জাবারিয়া সম্প্রদায় কারা? তাদের মৌলিক বিশ্বাস সম্পর্কে আলোচনা কর।

অথবা, মৌলিক বিশ্বাস সম্পর্কে জাবারিয়াদের মতবাদ আলোচনা কর।
অথবা, জাবারিয়া কারা? তাদের মতে মৌলিক বিশ্বাস কিরূপ? বর্ণনা কর।
অথবা, মৌলিক বিশ্বাস সম্পর্কে জাবারিয়াদের মতবাদ বিশ্লেষণ কর।
অথবা, মৌলিক বিশ্বাস সম্পর্কে জাবারিয়ারা যে মতবাদ দেন তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
হযরত মুহাম্মদ (স) এর তিরোধানের পর পুরানো সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কলহ, হিংসা-বিদ্বেষ প্রভৃতি বিষয়ে মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। মুসলমানগণ কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে নিজেরাই বিভক্ত হয়ে পড়ে। ফলে বিভিন্ন দল-উপদল বা সম্প্রদায় সৃষ্টি হয়। এ সম্প্রদায়ের মধ্যে জাবারিয়া সম্প্রদায় অন্যতম।
জাবারিয়া সম্প্রদায় : আরবি ‘জবর’ শব্দ থেকেই জাবারিয়া শব্দটি এসেছে। এর অর্থ বাধ্যতা, অদৃষ্ট বা নিয়তি। এ সম্প্রদায়ের মতে, মানুষের ইচ্ছা বা কর্মের স্বাধীনতা বলে কিছুই নেই। মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতায় অস্বীকৃতি এবং আল্লাহর স্বেচ্ছাচারে বিশ্বাস থেকেই জাবারিয়া সম্প্রদায়ের উদ্ভব। মানুষ সম্পূর্ণরূপে অদৃষ্ট বা নিয়তির অধীন। নিয়তি বা অদৃষ্টের কাছে মানুষ সম্পূর্ণরূপে অসহায়। আল্লাহ্ মানুষের অদৃষ্টে বা ভাগে যা রাখেন তাই হয়। সৎ অসৎ সমস্ত কাজই মানুষ আল্লাহর ইচ্ছাতেই করে। তাই জাবারিয়াদের মতে, মানুষকে তার কৃতকর্মের জন্য দায়ী করা যায় না। মুসলিম দর্শনে এ সম্প্রদায় অদৃষ্টবাদী দার্শনিক সম্প্রদায় নামে পরিচিত। অদৃষ্টবাদী এ জাবারিয়া সম্প্রাদায়ের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন জাহান বিন সাফওয়ান (মৃত্যু ৭৪৫ খ্রি:)। এ মতবাদ উমাইর। শাসন আমলে বেশ প্রসার লাভ করে। সাফওয়ানের মতে, আল্লাহ্স র্বশক্তিমান। তাই মানুষের কোন ক্ষমতা নেই।
জাবারিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস : জাবারিয়াদের কিছু মৌলিক বিশ্বাস রয়েছে যা নিম্নে আলোচনা করা :
১. জাবারিয়াদের মতে, প্রত্যেক কাজ আল্লাহর কাছ থেকে আসে। মানুষ তার কৃতকর্মের জন্য দায়ী নয়। তাই মানুষের কোন কাজ করার শক্তি নেই। এমনকি কাজ করার ইচ্ছা বা স্বাধীনতা নেই। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। এই মানুষ সম্পূর্ণরূপে মহান আল্লাহর সার্বভৌম শক্তির অধীন। মানুষের পুরস্কার ও শাস্তি আল্লাহর সার্বভৌম শক্তির অধীন। জাবারিয়ারা আল্লাহর সর্বময় ক্ষমতার কথা বলে আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতাকে রক্ষা করেছেন ঠিকই কিন্তু এতে করে তাঁরা মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্যকে ক্ষুণ্ন করেছেন। তাদের মতে, জগতের প্রতিটি ঘটনা আল্লাহর পূর্বনির্ধারিত নির্দেশে সংঘটিত হয়।
৪. জাবারিয়াগণ বলেন, আল্লাহ্ যাকে খুশি মার্জনা করবেন এবং যাকে খুশি শাস্তি দিবেন। কারণ তিনি সর্ব ব্যাপারে যা খুশি তা করতে সমর্থ।
শাহরিস্তানী জাবারিয়াদের দুই ভাগে ভাগ করেছেন। যথা :
গোঁড়া জাবারিয়া ও মধ্যমপন্থি জাবারিয়া।
১. গোঁড়া জাবারিয়া : গোঁড়া জাবারিয়াদের মতে, কোন অর্থেই মানুষ কাজ করে না অথবা মানুষের কাজের শক্তি
১. আছে বলা যায় না।
২. মধ্যমপন্থি জাবারিয়া : মধ্যমপন্থি জাবারিয়াদের মতে, মানুষের ইচ্ছা শক্তি আছে কিন্তু সে শক্তি মানুষের কাজের উপর কোন প্রভাব বিস্তার করে না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জাবারিয়া সম্প্রদায়ের উদ্ভব ইসলামের স্বাভাবিক জীবনধারায় এক চরমপন্থি চিন্তাচেতনা সঞ্চার করে। মানুষকে আল্লাহ্ বিবেকদান করেছেন এবং তাঁর উপর কিছু কাজ ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাত করেছেন। জাবারিয়া সম্প্রদায় সেগুলোকে অস্বীকার করে ইচ্ছাধীন জীবনযাপনের পক্ষপাতী। তাই তাদেরকে আমরা সঠিক পথের অনুসারী বলতে পারি না।