মরিবে না, সে কিছুতেই মরিবে না। বনের পশু যে অবস্থায় বাঁচে না, সেই অবস্থায়, মানুষ সে বাঁচিবেই।”- উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।

উত্তর : আলোচ্য গদ্যাংশটুকু ত্রিশোত্তর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম রূপকার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বিরচিত ‘প্রাগৈতিহাসিক শীর্ষক ছোটগল্প থেকে চয়ন করা হয়েছে। এখানে প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে থেকেও দুর্ধর্ষ ডাকাত ভিখুর বেঁচে থাকার তীব্র আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে উল্লিখিত মন্তব্য করা হয়েছে। দুর্ধর্ষ ডাকাত ভিখু তার দলবল নিয়ে বসন্তপুর গ্রামের বৈকুণ্ঠ সাহার গদিতে ডাকাতি করতে গিয়েছিল। সেখানে সে ছাড়া অন্য সকলে ধরা পড়লেও ভিখু ডান কাঁধে একটা বর্শার খোঁচা খেয়ে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিল। রাতারাতি আহত অবস্থায় দশ মাইল হেঁটে সে পরের দিনটা মাথাভাঙ্গা পুলের নিচে কাদার মধ্যে লুকিয়ে কাটাল। পরের রাতে আরও নয় ক্রোশ পথ পাড়ি দিয়ে ভি চিতলপুরের পেহ্লাদ বাগদীর বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। পুলিশের ভয়ে পেহ্লাদ তাকে বাড়িতে না রেখে পাঁচ মাইল দূরবর্তী বনের
মধ্যে নিয়ে রেখে এল। সেখানে সিনজুরি গাছের ঝোপের আড়ালে মাঁচা বেঁধে কিছু খাবার দিয়ে পেহ্লাদ চলে এল । কয়েকদিনের মধ্যে খাবার ফুরিয়ে গেল এবং ভিখুর কাঁধের ঘা পঁচে উঠে লাল রঙের পুঁজ পড়তে লাগল। বনের মধ্যে এই মানবেতর পরিবেশে বনের পশুর পক্ষেও বাঁচা সম্ভব ছিল না। কিন্তু মানুষ হয়েও ভিখু বাঁচতে চাইল। মরবে না, সে কিছুতেই মরবে না। বাঁচার তীব্র আকাঙ্ক্ষায় ভিখু মাটি কামড়ে পড়ে থাকল । আত্মপ্রত্যয়ী ভিখু মৃত্যুকে জয় করার মানসে মানবেতর জীবনের সাথে পাঞ্জা লড়ছিল। বনের পশু যে অবস্থায় বাঁচে না মানুষ হওয়া সত্ত্বেও সে সেই অবস্থায় বাঁচার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিল।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%97%e0%a7%88%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%97%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%aa-%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%bf/