পরিসংখ্যানের গুরুত্ব এবং ব্যবহার লিখ ।

অথবা, পরিসংখ্যানের তাৎপর্য আলোচনা কর।
অথবা,পরিসংখ্যানের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।
অথবা, পরিসংখ্যানের প্রয়োজনীয়তা এবং ব্যবহার তুলে ধর।
অথবা, পরিসংখ্যানের তাৎপর্য এবং ব্যবহার উল্লেখ কর।
উত্তর ভূমিকা :
মানুষের ব্যক্তিগত জীবন হতে শুরু করে জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানের গুরুত্ব অপরিসীম । অর্থাৎ বর্তমানে এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে পরিসংখ্যান পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে না । পরিসংখ্যান মানুষের দৈনন্দিন কার্যক্রমের সাথে অবিচ্ছেদ্য সূত্রে জড়িত হয়ে পড়েছে। মানুষ মাত্রই আজ সংবাদপত্র, সাময়িকী, বেতার ও টেলিভিশন ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন সম্মুখীন হয়। ব্যক্তি বিশেষকে আজ এসব পরিসংখ্যানিক তথ্যের মধ্য হতে প্রাসঙ্গিক তথ্যগুলোর তাৎপর্য অনুধাবন ও মূল্য বিচার করার সামর্থ্য অর্জন করতে হয় ।
পরিসংখ্যানের গুরুত্ব এবং ব্যবহার : নিম্নে পরিসংখ্যানের গুরুত্ব ও ব্যবহার আলোচনা করা হলো :
পরিসংখ্যান তথ্যের
১. মানব কল্যাণে পরিসংখ্যান : মানুষের ব্যক্তিগত থেকে জাতীয় জীবনে অর্থাৎ মানব কল্যাণে পরিসংখ্যানের গুরুত্ব অপরিসীম । বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক অর্থাৎ দরিদ্রতা, বেকারত্ব, অপরাধ প্রবণতা, অশিক্ষা, ভূমিকম্প, বন্যা, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি এবং ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে পরিসংখ্যানের ব্যবহার বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
২. পূর্বাভাস প্রদানে পরিসংখ্যান : কোন বিষয় সম্পর্কে অতীতের সংখ্যাত্মক তথ্যাবলি বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পূর্বাভাস প্রদান করা যায়। যেমন বাংলাদেশে সময়ের পরিবর্তনের সাথে জনসংখ্যা, নগরায়ণ এবং শিল্পকারখানা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সে একই গতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এমতাবস্থায় ২০১০ সালে কি পরিমাণ বিদ্যুৎ এর দরকার পড়বে তার আনুমানিক ধারণা অর্থাৎ সম্ভাবনা তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে পরিসংখ্যান পদ্ধতি ব্যবহার করে। বিগত বছরগুলোর বিদ্যুতের চাহিদা বিশ্লেষণ করে ২০১০ সালের চাহিদার পরিমাণ নির্ধারণ এবং সে মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। তাহলে দেশ বিদ্যুৎ ঘাটতির কবলে পড়বে না, যা কালীন সারি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সম্পন্ন করা যায়। এজন্য কোন বিষয়ের ভবিষ্যৎ ফলাফলের সম্ভাব্য ধারণার জন্য পরিসংখ্যান পদ্ধতির উপর নির্ভর করতে হয়।
৩. প্রতিষ্ঠানের নীতি নির্ধারণ : নীতি প্রণয়ন ও সুষ্ঠু সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও পরিসংখ্যানের গুরুত্ব অপরিসীম । নীতি প্রণয়ন সুষ্ঠু ও কার্যকরী হতে হলে আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট আকারে অতীতের পর্যাপ্ত তথ্য ও ধারণা থাকা দরকার । পরিসংখ্যানের মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠানের অতীত তথ্যাবলি বিশ্লেষণ করে নীতি প্রণয়ন এবং সুষ্ঠু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব। যেমন- বাংলাদেশ বিমান বিগত বছরগুলোতে শুধু ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে; অর্থাৎ আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে- নি এবং জনবলের কাঠামো অনেক বেশি ও অদক্ষ। এ কারণে বাংলাদেশ সরকার কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাঁটাই এবং প্রশাসনে গতিশীলতা আনার জন্য বেসরকারি খাতে বাংলাদেশ বিমানকে ছেড়ে দেয়ার মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পেরেছে।
৪. জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন, মনিটরিং এবং মূল্যায়নে : বর্তমান বিশ্বে রাষ্ট্রকে জাতীয় পর্যায়ে কয়েক বছরব্যাপী পরিকল্পনা প্রণয়ন বা প্রকল্প গ্রহণ করতে হয়। শুধু সুষ্ঠু প্রকল্প গ্রহণ করলেই প্রকল্পের উদ্দেশ্য সফল হবে না। প্রকল্প গ্রহণের পাশাপাশি তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলেই উক্ত প্রকল্পের উদ্দেশ্য সার্থক হবে। এক্ষেত্রে মনিটরিং এর মাধ্যমে প্রাপ্ত উপাত্ত পরিসংখ্যান পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করে, প্রকল্পটির বাস্তবায়ন অর্থাৎ যে উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি প্ রণয়ন করা হয়েছে তা মূল্যায়ন করা যায় ।
৫. রাষ্ট্রীয় কাজে পরিসংখ্যান : রাষ্ট্রীয় কাজের সূত্র ধরেই পরিসংখ্যানের উৎপত্তি। রাষ্ট্রকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এবং সরকারি প্রশাসনের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান অপরিহার্য। রাষ্ট্রের কার্য পরিকল্পনা, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য দূরীকরণ, উৎপাদন নীতি, কর ধার্য ও আদায়, বাজেট প্রণয়ন, জাতীয় পে-স্কেল প্রণয়ন, জাতীয় আয় নিরূপণ, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং সামরিক নীতি ইত্যাদি সকল বিষয়ে পরিসংখ্যান গুরুত্বের সাথে ব্যবহৃত হয়ে আসছে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে একথা বলা যায় যে, বর্তমান যুগে পরিসংখ্যানের ব্যবহার সর্বত্রই। সুতরাং বলা যায়, ভবিষ্যতে মানব কল্যাণ এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের মূলই হবে পরিসংখ্যান ।