প্রশ্নঃ বাংলাদেশে সঞ্চয়ের নির্ধারকসমূহ কী কী ?

[ad_1]

প্রশ্নঃ বাংলাদেশে সঞ্চয়ের নির্ধারকসমূহ কী কী ?

উত্তরঃ ভূমিকা : সঞ্চয় বা সঞ্চয়প্রবণতা সাধারণত আয়ের উপর নির্ভর করে । তবে আয় ছাড়াও ব্যক্তিগত , পারিবারিক , সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক অনেক উপাদান সঞ্চয়কে প্রভাবিত করে । সঞ্চয়ের নির্ধারকসমূহ : বাংলাদেশে সঞ্চয়ের উপর প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানগুলো নিম্নরূপ :

১. স্বল্প আয় : আয় থেকে ভোগ ব্যয় বাদ দিলে সঞ্চয় পাওয়া যায় । কাজেই আয় হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা সঞ্চয়কে প্রভাবিত করে । আয় বেশি হলে সঞ্চয় বেশি হবে আবার আয় কম হলে সঞ্চয়ও কম হবে এটাই সাধারণ নিয়ম । বাংলাদেশের মানুষের আয় কম বলে তাদের সঞ্চয়ও কম ।

২. সমগ্রবণতা বা সঞ্চয়ের ইচ্ছা : অভাব মানুষের সঞ্চয়প্রবণতা তথা সঞ্চয়ের ইচ্ছা সঞ্চয়কে প্রভাবিত করে । সঞ্চয়ের ইচ্ছা কম হলে আয় বেশি হলেও সঞ্চয় কম হয় । পক্ষান্তরে , সঞ্চয়ের ইচ্ছা প্রবল হলে আয় কম হলেও সঞ্চয় বেশি হয় । Target saver এর বেলায় সঞ্চয় বেশি হয় আবার Residue saver এর বেলায় সঞ্চয় কম হয় । বাংলাদেশের মানুষের সঞ্চয়ের ইচ্ছা কম বলে সঞ্চয়ও কম ।

৩. সাল বৃদ্ধি : দাম স্তর সঞ্চয়কে প্রভাবিত করে । দাম স্তর বেশি হলে আয়ের সিংহভাগ দৈনন্দিন ব্যয় মিটাতে ব্যয় হয় । এ অবস্থায় সঞ্চয় কম হয় । পক্ষান্তরে , দাম স্তর কম হলে জীবনধারণের ব্যয় কমে এবং সঞ্চয় বৃদ্ধি পায় ।

৪. সুদের হার হ্রাসবৃদ্ধি : সুদের হার প্রত্যক্ষভাবে মানুষের সঞ্চয়কে প্রভাবিত করে । সুদের হার বেশি হলে / বাড়লে অধিক আয়ের আশায় মানুষ বেশি করে সঞ্চয় করে । আবার সুদের হার কম হলে / কমলে মানুষ সঞ্চয়ের পরিমাণ কমিয়ে দেয় । আমাদের দেশে মুদ্রা বাজার ও মূলধনী বাজার অসংগঠিত বলে সুদের হারও বাড়ে বা কমে ।

৫. প্রত্যাশা : ভবিষ্যতে আয় বাড়তে পারে এমন প্রত্যাশা থাকলে বর্তমানে সঞ্চয় কম হয় আবার ভবিষ্যতে আয় প্রাপ্তি কমে যেতে পারে এমন প্রত্যাশা থাকলে বর্তমানে সঞ্চয় বাড়ে । কাজেই প্রত্যাশা মানুষের সঞ্চয়কে প্রভাবিত করে । বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা খুব পরিবর্তনশীল ।

৬. অভ্যাস ও রুটি : উন্নত ভোগ , অভ্যাস ও রুচিবোধ মানুষের সঞ্চয়কে প্রভাবিত করে কারণ উন্নত ভোগ অভ্যাস ও রুচি থাকলে ভোগ , ব্যয় বেশি হয় এবং সঞ্চয় কম হয় । পক্ষান্তরে , অনুন্নত রুচিবোধ থাকলে কিংবা উন্নত ভোগের সাথে মানুষের পরিচয় না থাকলে ভোগ কম হয় এবং সঞ্চয় বেশি হয় ।

৭. রাজস্বনীতি / কর হার : দেশের রাজস্বনীতি সামগ্রিক সঞ্চয় হারকে প্রভাবিত করে । রাজস্বনীতির প্রধান হাতিয়ার হলো কর হার । কর হার বাড়লে মানুষের ব্যয়যোগ্য আয় কমে সঞ্চয়ও কমে । আবার কর হার সঞ্চয়ও বাড়ে । র কমলে ব্যয়যোগ্য আয় বাড়ে :

৮. সামাজিক নিরাপত্তা: সরকার কর্তৃক প্রদত্ত শিক্ষাভাতা , বেকারভাতা , বয়স্কভাতা ইত্যাদি সামাজিক নিরাপত্তা থাকলে মানুষের সঞ্চয়প্রবণতা কম হয় । পক্ষান্তরে , সামাজিক নিরাপত্তার অভাব থাকলে ভবিষ্যতে সংকট মোকাবিলায় মানুষ বেশি করে সঞ্চয় করে । বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তার খুবই অভাব ফলে সঞ্চয়ের হারও কম ।

৯. স্থান কাল পাত্র : একই আয়ে কোন ব্যক্তি গ্রামে বাস করলে যে পরিমাণ সঞ্চয় করতে পারে শহরে বাস করলে সঞ্চয় কর্ম হবে । কারণ শহরে জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি । আবার ব্যক্তির পেশা ও সামাজিক অবস্থান দ্বারাও সঞ্চয় প্রভাবিত হয় । যেমন- একজন সাধারণ ফেরিওয়ালা এবং একজন সাধারণ চাকুরের আয় সমান হলেও ফেরিওয়ালার তুলনায় চাকুরের সঞ্চয় কম হবে । কারণ চাকুরেকে তার পেশাগত কারণে সুন্দর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে হয় যা ফেরিওয়ালার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় ।

১০. উন্নত ব্যাংক ব্যবস্থা : আধুনিক কালে মানুষ সঞ্চয় করে মূলত নগদ অর্থে । নগদ অর্থ নিজের কাছে রাখা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ । তাই সঞ্চিত অর্থ ব্যাংকে রাখা নিরাপদ । ব্যাংক ব্যবস্থা উন্নত হলে মানুষের সঞ্চয়ের পরিমাণ বাড়ে । পক্ষান্তরে , অনুন্নত ব্যাংক ব্যবস্থা একটি দেশে সঞ্চয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে । তাছাড়া ব্যাংকে টাকা জমা রাখা এবং উত্তোলন সংক্রান্ত নিয়মাবলি যত সহজ সরল ‘ হরে সঞ্চয়ের পরিমাণ ততই বাড়বে । পক্ষান্তরে , নিয়মকানুন কঠিন হলে মানুষ ব্যাংকিং সুবিধা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে । সেক্ষেত্রে সঞ্চয়ের পরিমাণ কম হবে । বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থা অনুন্নত তাই অনিশ্চয়তার কারণে জনগণ সঞ্চয়ে আগ্রহী হয় না ।

উপসংহার : উক্ত নির্ধারকগুলো দ্বারা সঞ্চয় নির্ধারিত হয়।

[ad_2]