বঙ্গীয় গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন আইন, ১৯১৯ এর প্রকৃতি উল্লেখ কর।

অথবা, বাংলাদেশে গ্রামীণ স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠায় ১৯১৯ সালের বঙ্গীয় গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন আইনের গুরুত্ব লিখ।
অথবা, বঙ্গীয় গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন আইন, ১৯১৯ এর প্রকৃতি লিখ।
অথবা, বঙ্গীয় গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন আইন,১৯১৯ এর প্রকৃতির বর্ণনা দাও।
অথবা, বঙ্গীয় গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন আইন, ১৯১৯ এর প্রকৃতি ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বঙ্গীয় গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন আইন, ১৯১৯ এর প্রকৃতি সম্পর্কে যা জান লিখ।
ভূমিকা :
ব্রিটিশগণ এদেশের শাসন ক্ষমতা করায়ত্তের পর হতে উপমহাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। স্থানীয় শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিভিন্নমুখী পরিবর্তন সাধিত হয়। স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং এর সুফল জনগণের দোর গোড়ায় পৌছে দিতে ইংরেজ সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করে এবং এসব সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে নানা আইন প্রণয়ন করে।

১৯১৯ সালের বঙ্গীয় গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন আইনের প্রকৃতি : বঙ্গীয় গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন আইন ১৯১৯ স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী ব্যবস্থা। পরবর্তীকালে অন্যান্য প্রদেশেও বাংলাকে অনুসরণ করে অনুরূপ আইন পাস করা হয়। এই আইন অনুযায়ী স্থানীয় সরকারের তিনটি স্তরের পরিবর্তে দুটি স্তর করা হয়। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয় এবং নির্বাচিত রীতি প্রবর্তন করা হয়। প্রত্যেকটি জেলার জন্য জেলা বোর্ড, শহরাঞ্চলের জন্য মিউনিসিপ্যালিটি ও গ্রামাঞ্চলের জন্য ৯ সদস্যের ইউনিয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ইউনিয়ন গঠন করা হতো ১০ থেকে ১১টি গ্রাম নিয়ে। বোর্ডের ২/৩ অংশ সদস্য জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলেও তা মোটেই গণতান্ত্রিক ছিল না। কারণ গোপন ভোটের ব্যবস্থা না থাকায় ভোটারদের স্বাধীনতা ছিল না। তদুপরি কর দানকারী পুরুষরাই ভোটার হতেন। নারীর কোন ভোটাধিকার ছিল না। বোর্ডের সদস্যরা নিজেদের মধ্য থেকে একজন সভাপতি নিয়োগ করতেন। ইউনিয়ন বোর্ডের কর্তব্য ছিল, দু ধরনের। ১. বাধ্যতামূলক ও ২. ঐচ্ছিক। কর আদায় করা ও চৌকিদারের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করা ছিল বাধ্যতামূলক কাজ। গ্রামাঞ্চলের জনগণের কল্যাণসাধনের জন্য কাজ করা ছিল ঐচ্ছিক কাজের অন্তর্ভুক্ত। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তাঘাট মেরামত, পানি সরবরাহ, পাঠাগার স্থাপন ও এসবের রক্ষণাবেক্ষণ এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের বিচারকার্য করা ইউনিয়ন বোর্ডের একটি বিশেষ কাজ ছিল।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ১৯১৯ সালের বঙ্গীয় গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন আইনে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের সম্প্রসারণের কথা বলা হয়েছে। এই আইনে ও সকল পর্যায়ে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ছিল যথেষ্ট।