বাংলাদেশের সমাজে অধিক মৃত্যুর কারণ কী?

অথবা, বাংলাদেশে অধিক মৃত্যুর কারণ কী?
অথবা, কী কারণে বাংলাদেশে মৃত্যুর হার বেড়েই চলছে।
অথবা, বাংলাদেশের সমাজে কেন অধিক মৃত্যু হয়?
উত্তর৷ ভূমিকা :
মৃত্যু সংখ্যা জনবিজ্ঞানের একটি মৌলিক প্রত্যয় এবং জনতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া। মৃত্যু সংখ্যা বলতে কোনো জনসমষ্টিতে মৃত্যুর সংখ্যা বা হারকে বুঝায়। বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। মৃত্যু সংখ্যা হ্রাসের জন্য আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশের সমাজে মৃত্যু সংখ্যার কারণ : বাংলাদেশের সমাজে মৃত্যু সংখ্যার কারণ নিম্নে উপস্থাপন করা হলো :
ক. অপুষ্টি : বাংলাদেশের সমাজের অপুষ্টিজনিত কারণে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। দরিদ্র পরিবারে সাধারণত দেখা যায় অল্প বয়সে অনেকেই বার্ধক্যের ছাপ পড়ে এবং অপুষ্টিতে ভুগে অনেকে মৃত্যুবরণ করে।
খ. উপযুক্ত চিকিৎসার অভাব : বাংলাদেশের সমাজে রোগীর তুলনায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তার এবং উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জামের খুবই অভাব। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় এ সমস্যা আরো প্রকট। ফলে রোগব্যাধি হলে সময়মতো উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে অনেকে মারা যায়।
গ. স্বাস্থ্যকর পরিবেশের অভাব : বাংলাদেশে স্বাস্থ্যকর পরিবেশের অভাব বেশ প্রকট। ময়লা আবর্জনা যত্রতত্র ফেলা হয়। পয়ঃপ্রণালির ভালো ব্যবস্থা নেই। প্রয়োজন অনুযায়ী টয়লেট ব্যবস্থা নেই। ফলে পথেঘাটে রাস্তার সর্বত্রই মলমূত্র লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল। খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণেরও তেমন ব্যবস্থা নেই। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের ফলে নানা প্রাণঘাতি রোগ-ব্যাধি দ্বারা অনেকেই আক্রান্ত হয় এবং মারা যায়।
ঘ. স্বাস্থ্য-বিধি সম্পর্কে অজ্ঞানতা : আমাদের দেশের অধিকাংশ লোকই স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অজ্ঞ। পরিমিত ও প্রয়োজনমতো আহার, স্বাস্থ্য পালন, রোগের সময়োচিত চিকিৎসা ইত্যাদি সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞানের অভাব মৃত্যুহারকে বাড়িয়ে দেয়। রোগব্যাধি হলে অনেকেই চিকিৎসার জন্য তেমন তৎপর হয় না। ফলে সংক্রামক রোগগুলো ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া অনেকেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে অনীহা দেখায়। এসব দেশে রোগের প্রতিরোধ সম্পর্কে তথা স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে উপযুক্ত শিক্ষারও বেশ অভাব।
ঙ. সমাজকল্যাণমূলক ব্যবস্থার অভাব : উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশে সমাজকল্যাণমূলক ব্যবস্থা যেমন- বীমা, বার্ধক্যকালীন সেবাযত্ন বা বার্ধক্য ভাতার ব্যবস্থা নেই। এটাও অধিক মৃত্যুর একটি কারণ।
চ. যানবাহন দুর্ঘটনা : বাংলাদেশে যানবাহনের দুর্ঘটনা এত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে যে তা খুবই আশঙ্কাজনক। ট্রাফিক আইন অমান্য, প্রশস্ত রাস্তার অভাব, বেপরোয়া গাড়ি চালানো, উপযুক্ত ট্রেনিং না নিয়ে গাড়ি চালানো, বাস এবং লঞ্চে অধিক যাত্রী বা মাল বহন ইত্যাদি কারণে নানা যানবাহনের দুর্ঘটনা লেগেই আছে। ফলে তা মৃত্যুহারের উপর প্রভাব রাখছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, অধিক মৃত্যুর সংখ্যা জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে প্রভাব বিস্তার করে। এছাড়াও এটি অর্থনীতির উপর চাপ সৃষ্টি করে। তাই আমাদের মৃত্যু সংখ্যা কমানোর যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।