Other

মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষার শ্রেণিবিভাগ লিখ

অথবা, মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষার ধরনগুলো লিখ ।

অথবা, মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষা কত প্রকার ও কী কী?

উত্তর: ভূমিকা : মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষার শ্রেণিবিভাগ মানসিক প্রক্রিয়ার বিভিন্ন মানসিক অধিকারের উপর ভিত্তি করে করা হয়। এই অভীক্ষা শ্রেণিবিভাগ মানসিক প্রক্রিয়াগুলির সাথে সম্পর্কিত একাধিক বিষয়বস্তু এবং মানসিক অধিকারের সাথে যোগসংযোগ করে তাদের ব্যবহার ও ব্যাপারে বিভিন্ন মেয়াদ দেয়। এই শ্রেণিবিভাগগুলি মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণার আধারে তৈরি হয় এবং মানসিক অধিকারের প্রক্রিয়াগুলির স্বভাব ও চর্চার দিকে প্রাথমিক ধারণা দেয়।

মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষার শ্রেণিবিভাগ : নিম্নলিখিত মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষার শ্রেণিবিভাগগুলি সাধারণভাবে ব্যবহার হয়:

ক. বুদ্ধি অভীক্ষা : পরিবেশের সকল পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে চলার ক্ষমতাকে বুদ্ধিমত্তা বলে। কর্মচারীর দক্ষতা মূল্যায়নে যেসব মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষা রয়েছে তন্মধ্যে বুদ্ধিমত্তা অভীক্ষা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। বুদ্ধিমত্তা ব্যক্তির কতকগুলো সাধারণ বৈশিষ্ট্য এর মাধ্যমে ব্যক্তির বোধগম্যতা ও বিচারশক্তি প্রকাশ পায়। এছাড়া বুদ্ধিমত্তা অভীক্ষার সাহায্যে ব্যক্তির মানসিক ক্ষমতা ও তৎপরতা, কারণ অনুধাবন ক্ষমতা বিচারশক্তি প্রভৃতি সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। এর সাহায্যে পরবর্তীতে শ্রমিকের কার্য সম্পর্কিত মাত্রা সম্পর্কে অনুমান করা যায়। সাধারণ বুদ্ধিমত্তা অভীক্ষাকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা :

১. বিনোসিমোঁ বুদ্ধি অভীক্ষা,

২. ওয়েসলার বুদ্ধি অভীক্ষা এবং

৩. যৌথ বুদ্ধি অভীক্ষা ।

১. বিনোসিমো বুদ্ধি অভীক্ষা : ১৯০৫ সালে ফরাসি মনোবিজ্ঞানী আলফ্রেড বিনে এবং তাঁর সহযোগী সিমোঁ শিশুদের বুদ্ধি পরিমাপের জন্য একটি অভীক্ষা তৈরি করেন। তারা শিশুদের উপযোগী করে সহজ হতে জটিল এবং জটিল হতে জটিলতর এভাবে ৩০টি প্রশ্ন রচনা করেন। প্রশ্নগুলো ছিল নানা প্রকারের। এ অভীক্ষায় শিশুর নানা দিক প্রকাশ পেত। এ অভীক্ষাটিকে পরবর্তী সময়ে অনেকবার সংস্কার করা হয়।

২. ওয়েসলার বুদ্ধি অভীক্ষা : ওয়েসলার বুদ্ধি অভীক্ষাটি মানসিক ডাক্তার ওয়েসলারের নামে পরিচিত। ১৯৩৯ সালে এ অভীক্ষাটি সংস্কার করা হয়। এই অভীক্ষাটি ভাষাগত এবং ভাষাবর্জিত উভয় প্রকার পদ নিয়ে গঠিত। বিনেসিমোঁর বুদ্ধি অভীক্ষাটি ছিল শিশুদের জন্য উপযোগী কিন্তু ওয়েসলারের বুদ্ধি অভীক্ষাটি পরিণত বয়সের ব্যক্তিদের জন্য উপযোগী।

