প্রেষণা ও মনোবলের মধ্যে সম্পর্ক

ভূমিকা: মানুষের চাওয়াার শেষ নেই। একজন মানুষ হয়ত এমহূর্তে একমুঠো খাবার চাইছে কিংবা একুটু আশ্রয়। আরেকজন হয়ত চাইছে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করতে; আবার আরেকজন হয়ত করছে প্রিয় মিলনের আশা। মানুষ সারা জীবন ধরে বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছে। তাদের এই বিচিত্র কর্ম প্রবাহের মূলে রয়েছে কোন না কোন প্রেষণা। কোন কোন প্রেষণা ক্ষণকালের জন্য মানুষকে সক্রিয় ও সচেষ্ট করে তোলে, আবার কোন কোন প্রেষণা দীর্ঘদিন, এমনকি সারা জীবন ধরে মানুষকে কর্ম প্রেরণা যোগায়। মানব জীবনে তাই প্রেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, এ অধ্যায়ে প্রেষণা, প্রেষণা চক্র ও প্রেষণার বৈশিষ্ট্য, প্রেষণার প্রকারভেদ এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রেষণার গুরুত্ব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।ভূমিকা মানুষের চাওয়াার শেষ নেই। একজন মানুষ হয়ত এমহূর্তে একমুঠো খাবার চাইছে কিংবা একুটু আশ্রয়। আরেকজন হয়ত চাইছে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করতে; আবার আরেকজন হয়ত করছে প্রিয় মিলনের আশা। মানুষ সারা জীবন ধরে বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছে। তাদের এই বিচিত্র কর্ম প্রবাহের মূলে রয়েছে কোন না কোন প্রেষণা। কোন কোন প্রেষণা ক্ষণকালের জন্য মানুষকে সক্রিয় ও সচেষ্ট করে তোলে, আবার কোন কোন প্রেষণা দীর্ঘদিন, এমনকি সারা জীবন ধরে মানুষকে কর্ম প্রেরণা যোগায়। মানব জীবনে তাই প্রেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, এ অধ্যায়ে প্রেষণা, প্রেষণা চক্র ও প্রেষণার বৈশিষ্ট্য, প্রেষণার প্রকারভেদ এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রেষণার গুরুত্ব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।

প্রেষণা : গ্রিক বা ল্যাটিন শব্ধ গড়াবৎং যার দ্বারা জীবের সক্রিয়তা বা নড়াচড়াকে বোঝানো হয়। অন্যদিকে গ্রিক গড়াবৎং-এর আধুনিক ইংরেজি রূপ গড়ঃরাব-কে ধরা যায়। যার অর্থ নড়ন, চলন বা সক্রিয়তা। গড়ঃরাব শব্দটির সাথে চড়বিৎ যোগ করে আমরা গড়ঃরাব চড়বিৎ বলতে পারি যা পূর্ণাঙ্গরূপে গড়ঃরাধঃরড়হ-এর
অনুরূপ। ইংরেজি গড়ঃরাধঃরড়হ একটি নামবাচক শব্দ যার অর্থ হল আলোড়ন, তাড়না, নোদনা, সক্রিয়তা বা বল বৃদ্ধিকারক কার্যক্ষমতা ইত্যাদি। মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গড়ঃরাধঃরড়হ শব্দটিকে প্রণোদনা, তাড়না, নোদনা, প্রেষণা রূপে গ্রহণ করা হয়েছে। মনোবিজ্ঞানে প্রেষণা শব্দটিকে অত্যন্ত ব্যাপক অর্থে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। প্রেষণা এমন একটি অবস্থাকে বুঝায় যা মানুষকে কোন আচরণ করতে উদ্বুদ্ধ করে থাকে বা তাকে ঐ আচরণের দিকে চালিত করে। আমাদের চাহিদা বা অভাববোধ থেকে মনের ভেতরে বা বাহিরে চাপ সৃষ্টি হয় এবং তার ফলে কোন লক্ষ্য অর্জনের জন্য মনে যে তাড়না, নোদনা বা উদ্যম সৃষ্টি হয় তাকেই প্রেষণা বলা হয়।

প্রেষণা ও মনোবলের মধ্যে সম্পর্ক: প্রতিষ্ঠান ও কাজের প্রতি ব্যক্তি বা দলের দীর্ঘদিনের গড়ে ওঠা মানসিক অবস্থা, আত্মবিশ্বাস বা উদ্দীপনাকে মনোবল বলে। প্রেষণা কর্মীদের উচ্চ মনোবল গঠনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। কর্মীর অভাব বোধকে বুঝে সে অনুযায়ী উপযুক্ত প্রেষণা দানের মাধ্যমে কাজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা হয়। এতে কর্মীরা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হয় যা তাদের উচ্চ কার্য সন্তুষ্টি সৃষ্টি করে। এরূপ উচ্চ কার্য সন্তুষ্টি কর্মীর উচ্চ মনোবল গঠনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে থাকে। আর উচ্চ মনোবল কর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক যা প্রতিষ্ঠনের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করে।

কর্মীদের কাজে উৎসাহিত করার প্রক্রিয়াকে প্রেষণা বলে। অন্যদিকে মনোবল হল মানুষের অভ্যন্তরীণ মানসিক অবস্থা। প্রেষণার মাধ্যমে উৎসাহিত করা হলে কাজের প্রতি কর্মীদের উৎসাহ বাড়ে ফলে ধীরে ধীরে তাদের মনোবল বৃদ্ধি পায়। উত্তম প্রেষণা যেমনি উন্নত কার্যসন্তুষ্টি ও উচ্চ মনোবল সৃষ্টি করে তেমনি প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের উপযুক্ত প্রেষণা দিতে না পারার কারণে কার্যসন্তুষ্টি হ্রাস পায় ও মনোবল নিম্নমুখী হয়। তাই বলা যায়, প্রেষণা ও মনোবলের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। প্রেষণা ছাড়া যেমনি উন্নত কার্যসন্তুষ্টি আসে না তেমনি কার্যসন্তুষ্টি না থাকলে মনোবলও উন্নত হতে পারে না।