প্রশ্নঃ সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের ভূমিকা আলোচনা কর ।

[ad_1]

প্রশ্নঃ সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের ভূমিকা আলোচনা কর ।

উত্তর ৷ ভূমিকা : এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে । পাকিস্তানি শোষণের হাত থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন ও শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে এদেশের কৃষক – শ্রমিক তথা সমস্ত মেহনতি মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিল । এদেশের মানুষের আশা – আকাঙ্ক্ষার প্রতি লক্ষ্য রেখে স্বাধীনতার পর সরকার দেশে সমাজতান্ত্রিক ধাঁচে সমাজ গঠনের কথা ঘোষণা করে । সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা আজ আমাদের জাতীয় লক্ষ্য ।

সুতরাং আমাদেরকে শুধু জাতীয় আয় বৃদ্ধি করলেই চলবে না , সম্পদের সুষ্ঠু ও সুষম বণ্টনের মাধ্যমে যাতে আমরা সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্থির লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি তার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে । সাধারণত মোট জাতীয় উৎপাদনকেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক বলে গণ্য করা যায় । অধিকাংশ অর্থনীতিবিদগণই মনে করেন যে , মোট জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেই দারিদ্র্য দূর হবে । এ কারণে ধনতান্ত্রিক দেশগুলোতে বণ্টনের দিকটিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে কেবলমাত্র উৎপাদন বৃদ্ধির উপরই গুরুত্বারোপ করা যায় । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কেবল উৎপাদন বৃদ্ধির দ্বারা দেশব্যাপী দারিদ্র্যের বোঝা লাঘব করা যায় না ।

অধ্যাপক ডাডলে সীয়ার্সের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা থেকে দেখা যায় যে , অনুন্নত দেশগুলোতে বিগত ১০ বছরে বার্ষিক ৫ শতাংশ হারে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও দেশের দরিদ্র সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে । আমাদের দেশও বিগত কয়েক বছরে জাতীয় আয় বৃদ্ধি পেলেও দেশের দরিদ্র জনসাধারণের মাথাপিছু আয় বাড়ে নি । আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের অধিক এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে । অনুন্নত দেশের উপর্যুক্ত অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে সুইডিস অর্থনীতিবিদ সিরডাল এবং পাকিস্তানি অর্থনীতিবিদ মাহবুবুল হক এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে , অনুন্নত দেশে জাতীয় আয় বৃদ্ধি পেলেই দারিদ্র্য দূর হবে না । হকের মতে , জাতীয় আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে এর সুষ্ঠু বণ্টনের উপরও গুরুত্বারোপ করতে হবে ।

অনুন্নত দেশ অধিক উৎপাদন ও উন্নত বণ্টন উভয়ই সমান প্রয়োজন । বাংলাদেশ সরকার দেশে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ । সুতরাং সম্পদের সুষ্ঠু ও সুষম বণ্টনের মাধ্যমে দেশে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোর প্রণেতাদেরকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে ।

১. উন্নয়ন পরিকল্পনায় অধিক উৎপাদক ও উন্নততর বণ্টন উভয়ের প্রতিই সমান গুরুত্বারোপ করতে হবে ।

২. উৎপাদন পরিকল্পনার তুলনায় ভোগ পরিকল্পনাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয় । বস্তুত আমাদের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন কর্মসূচিসমূহে উন্নয়ন পরিকল্পনা ও ভোগ পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয়সাধন করতে হবে ।

৩. ভোগ পরিকল্পনা টাকার মাধ্যমে না করে দ্রব্যের মাধ্যমে করতে হবে ।

৪. উন্নয়ন পরিকল্পনার কর্মসংস্থান বৃদ্ধির উপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে ।

৫. যারা এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে আছে , তাদেরকে রাষ্ট্র প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্যদান করে সর্বনিম্ন কাম্য পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে ।

৬. অধিক পরিমাণ সমাজকল্যাণমূলক কার্যাদির দ্বারা দেশের পশ্চাৎপদ অঞ্চলগুলোর উন্নতি করতে হবে ।

উপসংহার : সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করে আমাদের মোট জাতীয় আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব ।

[ad_2]