অথবা, পরিমিত ব্যবধানের ব্যবহার ব্যাখ্যা কর। পরিমিত ব্যবধানের উপকারিতা ও দোষ বা অপকারিতা লেখ।
অথবা, পরিমিত ব্যবধানের ব্যবহার উল্লেখ কর।
অথবা, পরিমিত ব্যবধানের সবল ও দুর্বল দিকসমূহ বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : বিস্তার পরিমাপের একটি পদ্ধতি হলো পরিমিত ব্যবধান। পরিমিত ব্যবধান বিস্তৃতি পরিমাপের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপক হিসেবে স্বীকৃত। বিস্তার পরিমাপের জন্য এটা সবচেয়ে সঠিক ও বহুলভাবে ব্যবহৃত। ১৮৯৩ সালে কার্ল পিয়ারসন পরিমিত ব্যবধান সম্পর্কে ধারণা দেন।
পরিমিত ব্যবধানের ব্যবহার : একটি আদর্শ বিস্তার পরিমাপের যে সকল গুণাবলি থাকা প্রয়োজন তার প্রায়গুলো বৈশিষ্ট্য পরিমিত ব্যবধানের রয়েছে। এ কারণে এটি বিস্তার পরিমাপের অনপেক্ষ পরিমাপসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পদ্ধতি। নিম্নে পরিমিত ব্যবধানের কতিপয় ব্যবহার ও প্রয়োগের ক্ষেত্র উল্লেখ করা হলো:
১. এটি কোন তথ্যসারি বা গণসংখ্যা নিবেশনের কেন্দ্রীয় মান হতে তথ্যের মানসমূহের গড় বিস্তৃতি পরিমাপে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
২. সমজাতীয় এককে প্রকাশিত দু বা ততোধিক তথ্যের বিস্তৃতি তুলনা করার জন্য পরিমিত ব্যবধান একটি আদর্শ পরিমাপক।
৩,কোন তথ্যসারির বা নিবেশনের গাণিতিক গড় কতটুকু নির্ভরযোগ্য তার মাত্রা অর্থাৎ গড়ের প্রতিনিধিত্বশীলতা যাচাই পরিমিত ব্যবধানের মাধ্যমে করা হয়।
৪.যেসব ক্ষেত্রে চতুর্থক ব্যবধান ও গড় ব্যবধানের মাধ্যমে বিস্তার পরিমাপ করা যায় না সেক্ষেত্রেও পরিমিত ব্যবধান ব্যবহার করা যায়।
৫. পরিমিত রেখার বিশ্লেষণে পরিমিত ব্যবধান ব্যবহার করা হয়।
৬. দ্রব্যের গুণগতমান নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ধরনের নিয়ন্ত্রণ চার্ট প্রস্তুত করতে পরিমিত ব্যবধানের ব্যবহার অত্যাবশ্যক।
৭. নমুনায়ন এবং যাচাই নমুনাজ মানের মাধ্যমে যথার্থতা যাচাই (Test of Significance) করতে এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
৮. সংশ্লেষণ ও নির্ভরণ বিশ্লেষণে পরিমিত ব্যবধান ব্যবহার করা হয় ।
৯. বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক তথ্যাবলি বিশ্লেষণ ও পরিকল্পনা প্রণয়নে পরিমিত ব্যবধান ব্যবহার করা হয়। যেমন- বাজার বিশ্লেষণের মাধ্যমে দ্রব্যমূল নিয়ন্ত্রণ এবং শেয়ার বাজারের স্থিতিশীলতা পরিমিত ব্যবধানের মাধ্যমে পরিমাপ করা যায়।
১০. অর্থনৈতিক তথ্যের গতিশীলতা পরিমাপের মাধ্যমে পূর্বাভাস প্রদানে পরিমিত ব্যবধান ব্যবহার করা হয়।
১১. বিভিন্ন ধরনের সম্ভাবনা নিবেশন যেমন- পরিমিত নিবেশন ও পেঁসু নিবেশনের সম্ভাবনা অপেক্ষক উদ্ভাবনে ও মিল করণে এটি ব্যবহৃত হয়।
