প্রশ্নঃ সরকার ঋণ গ্রহণ করে কেন ? অথবা , সরকারি ঋণের উদ্দেশ্যসমূহ আলোচনা কর ।

[ad_1]

প্রশ্নঃ সরকার ঋণ গ্রহণ করে কেন ? অথবা , সরকারি ঋণের উদ্দেশ্যসমূহ আলোচনা কর ।

উত্তর- ভূমিকা : বর্তমান তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ অর্থনৈতিক বিশ্বে অর্থের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য । অর্থের কার্যাবলির কথা বলে শেষ করা বৃথা , কারণ সর্বক্ষেত্রে অর্থের প্রয়োজন । আর অর্থের স্বল্পতার কারণে সেটাকে জোগাড় করতে হয় নানা মাধ্যম বা উৎস হতে । এ উৎসগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ঋণ।

সরকারের ঋণ গ্রহণের কারণসমূহ : নিম্নে সরকারের ঋণ গ্রহণের কারণ বা উদ্দেশ্যসমূহ আলোচনা করা হলো :

১. ঘাটতি বাজেটে অর্থ সরবরাহ : বাংলাদেশের মতো এরূপ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রায়ই বাজেটে ব্যয়ের তুলনায় আয় কম হয়ে থাকে , তাই এরূপ ঘাটতি মোকাবিলা করার জন্য অনেক সময় সরকারকে অর্থসংগ্রহের জন্য ঋণের শরণাগত হতে হয় ।

২. দেশের বিনিয়োগ ও সঞ্চয় বৃদ্ধি : সরকার নানা ধরনের সঞ্চয়পত্র যেমন- প্রাইজবন্ড , প্রতিরক্ষা সঞ্চয়পত্র , বোনাস সঞ্চয়পত্র , ওয়েজ আর্নার বন্ড , ট্রেজারি বিল ইত্যাদি জনগণের মধ্যে বিক্রি করে । এসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে জনগণের সঞ্চয় প্রবণতা এবং বিনিয়োগ প্রবণতা বেড়ে যায় , যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের সরকারকে ঋণ গ্রহণ করতে উৎসাহিত করে ।

৩. জরুরি অবস্থা মোকাবিলা : অনেক সময় প্রয়োজনের মুহূর্তে যখন অর্থের দরকার হয় তখন চিরাচরিত উৎস হতে অর্থসংগ্রহ করা সম্ভব হয়ে উঠে না । বিশেষ করে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহ যেমন- জলোচ্ছ্বাস , ভূমিকম্প , বন্যা , দুর্ভিক্ষ , মহামারির মতো অস্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে , এমন মুহূর্তে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে অর্থসংগ্রহ অনেক জটিল হয়ে দাঁড়ায় । তাই এ সময়ে সরকারকে বাধ্য হয়েও ঋণ গ্রহণ করতে হয় ।

৪. মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে : মুদ্রাস্ফীতি যখন প্রকট তখন সরকারি উন্নয়ন ব্যাহত হয় । সরকার ঋণ গ্রহণ করে জনগণের হাতে নগদ অর্থ তুলে দিতে পারে । এতে জনগণের চাহিদা কমবে , দাম কমবে ।

৫. মন্দা থেকে পরিত্রাণ : অর্থনীতিতে মন্দা এমন একটি ভয়াবহ অবস্থা যখন দামস্তর , আয় , উৎপাদন , নিয়োগ ইত্যাদি সবকিছু কমে যায় এবং এর প্রভাবে মানুষের জীবনযাত্রার মানও কমে যায় । সরকারের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে কর । কিন্তু মন্দার সময়ে জনগণের উপর করারোপ অসম্ভব । তাই সরকার মন্দা থেকে পরিত্রাণের জন্য কর মাপ করে প্রয়োজনীয় অর্থ অন্য উৎস হতে সংগ্রহ করে ঋণের মাধ্যমে ।

৬. অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা : বাংলাদেশের মতো এরূপ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আয় , নিয়োগ , উৎপাদন এবং দামস্তরের উত্থানপতন খুবই বেশি । এরূপ উত্থানপতনের সময়ে দেশে ব্যাপক হারে বেকারত্ব এবং অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টি হয় । তাই সরকার এর সমাধান হিসেবে ঋণের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ বিনিয়োগ করে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার পাশাপাশি দেশের বেকার সমস্যা দূর করতে সক্ষম হয়ে থাকে ।

৭. উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ঋণ গ্রহণ : অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে সরকারের মালিকানাধীন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রয়োজনীয় কাঁচামাল , যন্ত্রপাতি এবং জনবলের অভাবে তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করতে । তাই অনেক সময় এ প্রতিষ্ঠানগুলোর জনবল , কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির চাহিদা মিটানোর জন্য যে কোন উৎস থেকে সরকার ঋণ গ্রহণ করে থাকে যা উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে ।

৮. শিক্ষা ও স্বাস্থ্য উন্নয়নে : বাংলাদেশের মতো এমন উন্নয়নশীল দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক অবস্থার পাশাপাশি স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার অবস্থাও নাজেহাল । কিন্তু এদের স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার ব্যবস্থা করার জন্য প্রয়োজন বিপুল অর্থের । তাই এ অর্থসংগ্রহ করার জন্য সরকারকে বাধ্য হয়ে ঋণ নিতে হয় ।

৯. সরকারি সংস্থার ব্যয় মেটান : প্রত্যেক সরকারের অন্যতম প্রধান হাতিয়ারগুলোর একটি হলো তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানসমূহ । এ প্রতিষ্ঠানসমূহকে পরিচালনা করার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়ে থাকে । তাই এ সকল প্রতিষ্ঠানসমূহকে চালানোর জন্য সরকার প্রয়োজনীয় সকল উৎস হতে ঋণ গ্রহণের চেষ্টা করে থাকে ।

১০. দেশের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখা : প্রতিটি স্বাধীন দেশই চাই তার স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বকে টিকিয়ে রাখতে । এ স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য অনেক দেশকে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয় । কিন্তু যুদ্ধ পরিচালনা অনেক ব্যয়বহুল । এটিকে মেটাতে অনেক দেশই বাইরে থেকে ঋণ নিয়ে থাকে ।

১১. কল্যাণ সর্বোচ্চকরণ : প্রতিটি দেশের জনগণের অধিকার আছে , সেদেশের সরকারের নিকট হতে প্রয়োজনীয় সেবা পাবার । দেশটি যদি দারিদ্র্যপীড়িত হয় তাহলে জনগণের কল্যাণ বা সেবা করা অনেকাংশে দেশের পক্ষে সম্ভব হয় না । তাই দেশের সামগ্রিক কল্যাণ সর্বোচ্চ করতে সরকারকে ঋণ নিতে হয় ।

উপসংহার : উপর্যুক্ত কারণগুলো থেকে বলা যায় , সরকারের প্রয়োজনীয় চাহিদা , জনগণের চাহিদা প্রভৃতি মিটানো সরকারি ঋণের উদ্দেশ্য ।

[ad_2]