তত্ত্বের সংজ্ঞা দাও । তত্ত্বের শ্রেণিবিভাগ বর্ণনা কর

অথবা, তত্ত্ব কাকে বলে? তত্ত্বের ধরনসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, তত্ত্ব কী? তত্ত্বের প্রকারভেদসমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, তত্ত্ব বলতে কী বুঝ? তত্ত্ব কত প্রকার ও কী কী? আলোচনা কর।

উত্তর ভূমিকা : সামাজিক গবেষণায় তত্ত্ব একটি মৌল প্রত্যয়। তত্ত্ব সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রকে ত্বরান্বিত করে থাকে । সমাজে যেসব ঘটনা ঘটে তার প্রত্যেকটি এক বা একাধিক তত্ত্বের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠে। মূলত যে কোনো বিজ্ঞানের প্রধান লক্ষ্য তত্ত্ব প্রদান ।
তত্ত্ব : আভিধানিক অর্থে, তত্ত্ব হচ্ছে বিমূর্ত, অনুমান, ধারণা, অনুমিত সিদ্ধান্ত প্রভৃতি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, তত্ত্ব হলো দুটি প্রত্যয়ের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের সাধারণ একটি বিবৃতি। সাধারণ জনগণ তত্ত্বকে যতক্ষণ প্রমাণিত না করতে পারেন ততক্ষণ কল্পনাই মনে করেন। সনাতনী সমাজবিজ্ঞানীরা বলেছেন, তত্ত্ব হচ্ছে “Set of untestable statements, “

প্রামাণ্য সংজ্ঞা : তত্ত্বের সংজ্ঞা বিভিন্ন সমাজ গবেষক বিভিন্নভাবে দিয়েছেন। নিম্নে তাঁদের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি|

সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো : সমাজ গবেষক Seltiny বলেছেন, “A theory is a set of interrelation constructs (concepts) definitions propositions that represent a systematic views of phenomena by specifying relations among variables with the purpose of explaining and predicting in the phenomena.”
G. R. Adams এর মতে, “তত্ত্ব হলো কতকগুলো ঘটনার ব্যাখ্যা, যা দ্বারা যুক্তিসঙ্গত কিছু ঘটে । এটা হলো যা দেখা যায় তার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ মাত্র।”


J. D. Schavanneveldt , “Theory is an explanation for events, a raitonal for way something occurred; it is the scientific explanation of a condition that has been observed.”


জুলিয়ান সাইমন এর মতে, “তত্ত্ব চিন্তার সার্বিক ব্যবস্থা যা অনেক বিষয়কে উল্লেখ করে এবং যার অংশগুলো একে অপরের সাথে অবরোহ যৌক্তিক আকারে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে।”
তত্ত্বের সংজ্ঞা পর্যালোচনার পর ‘Encyclopedia of Social Research’ এ উল্লেখ করেছেন যে, “A theory is a set of systematically related propositions specifying causal relationships among variables.”

অতএব বলা যায়, তত্ত্ব কোনো বিষয়বস্তুর ধারণা প্রদান করে, বিষয়বস্তুব্ধ প্রত্যয়সমূহের ব্যাখ্যা দান, তথ্যের সম্ভাবনা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে এবং সর্বোপরি তত্ত্ব আমাদের মনের ধারাবাহিকতা ও ভাবের পারস্পর্য রক্ষা করে।

তত্ত্বের শ্রেণিবিভাগ : সমাজ গবেষকগণ তত্ত্বকে বিভিন্ন আঙ্গিকে শ্রেণিবিভাজন করেছেন। ফ্রান্সিস আব্রাহাম (Fransis Abraham) তাঁর ‘Modern Sociological Theory’ গ্রন্থে তত্ত্বসমূহকে নিম্নোক্ত তিনটি বিকল্প ধারায় শ্রেণিবদ্ধ করেছেন।
ক. কাল্পনিক বনাম বস্তুনিষ্ঠ তত্ত্ব (Speculative Vs. Grounded Theories)
খ. ব্যাপক বনাম ক্ষুদ্র তত্ত্ব (Grand Vs. Miniature Theory)
গ. সামষ্টিক বনাম ক্ষুদ্র তত্ত্ব (Macro Vs. Micro Theories)

জর্জ সি. হোমান তাঁর ‘Contemporary Theory in Sociology‘ গ্রন্থে দু’ধরনের সাধারণ তত্ত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো:

i. তথ্যনির্ভর তত্ত্ব : তথ্যের উপর ভিত্তি করে যে তত্ত্ব বিনির্মিত হয় তাকে তথ্যনির্ভর তত্ত্ব বলে। এক্ষেত্রে আমরা Data থেকে Theory করি এবং Theory Data এর মাধ্যমে বিশ্লেষণ করি।
ii. কল্পনাশ্রয়ী তত্ত্ব : এ ধরনের তত্ত্ব হলো দার্শনিকভিত্তিক বিমূর্ত ও ভাবগত প্রকৃতির। অর্থাৎ দর্শন তথা কল্পনা থেকে সমাজ সম্পর্কে যে তত্ত্ব প্রদান করা হয়।
iii. অবরোহমূলক তত্ত্ব : সামান্য থেকে বিশেষে উত্তরণের প্রক্রিয়া। অর্থাৎ অবরোহমূলক তত্ত্ব হলো সাধারণ উপসংহার থেকে বিশেষ পর্যবেক্ষণে পৌঁছানো। যেমন- পৃথিবীর সকল মানুষ মরণশীল, যেহেতু করিম সাহেব একজন মানুষ, সেহেতু করিম সাহেবও মরণশীল।

iv. আরোহমূলক তত্ত্ব : বিশেষ থেকে সামান্যে উত্তরণের প্রক্রিয়া। অর্থাৎ আরোহমূলক তত্ত্ব হলো কোনো নির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ থেকে সাধারণ উপসংহারে উপনীত হওয়া। যেমন- রহিম মরণশীল, রাম মরণশীল, যেহেতু তারা মানুষ। সুতরাং পৃথিবীর সকল মানুষই মরণশীল। আরোহমূলক তত্ত্ব বিকাশভিত্তিক পঠন-পাঠনে সঠিক পথ নির্দেশনা প্রদান করে। কারণ এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কতিপয় ঘটনা বিশ্লেষণ থেকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।


উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, তত্ত্ব কোনো বিষয়বস্তুর ধারণা প্রদান করে, বিষয়বস্তুর প্রত্যয়সমূহের বাখ্যা দান, তথ্যের সম্ভাবনা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে এবং সর্বোপরি তত্ত্ব আমাদের মনের ধারাবাহিকতা ও ভাবের পারস্পর্য রক্ষা করে।