখন মরীচিকার মতাে লুপ্ত হয়ে পড়ে তখন জীবনে নেমে আসে গভীর দুঃখবােধ ও হতাশা। আত্মবিলাপ’ কবিতায় কবি। মানুষের এ জীবনবােধকে আত্মােপলব্ধির ভাষ্যে প্রকাশ করতে গিয়ে কবি বলেছেন-
“আশার ছলনে ভুলি
কী ফল লভিনু হায়,
তাই ভাব মনে?
জীবন-প্রবাহ বহি
কালসিন্ধু পানে যায়
ফিরাব কেমনে?”
কবির এ প্রশ্নের মধ্য দিয়েই তার জীবনবােধের যে আত্মােপলব্ধি তা মূর্ত হয়ে প্রকাশ পেয়েছে।
কবির মর্মবেদনা : ‘আত্মবিলাপ’ কবিতায় কবি তার বেদনাজর্জরিত হাহাকারের স্বরূপ উন্মােচন করেছেন। অর্থ, যশ আর খ্যাতির প্রত্যাশায় তিনি সারা জীবন ছুটে বেড়িয়েছেন। জাত, ধর্ম, দেশ, ভাষা, সংস্কৃতি প্রভৃতি ত্যাগ করে বিজাতীয় উন্নত সাহিত্য। সংস্কৃতির চর্চা করতে গিয়ে কবি ব্যর্থ হয়েছেন। ক্রমাগত ছােটাছুটির কারণে এক সময় তার আয়ু ফুরিয়ে এসেছে। সে কথাটাই তিনি বলেছেন-
“দিন দিন আয়ুহীন হীন বল দিন দিন
তবু এ আশার নেশা ছুটিল না, একি দায়।”
কিন্তু আশা তবুও মানুষের পিছু ছাড়ে না। বিস্তৃত জীবন থেকে যৌবন ফুরিয়ে এলেও ভ্রান্তি তবু দূর হয় না। কেবল না পাওয়ার
বেদনায় ভারাক্রান্ত মন তখন আপসােস করে বলে উঠে-
“নারিলি হরিতে মণি দংশিল কেবল ফণী
এ বিষম বিষজ্বালা ভুলিবি মন কেমনে?”
ভালাে কিছু লাভের আশায় জীবন বিপন্ন করেও কবি ব্যর্থমনােরথ হয়ে এ মর্মবেদনার জ্বালায় জ্বলে মরেছেন। এ বেদনা তাঁকে অহর্নিশি তাড়িয়ে ফিরেছে। এর থেকে মুক্তি মেলেনি তার। কবির শেষ জিজ্ঞাসা : বার বার ব্যর্থ হওয়ার পরও মানুষ আশার ছলনায় আশাবাদী হয়। মণি মুক্তার লােভে জেলে সমুদ্রের অতল তলে ডুব দিতে দিতে মুক্তার চেয়েও দামি যে আয়ু তা হারিয়ে ফেলে। তবু সে আশা ছাড়ে না। আশার কুহকে পড়ে সে অনবরত নিজেকে নিঃশেষ করতে থাকে। কবি মানুষের এ বােকামির কারণে কষ্ট পেয়ে বলেছেন-
“মুকুতা ফলের লােভে ডুবেরে অতল জলে
যতনে ধীবর,
শতমুক্তাধিক আয়ু কালসিন্ধু জল তলে
ফেলিস পামর!
ফিরে দিবি হারাধন, কে তােরে, অবােধ মন
হায়রে, ভুলিবি কত আশার কুহক ছলে?”
কবির মর্মবেদনার স্বরূপ : পদ্ম পাতার উপরিস্থিত জলকণার মতাে ক্ষণস্থায়ী মানুষের জীবন যে-কোন সময় শেষ হয়ে যায়। তবুও ক্ষণস্থায়ী এ জীবনের জন্য মানুষের কত মায়া। আশার ছলনায় ভুলে মানুষ কত কি করে তার ইয়ত্তা নেই। কবি এ ভেবে বেদনায় জর্জরিত হন যে, জীবনের স্থায়িত্ব সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও মানুষ আশার কুহকে কেন ভলে! কবি নিজের জীবনাচরণের মধ্যেও এ ক্রটি লক্ষ করেছেন তিনি অনুতাপানলে দগ্ধীভূত হয়েছেন। এ ভুলের জন্য আমৃত্যু কবি অনুতাপ করে গিয়েছেন। মানুষের এ ভুলকে তিনি সহজভাবে নিয়ে ক্ষমা করতে পারেননি। তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন-
“রে প্রমত্ত মন মম! কবে পােহইবে রাতি?
জাগিবিরে কবে?
জীবন-উদ্যানে তাের যৌবন-কুসুম ভাতি
কতদিন রবে?”
উপহার : উপযুক্ত আলােচনা শেষে বলা যায় যে, আশার মােহপাশে আবদ্ধ হয়ে মানুষ জীবনের অমূল্য সময় ক্ষয় করে। অনাদিকাল থেকে মানুষ এই ভুল করে আসছে। কবি মধুসূদনও নিজ জীবনে একই ভুল করেছেন। এ ভুলের জন্য তাঁর অনুতাপের সীমা নেই। এক সীমাহীন মর্মবেদনায় কবি আজীবন আপ্লুত হয়েছেন।
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079