বাংলাদেশে শিল্পের পশ্চাৎপদতার কারণসমূহ চিহ্নিত কর ।

[ad_1]

✍️বাংলাদেশে শিল্পের পশ্চাৎপদতার কারণসমূহ চিহ্নিত কর ।

উত্তর ভূমিকা : আধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতার অন্যতম আশীর্বাদ হলো শিল্পোন্নয়ন । অষ্টাদশ শতাব্দীতে পাশ্চাত্য সমাজে এক বিপ্লবের মাধ্যমে শিল্পায়ন আত্মপ্রকাশ করে । পৃথিবীর আয়তনের তুলনায় ক্রমবর্ধমান মানুষের দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা পুরণের জন্য উৎপাদনের কৌশলগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শিল্পায়ন সমাজব্যবস্থার এক যুগান্তর অবদান রাখে । বিশ্বের অন্যান্য দেশে গতানুগতিক জীবনধারার বেড়াজাল ছিন্ন করে সুখি সমৃদ্ধি জীবন গড়ার লক্ষ্যে বিস্তৃতি ঘটলেও বাংলাদেশ শিল্পক্ষেত্রে অনুন্নতই রয়ে গেছে । শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল , প্রাকৃতিক সম্পদ ও পর্যাপ্ত জনশক্তি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ শিল্পক্ষেত্র পশ্চাৎপদ রয়েছে । বিভিন্ন আর্থসামাজিক কারণে এদেশের শিল্পায়নের পথে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা ।

বাংলাদেশে শিল্পায়নের পশ্চাৎপদতার কারণসমূহ : বাংলাদেশের অর্থনেতিক উন্নয়নের জন্য শিল্পায়নের গুরুত্ব অপরিসীম । বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ । এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষির পাশাপাশি শিল্পায়ন একান্তই অপরিহার্য । কিন্তু দুভার্গ্যজনকভাবে বাংলাদেশ শিল্প ক্ষেত্রে আশানুরূপ সাফল্য অর্জিত হয় নি । বাংলাদেশ অনগ্রসর থাকার পশ্চাতে নানাবিধ কারণ বিদ্যমান ।

বাংলাদেশের শিল্প অনগ্রসরতার কারণগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. ব্রিটিশ সরকারের ঔপনিবেশিক নীতি : বাংলাদেশের শিল্প অনগ্রসরতার অন্যতম প্রধান কারণ হলো ব্রিটিশ সরকারের ঔপনিবেশিক নীতি । ইংরেজরা প্রায় ২০০ বছর যাবৎ অবিভক্ত ভারতবর্ষে রাজত্ব করে । কিন্তু এ অঞ্চলে শিল্পকারখানা গড়ে তোলার ব্যাপারে তাদের কোন আগ্রহ ছিল না । তারা ভারতবর্ষকে নিজ দেশের শিল্পের কাঁচামালের উৎস হিসেবে এবং শিল্পজাত পণ্যের বাজার হিসেবেই ব্যবহার করে । ব্রিটিশ সরকারের এ ঔপনিবেশিক নীতি বাংলাদেশের শিল্প অনগ্রসরতার জন্য অনেকাংশ দায়ী ছিল ।

২. পাকিস্তানি শোষণ : পাকিস্তান সরকারের অর্থনীতিতে বৈষম্যমূলক আচরণের কারণেও বাংলাদেশে শিল্পের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয় নি । পাকিস্তানি আমলের ২৪ বছরে তদানীন্তন শাসকগোষ্ঠী ইংরেজদের মতোই এ অঞ্চলকে শোষণ করে । তারা এদেশের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগই সাবেক । পাকিস্তানে শিল্প স্থাপনে ব্যয় করে ব্রিটিশদের ন্যায় পাকিস্তান সরকারও বাংলাদেশকে কাঁচামাল সরবরাহকারী এবং শিল্পপণ্য বিক্রয়ের বাজারে পরিণত করে ।

৩. মূলধনের অভাব : মূলধনের অভাব আমাদের দেশে শিল্পের অনগ্রসরতার একটি প্রধান কারণ । দারিদ্র্যের অভিশাপে জনসাধারণের সঞ্চয় অত্যন্ত কম বলে শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ করা আমাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে । পুঁজির অভাবে আমাদের শিল্পোন্নয়নের গতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে ।

৪. দক্ষ শ্রমিকের অভাব : বাংলাদেশে কর্মক্ষম লোকসংখ্যা অনেক বেশি হলেও তাদের অধিকাংশই অশিক্ষিত , অদক্ষ ও অযোগ্য শ্রমিক । ফলে শ্রমকুশলতার অভাবে শিল্পায়নের বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে ।

৫. খনিজ সম্পদের অভাব : দেশের দ্রুত শিল্পায়নের জন্য খনিজ সম্পদ একান্ত প্রয়োজন । কিন্তু বাংলাদেশ খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ নয় । লোহা , কয়লা প্রভৃতি খনিজ সম্পদ শিল্পোয়নের জন্য অপরিহার্য । কিন্তু আমাদের দেশে এগুলোর কোনটিই নেই । এতে আমাদের শিল্পোয়নের বিঘ্নিত হচ্ছে ।

৬. শিল্প ঋণের অভাব : সহজ শর্তে পর্যাপ্ত ঋণের যোগান শিল্পায়নের জন্য অপরিহার্য । কিন্তু আমাদের দেশে এগুলোর কোনটিই নেই । এতে আমাদের শিল্পান্নয়ন বিঘ্নিত হচ্ছে ।

৭. কাঁচামালের অভাব : বাংলাদেশের কতিপয় কাঁচামালের চাহিদা বিদেশের বাজারে যথেষ্ট সুনাম আছে স্বাধীনতার পরেও শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে এসব কাঁমামাল ব্যবহারের চেষ্টা না করে সেগুলোকে আগের মতোই বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে ।

৮. শক্তি সম্পদের অভাব : কারখানা পরিচালনার জন্য শক্তি সম্পদের বিশেষ প্রয়োজন । কিন্তু বাংলাদেশে শক্তি সম্পদের যথেষ্ট অভাব রয়েছে । বাংলাদেশে যে পরিমাণ কয়লা ও তেল পাওয়া যায় তা আমাদের প্রয়োজনের পক্ষে যথেষ্ট নয় । তাই শক্তি সম্পদের অভাব বাংলাদেশের শিল্পে অনগ্রসরতার অন্যতম কারণ ।

৯. সরকারি নিয়ন্ত্রণ : স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সকল বৃহদায়তন শিল্প প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ করা হয় । পরবর্তীকালে শিল্পখাতের বেসরকারিকরণ কার্যক্রম শুরু হলেও এদেশের শিল্প স্থাপন বিভিন্ন সরকারি নিয়মকানুনের বেড়াজালে আবদ্ধ । এটি আমাদের শিল্পখাতের স্থবিরতার একটি প্রধান কারণ ।

১০. যন্ত্রপাতির অভাব : ভারি শিল্পের অভাব দেশে শিল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি একান্ত অভাব রয়েছে । যন্ত্রপাতির অভাবে আমাদের শিল্পায়ন ব্যাহত হচ্ছে ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে , উপর্যুক্ত বিষয়গুলোই বাংলাদেশের শিল্পের পশ্চাৎপদতার কারণ ।

[ad_2]