প্রশ্নের উত্তর

প্রাগৈতিহাসিক’ গল্প সম্পর্কে তোমার মতামত দাও ।

উত্তর : ভিখুর পেশা ডাকাতি । সে দুর্ধর্ষ ডাকাত সর্দার। পৃথিবীতে এমন কোন অপকর্ম নেই যা সে করে না। মানুষের সর্বস্ব লুঠ করা, স্ত্রীর সামনে স্বামীকে, মায়ের সামনে পুত্রকে খুন করা, পরের মেয়ে অপহরণ, বন্ধুর স্ত্রীকে ফুসলিয়ে পালিয়ে যাওয়া, বন্ধুর ঘরে আগুন দেয়া প্রভৃতি অপকর্মে তার হাত পাকা। একবার বসন্তপুরের বৈকুণ্ঠ সাহার গদিতে ডাকাতি করতে গিয়ে ভিখু একটা করে বসে। দলের সবাই ধরা পড়লেও কাঁধে একটা বর্শার খোঁচা খেয়ে ভিখু একা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। অনেক কষ্টে আহত ভিন্ন চিতলপুর গিয়ে তার পুরনো বন্ধু পেহ্লাদের কাছে আশ্রয় চায়। পেহ্লাদ তাকে বাড়িতে রাখতে সাহস না পেয়ে বনের গভীরে মাঁচা বেঁধে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। সেখানে অনাদরে অবহেলায় বিনা চিকিৎসায় ভিখু মুমূর্ষু হয়ে পড়ে। সংকটাবস্থা দেখে পেহ্লাদ ভিখুকে বাড়িতে নিয়ে আসে। এখানে অপেক্ষাকৃত একটু বেশি আরামে থাকতে পেরে সে দ্রুত আরোগ্য লাভ করতে থাকে। একটু সুস্থ হয়েই ভিখু হাত বাড়ায় পেহ্লাদের স্ত্রীর দিকে। পেহ্লাদ জানতে পেরে তাকে বেদম মারপিট করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। প্রহৃত ও অপমানিত ভিখু রাতের বেলায় পেহ্লাদের ঘরে আগুন দিয়ে ঘাট থেকে নৌকা চুরি করে শহরের দিকে পালিয়ে যায়। পরদিন সে বাজারের পথে দাঁড়িয়ে ভিক্ষার জন্য হাত বাড়ায়। ভিখু এখন রাজপথের ভিক্ষুক। মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা আদায়ের কলাকৌশল সে রপ্ত করে ফেলেছে। তার আয় রোজগার কম নয়। ভিখু বিন্নু মাঝির একটা চালা মাসিক আট আনায় ভাড়া নিয়ে নারীসঙ্গহীন জীবন কাটায়। কিন্তু নারীসঙ্গহীন এ জীবন তার ভালো লাগে না। অবসর সময়ে সে নদীর পাড়ে গিয়ে স্নানরতা মেয়েদের দেখে তৃষ্ণা মেটায়। রাতের বেলা একাকী বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করে। এরপর একজন কম বয়সী ভিখারিণীর দিকে ভিখুর নজর পড়ে। তার সাথে ভাব জমাবার চেষ্টা চালায়। আস্ত একটা পাকা কলা উপহার দিয়ে ভিখু তার নাম জেনে নেয়। ভিখারিণীর নাম পাঁচী। পাঁচী থাকে বসির নামের আর এক ভিক্ষুকের সাথে। তাই ভিখুর সাথে থাকার প্রস্তাব সে সরাসরি নাকচ করে দেয়। ভিখুর জেদ চেপে যায়। বসিরের সাথে আলাপ জমাতে গিয়ে জীবন নাশের হুমকি খেয়ে ভিখু চরম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। নদীর পাড়ে কুড়িয়ে পাওয়া একটা লোহার শিককে ঘষে ঘষে মারণাস্ত্রে পরিণত করেছিল ভিখু। একদিন অন্ধকার রাতে এই অস্ত্র নিয়ে সে বসিরের ঘরে গিয়ে হামলা চালায়। ঘুমন্ত বসির এক আঘাতেই পটল তোলে। সংঘর্ষের শব্দে পাঁচীর ঘুম ভেঙে যায়। হত্যাকাণ্ড সুসম্পন্ন হওয়ার পর ভিখু পাঁচীকে তার সাথে পালিয়ে যাওয়ার আদেশ দিলে সে সামান্য ইতস্তত করতেই গর্জন করে উঠে ভিখু। ভীতসন্ত্রস্ত পাঁচী গাট্টি বোঁচকা গুছিয়ে নিয়ে ভিখুর সাথে বাইরে বেরিয়ে আসে। তারা নতুন জীবন গড়ে তোলার জন্য অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়।

হ্যান্ডনোট থেকে সংগ্রহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!