ছাত্রদের ১১ দফা দাবির তাৎপর্য লিখ ।

অথবা, ১১ দফা দাবির গুরুত্ব আলোচনা কর।
অথবা, ছাত্রদের ১১ দফা দাবির গুরুত্ব সংক্ষেপে উল্লেখ কর।
অথবা, ছাত্রদের ১১ দফা দাবির তাৎপর্য সংক্ষেপে তুলে ধর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
আইয়ুব দশকের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের মূল্যায়নে যখন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ব্যতিব্যস্ত, তখন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ উক্ত দশকের শোষণনীতি ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে। ১৯৬৮ সালের শেষদিকে ছাত্রসমাজের এগারো দফা দাবি পেশ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর এ শোষণনীতিরই বহিঃপ্রকাশ।
১১ দফার ভিত্তিতেই তদানীন্তন পূর্ব বাংলা বিপ্লবী ছাত্রসমাজ ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এক প্রতিরোধ্য ও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল।
ছাত্রদের ১১ দফা দাবির তাৎপর্য : ছাত্রদের ১১ দফা কর্মসূচি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি মাইলফলক হিসেবে পরিগণিত। নিম্নে এ ১১ দফা কর্মসূচির তাৎপর্য তুলে ধরা হলো :
১. ১১ দফার ভিতর ছাত্রসমাজের দাবিসহ এ দেশের কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক সকল শ্রেণির মানুষের আকাঙ্ক্ষিত দাবিগুলো অত্যন্ত স্পষ্টভাবে মূর্ত হয়ে উঠে।
২.১১ দফা দাবি পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিশেষ করে নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির স্বার্থ উদ্ধারের মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়। ছাত্রসমাজের ৩.১১ দফা আন্দোলনের তীব্রতা রাজনৈতিক অঙ্গনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য গড়ে তোলার অনুপ্রেরণা যোগায়।
৪. গণআন্দোলনের ফলে স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকারের পতন ঘটে। ১১ দফা ছিল বাঙালি জাতির স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ।
৫. পূর্ব পাকিস্তানে তৎকালীন ছাত্র লীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও জাতীয় ছাত্র ফেডারেশনের একাংশ মিলিত হয়ে S.A.C (Student Action Committee) গঠন করা ১১ দফা আন্দোলনের অন্যতম ফসল।
৬. এগার দফার মধ্যে কুখ্যাত হামিদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স বাতিল করা ও স্বায়ত্তশাসন প্রদানের দাবি জানানো হয়, যা সকল স্তরের মানুষের নিকট সমাদৃত হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, ১১ দফা দাবি মূলত ছাত্রসমাজের দাবি হলেও এ দাবিগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন, শাসনতান্ত্রিক দাবি এবং শ্রমিক কৃষকদের স্বার্থরক্ষার দাবি স্পষ্ট হয়ে উঠে।
প্রকৃতপক্ষে, এগার দফা দাবি ছিল কৃষক শ্রমিকদের স্বার্থ আদায়ের ম্যাগনাকার্টা। ফলশ্রুতিতে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা আন্দোলনে ১১ দফা দাবির মূল উদ্দেশ্য তথা বাঙালির আজন্ম লালিত স্বপ্ন স্বাধীন বাংলাদেশের আবির্ভাব ঘটে।