
ডিগ্রী অনার্স মাস্টার্স পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে পেতে Whatsapp এ ম্যাসেজ করুন। Whatsapp 01979786079
গীতি কবিতা হিসেবে মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘আত্মবিলাপ-এর সার্থকতা বিচার কর।
admin
- 0
উত্তর ভূমিকা: মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩) ছিলেন বাংলা আধুনিক কবিতার প্রথম সার্থক রূপকার। তিনি
মূলত মহাকবি ও নাট্যকার। ‘মেঘনাদবধ কাব্য তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কতি মহাকাব্য নাটক রচনার পাশাপাশি তিনি কিছু গীতিকবিতাও
রচনা করেছেন। তাঁর রচিত স্বল্প সংখ্যক গীতিকবিতার মধ্যে আলােচ্য আবিলাপ’ কবিতাটি অন্যতম প্রধান। নিম্নে গীতিকবিতা
হিসেবে ‘আত্মবিলাপ’ কবিতার সার্থকতা আলােচনা করা হলাে।
গীতিকবিতা কী : গীতিকবিতা ক্ষুদ্রায়তন বিশিষ্ট ছন্দোময় রচনা। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ও মাইকেল মধুসূদন দত্ত এ শ্রেণির
কবিতার প্রবর্তক। বিহারীলাল চক্রবর্তী গীতিকবিতা রচনা করে সবচেয়ে বেশি সুনাম কুড়িয়েছেন। ইংরেজি লিরিককে বাংলায়
গীতিকবিতা বলা হয়। গীতিকবিতায় কবি নিজের জীবন অভিজ্ঞতা ও আত্মােপলব্ধির নির্যাসকে ছন্দে সমর্পিত শব্দের সমাহারে
সাধারণ পাঠকও তাদের জীবন অভিজ্ঞতার অনেক কিছু মিলিয়ে নিতে পারেন তার সাথে। আত্মীয়তা অনুভব করতে পারেন কবির
অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির সাথে। চমৎকারভাবে উপস্থাপন করে থাকেন। তবে কবির মধ্যে আত্মভাবনাকে সর্বজনীন করে তােলার তীব্র প্রয়াস লক্ষ করা যায়। ফলে।
গীতিকবিতার বৈশিষ্ট্য : গীতিকবিতা সাধারণত ক্ষুদ্র আকারের হয়ে থাকে। ছন্দোবদ্ধ চরণ বিন্যাস এর প্রধান বৈশিষ্ট্য।
স্তবকে স্তবকে কবিতার চরণসমূহ সজ্জিত করে গীতিকবিতাকে আকর্ষণীয় করে তােলা হয়। গীতিকবিতার চরণসমূহে সাবলীল
গতিশীলতা পরিলক্ষিত হয়। কবি তাঁর ব্যক্তিগত অনুভূতি ও ভাববাচ্ছাসকে কালাে অক্ষরের শৃঙ্খলে কবিতার কারাগারে বন্দী করে
রাখেন। এ কবিতা পাঠকালে পাঠকের মধ্যে ভাবতন্ময়তার সৃষ্টি হয়। পাঠক কবির সাথে নিজেকে একাত্ম করে ফেলেন।
গীতিকবিতায় কোন কাহিনির স্থান নেই। সমগ্র কবিতায় একটি মাত্র ভাব প্রকাশের বেদনায় মূর্ত হয়ে উঠে।
গীতিকবিতার সার্থক সষ্টা : মাইকেল মধুসূদন দত্ত, কায়কোবাদ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিহারীলাল চক্রবর্তী, কাজী নজরুল
ইসলাম, গােলাম মােস্তফা প্রমুখ বাংলা গীতিকবিতার সার্থক স্রষ্টা। এঁদের পথ অনুসরণ করে বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে অসংখ্য
গীতিকবিতার জন্ম হয়েছে। তাঁর ‘আত্মবিলাপ কবিতাতে আমরা ব্যক্তি হৃদয়ের উত্তাপ অনুভব করি। কবির অতীত জীবনের জন্য
অনুশােচনা এবং তা থেকে অহরাত্র বেদনা বেড়ে চলার যে চিত্র কবি অঙ্কন করেছেন সে-বিচারে ‘আত্মবিলাপ’ শ্রেষ্ঠ গীতিকবিতার
মর্যাদা লাভ করতে পারে।
গীতিকবিতা হিসেবে আত্মবিলাপ : মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘আত্মবিলাপ’ কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের একটি উৎকৃষ্ট
গীতিকবিতা। এ কবিতায় কবি তার আত্মার বেদনার্ত স্বরূপকে উন্মােচন করেছেন। ব্যক্তিজীবনের ব্যর্থতা কবিতাটির চরণে চরণে
ছন্দে ছন্দে প্রকাশ পেয়েছে। মানুষ সুখের সন্ধানী। সে সুখ স্বপ্নে বিভাের হয়ে জীবনকে পরিচালিত করে। কিন্তু এ সুখের নাগাল সে
সহজে পায় না। রাতের স্বপ্ন সুখে আবিষ্ট মানুষ ঘুম থেকে জেগে সে স্বপ্নে দেখা সুখ আর খুঁজে পায় না। তখন হতাশা তাকে ঘিরে
ধরে। কবি এ সম্পর্কে বলেছেন-
“নিশার স্বপন সুখে
সুখী যে, কী সুখ তার?
জাগে সে কাঁদিতে!”
কবি নিজের জীবন অভিজ্ঞতার আলােকে মানুষের এ ব্যর্থতাজনিত বিলাপের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন এ কবিতায়।
‘আত্মবিলাপ কবিতার মূল্যায়ন : আশা ছলনাময়ী। তাই আশার পিছনে ছুটে মানুষ কেবল হয়রান হয়। তাকে বঞ্চিত
হতে হয় জীবনের সুখশান্তি থেকে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত এ বঞ্চনার মুখােমুখি না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত সে থামে না। এর মধ্যে তার
আয়ু কমে আসতে থাকে। একসময় যখন সে বুঝতে পারে তার এ ছােটাছুটি একেবারেই অর্থহীন তখন তার সমস্ত অন্তরাত্মা বিলাপে।
মগ্ন হয়। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত এ বঞ্চনার শিকার হয়েছেন বলেই সমস্ত মানবাত্মার হাহাকার তাঁর কবিতায় ধরা পড়েছে।
সকলের মনের কথাকে তিনি নিজের কথা হিসেবে প্রকাশ করেছেন। আর পাঠক এ কবিতা পড়ে নিজের ভাবনাটাই প্রত্যক্ষ করেছেন
এর চরণে চরণে। ফলে কবির একান্ত অনুভব ও উপলব্ধি হয়ে উঠেছে সর্বজনীন। গীতিকবিতা হিসেবে আত্মবিলাপ’ একারণেই
সার্থক কবিতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর ভাব হয়ে উঠেছে সর্বব্যাপি।
উপসংহার : উপযুক্ত আলােচনা শেষে বলা যায় যে, মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘আত্মবিলাপ’ একটি সার্থক
গীতিকবিতা। ভাব, ভাষা, ছন্দ, শব্দচয়ন, অলংকার ও উপমায় এর বক্তব্য সুসজ্জিত। কবির ব্যক্তি অনুভূতি আর পাঠকের
অনুভূতি এ কবিতায় একাকার হয়ে গিয়েছে। যে বিলাপ তিনি এ কবিতায় করেছেন তা আর তার একার থাকেনি- তা হয়ে।
উঠেছে আমাদের সকলের অনুভূতির প্রকাশ।
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079