পরিসংখ্যানের সীমাবদ্ধতাসমূহ লিখ ।

অথবা, পরিসংখ্যানের দুর্বলদিকসমূহ তুলে ধর।
অথবা, পরিসংখ্যানের সমস্যাসমূহ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ভূমিকা :
পরিসংখ্যান কোন বিষয়ের বা ঘটনার সংখ্যাত্মক বর্ণনা সম্বলিত একটি বিজ্ঞান যা উপাত্তসমূহ বিশ্লেষণের মাধ্যমে উক্ত বিষয় সম্পর্কে সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করতে সহায়তা করে। এ কারণে পরিসংখ্যানের ব্যাপকতা অনেক বিস্তৃত ।
পরিসংখ্যানের সীমাবদ্ধতাসমূহ : বাস্তব জীবনের বিভিন্ন সমস্যায় পরিসংখ্যানের বহুল ব্যবহার এবং প্রয়োগ সত্ত্বেও এর কতকগুলো অসুবিধা এবং সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পরিসংখ্যানের সঠিক প্রয়োগ ও ব্যবহারের জন্য এদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা নিয়ে দেয়া হলো :
১. পরিসংখ্যান সংখ্যাভিত্তিক উপাত্তের উপর নির্ভরশীল : পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যা দ্বারা প্রকাশিত তথ্যাদির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা যায় না এমন তথ্যের ক্ষেত্রে এটা প্রয়োগ করা যায় না। মূলত পরিসংখ্যান পদ্ধতিগুলো সংখ্যাভিত্তিক তথ্যের উপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত। অতএব, পরিসংখ্যান পদ্ধতিসমূহের প্রয়োগ শুধু সংখ্যাত্মক পর্যালোচনা বা যেসব ঘটনাকে সঠিকরূপে সংখ্যায় প্রকাশ করা যায় সেসব তথ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
২. পরিসংখ্যানে সরাসরি গুণবাচক তথ্যাবলি ব্যবহৃত হয় না : গুণবাচক চলকগুলো সরাসরি সংখ্যায় প্রকাশ করা যায় না । যেমন- স্বামী-স্ত্রীকে ভালোবাসে, কিন্তু কতটুকু ভালোবাসে তা সংখ্যাভিত্তিক পরিমাপ করা যায় না। এ ধরনের তথ্য সঠিক সংখ্যার আকারে প্রকাশ করা যায় না। বহু গুণগত চলক রয়েছে, যেমন- কোম্পানির আকার, পণ্যের গুণগতমান, নৈপুণ্য, মেধা ও শ্রমিকের দক্ষতা ইত্যাদি। উপর্যুক্ত বিষয়গুলোকে আনুমানিক প্রক্রিয়ায় সংখ্যায় রূপান্তর করে বিভিন্ন পরিসংখ্যান পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ধরা যাক, অদক্ষ শ্রমিককে ১, আধা দক্ষ শ্রমিকে ২ এবং দক্ষ শ্রমিককে ৩ ইত্যাদি। গুণগত চলককে সঠিকভাবে সংখ্যায় প্রকাশ করতে না পারলে যথার্থ ফলাফল পাওয়া যাবে না ।
৩. পরিসংখ্যান পুঞ্জীভূত তথ্যের বিশ্লেষণ : পরিসংখ্যান পুঞ্জীভূত বা সমষ্টিগত তথ্যের বিশ্লেষণ করে এবং সামগ্রিক ব্লাফলের উপর আলোকপাত করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু সঞ্চয়ের অথবা ঋণের সমান হতে জনসাধারণের সঞ্চয়ের গড় প্রবণতা অথবা গড় ঋণ সম্বন্ধে মোটামুটি ধারণা পাওয়া যায়। এটা ব্যক্তি বিশেষের সঞ্চয়কে প্রকাশ করে না অথবা ব্যক্তিগত ঋণগ্রস্ততার অস্তিত্বকেও অস্বীকার করে না। পরিসংখ্যান এ ধরনেরব্যাপার ব্যাখ্যা করতে পারে না। এক্ষেত্রে পরিসংখ্যান সামগ্রিক একটা ধারণা প্রদান করে ।
৪. কোন স্বতন্ত্রকে পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে না : পরিসংখ্যান কোন একক সংখ্যা বা বিচ্ছিন্ন সংখ্যাকে পর্যালোচনা বা একক কোন সংখ্যার উপর সাধারণত পরিসংখ্যান পর্যালোচনা প্রয়োজন হয় সে পরিস্থিতিতে পরিসংখ্যান পদ্ধতিসমূহ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে না। পরিসংখ্যান স্বতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলো প্রকাশ না করে শুধু সমষ্টির গড় ফল প্রকাশ করে।
৫. পরিসংখ্যান পদ্ধতিসমূহ গড় বিবেচনায় সত্য : কোন অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যাদিকে পরিসংখ্যান পদ্ধতি ব্যবহার করলে যে ফলাফল পাওয়া যায় তা কেবল উক্ত তথ্যাদির গড় বিবেচনায় সত্য । কেননা পরিসংখ্যান কোন একক বা বিচ্ছিন্ন তথ্যাদিকে বিশ্লেষণ করে না। পরিসংখ্যানে অন্যান্য বিজ্ঞানের মতো কোন ঘটনাকে বিশ্লেষণ করে সম্পূর্ণ একক ও নির্ভুল ফলাফল পাওয়া প্রায় অসম্ভব। পরিসংখ্যান শুধু গড় এবং সম্ভাবনার উপর ভিত্তি করে ফলাফল দেয়। এ কারণে পরিসংখ্যানিক তথ্য বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে যেসব পদ্ধতিসমূহ ব্যবহার করা হয় তার প্রাপ্ত ফলাফল গড় বিবেচনায় সত্য ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে একথা বলা যায় যে, কোন বিষয়ে পরিসংখ্যান পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে পরে উল্লেখিত সীমাবদ্ধতাগুলো সতর্কতার সাথে বিবেচনা করলে যথার্থ ফলাফল পাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনাই অধিক ।