তৃতীয় বিশ্বে নারীবাদের স্বরূপ কী?

অথবা, উন্নয়নশীল দেশে নারীবাদের চিত্র বর্ণনা কর।
অথবা, তৃতীয় বিশ্বে নারীবাদের চিত্র সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, তৃতীয় বিশ্বে নারীবাদের একটি চিত্র তুলে ধর।
অথবা, উন্নয়নশীল দেশে নারীবাদের স্বরূপ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, উন্নয়নশীল দেশে নারীবাদের অবস্থা সম্পর্কে তুমি যা জান তা সংক্ষেপে তুলে ধর।
উত্তর ভূমিকা :
বিগত শতকের অন্যতম ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর স্বাধীনতা লাভ করে যেসব দেশ তারা তৃতীয় বিশ্ব নামে অভিহিত। এই তৃতীয় বিশ্বে নারীরা তাদের অধিকার আদায় করতে শিখছে। তারা ঘরের বাইরে আসতে শুরু করেছে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে।
তৃতীয় বিশ্বে নারীদের স্বরূপ : নিম্নে তৃতীয় বিশ্বে নারীদের স্বরূপ দেয়া হলো :
১. ধর্মীয় কুসংস্কার থেকে মুক্তকরণ : তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশে নারীরা নানা কুসংস্কারের শিকার। এখানে ধর্মীয় আবরণে নারীদের নিয়ন্ত্রণ ও নিপীড়ন করা হয়। ধর্মীয় কুসংস্কার ও ধর্মীয় বেড়াজাল থেকে মুক্ত করার জন্য তৃতীয় বিশ্বের অনেক নারী কলম ধরেছেন। বেগম রোকেয়ার রচিত ‘অবরোধ বাসিনী’ সুলতানার স্বপ্ন ও আমাদের অবনতি উল্লেখযোগ্য।
২. নারীর ভোটাধিকার : ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত তৃতীয় বিশ্বে নারীর কোনো রাজনৈতিক ভোটাধিকার ছিল না। তবে নারীবাদী আন্দোলনের ফলে তৃতীয় বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রের নারীরা ভোটাধিকার অর্জন করেছে। ভারতীয় উপমহাদেশে মাদ্রাজ প্রদেশে ১৯২১ সালে, বাংলায় ১৯২৫ সালে নারীরা ভোটাধিকার পান।
৩. রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা : তৃতীয় বিশ্বের নারীবাদী আন্দোলনের অন্যতম লক্ষ্য নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করা। তাছাড়া উন্নত বিশ্বের নারীবাদী সংগঠন ও জাতিসংঘের ভূমিকায় তৃতীয় বিশ্বের নারীরা রাজনৈতিক ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশে জাতীয় সংসদে নারীর ৫০টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে।
৪. সম্পদ মালিকানা সৃষ্টি করা : দেখা যায় তৃতীয় বিশ্বের সাম্প্রতিক সময়ে নারী অবস্তুগত সম্পদ থেকে বঞ্চিত ছিল এখনো আছে। সাম্প্রতিক সময়ে নারীবাদী আন্দোলনে নারীরা সম্পদের মালিকানা দাবি করেছে। মুসলিম আইনে নারীর স্বামী ও পিতার সম্পত্তিতে অংশ রয়েছে।
৫. শিক্ষা ও পেশা নির্বাচনে অধিকার : তৃতীয় বিশ্বের নারীবাদী আন্দোলনের অন্যতম সফলতা নারীর শিক্ষা ও পেশা নির্বাচন করার স্বাধীনতা অর্জনের দাবি। ফলে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে নারীরা শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। ফলে সরকারি ও বেসরকারি চাকরিতে নারীরা সুযোগ পাচ্ছে।
৬. বিবাহ ও পরিচিতি : আমাদের বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বাল্যবিবাহ এবং সন্তানের পরিচয় বাবার নামে প্রচলিত ছিল। নারীবাদী আন্দোলনের কারণে বাল্যবিবাহ রোধ হয়েছে। তাছাড়া বর্তমানে বাবার পরিচয়ে নয়, মায়ের পরিচয়েও সন্তানের পরিচয় স্বীকৃত হয়েছে।
৭. আইনগত মর্যাদা লাভের অধিকার : তৃতীয় বিশ্বের নারীরা আইনগত অধিকার সম্পর্কে অবগত ছিল না। সাম্প্রতিক সময়ে নারীবাদী আন্দোলনের ফলে নারীরা তাদের আইনগত অধিকার সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নারীবাদী আন্দোলন হলো নারীর পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নির্যাতন অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও বৈষয়িক ক্ষেত্রে অধিকার প্রতিষ্ঠার এক আন্দোলন। তৃতীয় বিশ্বে নারীরা যে শোষণ, থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে তার জন্য এই নারীবাদী আন্দোলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80-%e0%a6%93-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%90%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%93/