৩. যৌথ বুদ্ধি অভীক্ষা : কম সময়ে এক সাথে অনেক লোকের বুদ্ধি পরিমাপের জন্য যৌথ বুদ্ধি অভীক্ষা উদ্ভাবন করা হয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে যখন একই সাথে অনেক সৈন্যকে তাদের বুদ্ধি অনুযায়ী শ্রেণিবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তখন দুই প্রকার অভীক্ষা পদ্ধতি উদ্ভাবনের মাধ্যমে যৌথ বুদ্ধি অভীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। এদের একটি আর্মি আলফা’ এবং অপরটি ‘আর্মি বিটা’ অভীক্ষা নামে পরিচিত।

খ. বিশেষ প্রবণতা অভীক্ষা : কর্মচারী নির্বাচনের জন্য আর একটি গুরুত্বপূর্ণ অভীক্ষা হলো বিশেষ প্রবণতা অভীক্ষা। কোনো একজন ব্যক্তি কোনো এক বিশেষ কাজের জন্য উপযুক্ত তা বিশেষ প্রবণতা অভীক্ষার মাধ্যমে সহজে শনাক্ত করা যায়। কিন্তু সাম্প্রতিককালে শিল্পভিত্তিক সমাজে নানা রকমের এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ বৃত্তি বা পেশার উদ্ভব হয়েছে। যেকোনো ব্যক্তির পক্ষে সে যতই বুদ্ধিমান হোক না কেন সব রকম পেশায় দক্ষতা অর্জন করতে পারে না। এমন কতকগুলো পেশা রয়েছে। যেখানে বুদ্ধির মাত্রা উঁচু না হলেও বিশেষ বিশেষ প্রবণতার অধিকারী ব্যক্তিরা ঐসব বুদ্ধিতে দক্ষতা লাভ করতে পারে।

গ. ব্যক্তিত্ব অভীক্ষা : সঠিক কর্মে বা স্থানে উপযুক্ত লোক নিয়োগের জন্য ব্যক্তিত্ব অভীক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যক্তিত্ব অভীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থীর মানসিক কাঠামো, মেজাজ, আত্মবিশ্বাস, আত্মপ্রত্যয়, ভাবাবেগের ভারসাম্য, প্রেষণার কারণ ইত্যাদি পরিমাপ করা হয়। ব্যক্তির ব্যক্তি পরিমাপের উদ্দেশ্যে বহু অভীক্ষা প্রকাশ লাভ করেছে। এগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় অভীক্ষা হলো মিনোসোটা বহুমুখী ব্যক্তিত্ব অভীক্ষা গিলফোর্ড ও জিমারম্যান প্রবণতা জরিপ, গর্ডন ব্যক্তিত্ব অভীক্ষা এবং অভিক্ষেপণ পদ্ধতি।

ঘ. আগ্রহ অভীক্ষা : কর্মীর সাফল্য শুধু তার ঝোঁক বা প্রবণতার ওপরই নির্ভর করে না, বরং আগ্রহের ওপরও নির্ভর করে। এ কারণে কর্মী নিয়োগের আগে ঐ পেশায় ব্যক্তির আগ্রহ বা আকর্ষণ যাচাই করে নির্বাচন করা দরকার। প্রার্থীদের মধ্যে কোন ব্যক্তির কোন পেশায় কতটুকু আগ্রহ তা এ অভীক্ষার মাধ্যমে খুব সহজে শনাক্ত করা যায়।

ঙ. কৃতি অভীক্ষা : কোনো প্রার্থীর বর্তমান সামর্থ্য বা দক্ষতা পরিমাপ করার জন্য কৃতি অভীক্ষা ব্যবহৃত হয়। কর্মচারী নিয়োগ করার ক্ষেত্রে প্রার্থীদের বর্তমান সামর্থ্য জানা দরকার হয়। কারণ এটি জানতে পারলে পরবর্তীতে সে কাজে যোগদান করলে কতটুকু কাজ শিখতে পারবে সে ব্যাপারেও অনুমান করা যায়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, এই শ্রেণিবিভাগগুলি সামান্য নয় এবং একটি অভীক্ষা শ্রেণি অথবা অধিক উপ-শ্রেণিবিভাগের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। এই মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষা বিভাগগুলি সামাজিক ও ব্যক্তিগত সমস্যার সাথে সম্পর্কিত মৌলিক স্ববাদ প্রদান করে এবং মানসিক স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক নীতি, ও ব্যক্তিগত উন্নতি সাধারণ মানসিক প্রক্রিয়াগুলির বিভিন্ন দিকে দৃষ্টিপাত করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!