প্রশ্নের উত্তর

পুঁই মাচা’ গল্পের বিষয় কী?

উত্তর : গ্রামের এক দরিদ্র ব্রাহ্মণের নাম সহায়হরি চাটুয্যে। তাঁর স্ত্রীর নাম অন্নপূর্ণা। এই দম্পতির কোনো পুত্র সন্তান ছিল না। তাদের চার মেয়ের নাম যথাক্রমে ক্ষেন্তি, পুঁটি, রাধী ও খেঁদি। সহায়হারির অভ্যাস ছিল বড়শি দিয়ে মাছ ধরা এবং পরের জিনিস চেয়ে আনা। অন্নপূর্ণা স্বামীর এই বদভ্যাসকে সমর্থন করতেন না। তিনি সব সময় স্বামীকে ভর্ৎসনা ও তিরস্কার করতেন। কারো কাছ থেকে কিছু চেয়ে না চেয়ে আনাকে অন্নপূর্ণা ঘৃণা করতেন। বড় মেয়ে ক্ষেন্তির বয়স চৌদ্দ পনেরো। একবার তার বিয়ে ঠিক হয়েছিল মণিগাঁয়ের মজুমদার বাড়িতে। কিন্তু পাত্রটির স্বভাবচরিত্র ভালো নয় এই মর্মে খবর এলে সহায়হরি সে সম্বন্ধ ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। এ কারণে উচ্ছ্বগগু করা মেয়ে বলে সমাজে ক্ষেন্তির দুর্নাম ছিল। এরপর আর সম্বন্ধ যোগাড় করা সম্ভব হচ্ছিল না। সমাজপতিরা সহায়হরিকে ‘একঘরে’ করার ভয় দেখালেন। একদিন সহায়হরি গোঁসাইদের বরজপোতার জঙ্গল থেকে বড় মেয়ে ক্ষেন্তিকে নিয়ে একটা বড় মেটে আলু তুলে আনলেন। অন্নপূর্ণা বুঝতে পেরে স্বামী ও মেয়েকে তীব্র কণ্ঠে তিরস্কার করলেন। অন্নপূর্ণা মেয়েদের খুব ভালোবাসতেন। তিনি দরিদ্র হলেও মেয়েদেরকে এটা ওটা তৈরি করে খাওয়াতেন। ক্ষেন্তি পুঁইশাক খুব পছন্দ করতেন। পুঁইশাক পেলে তার আর কিছুর প্রয়োজন হতো না। একবার সে ও পাড়ার রায়েদের ফেলে দেয়া মোটা ও হলুদ রঙের পুঁইশাক কুড়িয়ে এনেছিল বলে মা তাকে যা ইচ্ছে তাইভাবে ভর্ৎসনা করেছিলেন। এরপর ক্ষেন্তি বাড়ির উঠানের পাশে একটা পুঁইশাকের চারা পুঁতে মাচা তৈরি করে দিল। সে পুঁইমাচাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে লাগল। প্রতিদিন এর গোড়ায় পানি ঢেলে যত্ন করতো। কিন্তু ইতোমধ্যে বৈশাখ মাসের প্রথম দিকে ক্ষেন্তির বিয়ে হয়ে গেল। দ্বিতীয় পক্ষের পাত্র বলে জামাইয়ের বয়স ছিল চল্লিশের উপর। এ কারণে অন্নপূর্ণার এ বিয়েতে মত ছিল না। কিন্তু পছন্দসই পাত্র যোগাড় করার ক্ষমতা না থাকার কারণে শেষ পর্যন্ত তিনি রাজি হলেন। ক্ষেন্তি শ্বশুরবাড়ি চলে গেল। পণের আড়াইশ টাকা বাকি থাকার কারণে বিয়ের পর ক্ষেন্তিকে আর বাপের বাড়িতে আসতে দেয়া হয়নি। এরপর ফাল্গুন মাসে বসন্ত রোগে ভুগে ক্ষেন্তি মারা গেল। পরের পৌষ সংক্রান্তিতে অন্নপূর্ণা মেয়েদের জন্য পিঠা বানাতে বসে ক্ষেন্তির কথা মনে পড়ল মেজো মেয়ে পুঁটি মন্তব্য করল, ‘দিদি বড় ভালোবাসত’। অশ্রুপূর্ণ চোখে অন্নপূর্ণা বাইরের উঠানের দিকে তাকিয়ে দেখলেন ক্ষেন্তির তৈরি করা পুঁইমাচাটা পুঁইশাকে কানায় কানায় ভরে গিয়েছে। অথচ ক্ষন্তি আজ নেই। সে যেখানে গিয়েছে সেখান থেকে আর কোন দিন ফিরে আসবে না ।

হ্যান্ডনোট থেকে সংগ্রহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!