১২. কোন নিবেশনের বঙ্কিমতা ও সূঁচালতার পরিমাপ পরিমিত ব্যবধানের মাধ্যমে করা হয়।
সুতরাং বলা যায় যে, বিস্তার পরিমাপের আদর্শ পরিমাপক হিসাবে পরিসংখ্যানিক তথ্যসংগ্রহ, সহসম্পর্ক বিশ্লেষণ উচ্চতর পরিসংখ্যানে এবং সময়ভিত্তিক তথ্যসারির বিশ্লেষণে পরিমিত ব্যবধানে কার্যকরী ব্যবহার লক্ষ করা যায়।
পরিমিত ব্যবধানের সুবিধা : পরিমিত ব্যবধান বিস্তার পরিমাপের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপক। ভেদাঙ্কের ধনাত্মক বর্গমূলকে বলা হয় পরিমিত ব্যবধান। পরিমিত ব্যবধানের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
সুবিধা : নিম্নে পরিমিত ব্যবধানের কতিপয় সুবিধা উল্লেখ করা হলো :
১. পরিমিত ব্যবধান সুসংজ্ঞায়িত ও সহজবোধ্য।
২. এটি তথ্যের বিস্তার পরিমাপে অধিক গ্রহণযোগ্য, প্রতিনিধিত্বশীল ও স্থায়ী পরিমাপ কারণ এটি তথ্যের সকল মানের উপর নির্ভর করে নির্ণয় করা হয়।
৩. এটি বিস্তারের অন্যান্য পরিমাপকের তুলনায় নমুনা তারতম্য দ্বারা কম মাত্রায় প্রভাবিত হয়ে থাকে।
৪. এতে গাণিতিক ও বীজগাণিতিক প্রক্রিয়া সহজে প্রয়োগ করা যায়। এজন্য পরিমিত ব্যবধানের ব্যবহার উচ্চতর পরিসংখ্যানে ব
্যাপকভাবে করা হয়।
৫. দু বা ততোধিক তথ্যসারির সম্মিলিত পরিমিত ব্যবধান নির্ণয় করা যায় ।
৬. দু বা ততোধিক তথ্যসারি একই এককে প্রকাশিত হলে এদের মধ্যে বিদ্যমান বিস্তৃতি তুলনা না করতে পরিমিত ব্যবধান নির্ণয় করা হয়।
অসুবিধা : বিস্তার পরিমাপের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা থাকলেও পরিমিত ব্যবধান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা অসুবিধাও পরিলক্ষিত হয় । এটি বিস্তার পরিমাপের একটি আদর্শ পরিমাপ হওয়া সত্ত্বেও কিছু কিছু অসুবিধা পরিলক্ষিত হয় । নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো :
১.পরিমিত ব্যবধানের নির্ণয় প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল ও সময় সাপেক্ষ। এটি নির্ণয়ে বিচ্যুতি বর্গ ও বর্গমূল নির্ণয়ের গাণিতিক জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
২. দু বা ততোধিক তথ্যসারি ভিন্ন ভিন্ন এককে প্রকাশিত হলে এদের বিস্তার ব্যবধানের মাধ্যমে তুলনা করা যায় না ।
৩. এটি চরম অর্থাৎ তথ্যের চরম মান (Extreme value) দ্বারা বেশি মাত্রায় প্রভাবিত হয়।
- খোলা প্রান্ত বিশিষ্ট গণসংখ্যা নিবেশনের জন্য পরিমিত ব্যবধান নির্ণয় করা যায় না ।
৫. এটি লেখচিত্রের মাধ্যমে নির্ণয় করা যায় না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বিস্তার পরিমাপের একটি আদর্শ পরিমাপক হিসেবে পরিমিত ব্যবধানের সামান্য কিছু অসুবিধা পরিলক্ষিত হলেও সেগুলো তার সুবিধার তুলনায় একেবারেই নগণ্য। আর যদি তাই না হবে তাহলে কেন এটিকে বিস্তার পরিমাপের আদর্শ পরিমাপক বলা হয়ে থাকে ।