গবেষণা নকশা প্রণয়নে বিবেচ্য বিষয়গুলো লিখ।

অথবা, গবেষণা নকশা প্রস্তুতে বিবেচ্য বিষয় উল্লেখ কর।
অথবা, গবেষণা নকশা তৈরিতে বিবেচ্য বিষয়সমূহ তুলে ধর।
অথবা, গবেষণা নকশা প্রণয়নে কোন কোন বিষয় বিবেচনা করা হয়।
উত্তর৷ ভূমিকা :
গবেষণা নকশা গবেষণা কাজকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করতে সহায়তা করে থাকে । কিন্তু একটি উত্তম গবেষণা নকশা প্রণয়ন বা প্রস্তুত করা বেশ জটিল এবং কষ্টসাধ্য বিষয় । এজন্য সমাজ গবেষণায় একটি উত্তম গবেষণা নকশা প্রণয়নকালে গবেষককে অনেক বিকল্প (Alternative) বিষয় সম্পর্কে বিবেচনা করে অগ্রসর হতে হয়। বিশিষ্ট সমাজ গবেষক Earl Babbie তাঁর ‘The Practice of Social Research.’ (1986) গ্রন্থের চতুর্থ অধ্যায়ে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
গবেষণা নকশা প্রণয়নে বিবেচ্য বিষয়গুলো : তাঁর মতে, গবেষণা নকশা প্রণয়নে বিবেচ্য বিষয়গুলো নিম্নরূপ :
১. গবেষণার উদ্দেশ্য : সমাজ গবেষণা বহুবিধ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হলেও গবেষক সাধারণত তিনটি উদ্দেশ্য অর্জনের চেষ্টা করে থাকেন । যথা :
ক. উদ্ঘাটন (Exploration)
খ. বর্ণনা (Description) এবং
গ. ব্যাখ্যা (Explanation)
২. বিশ্লেষণের একক : বৈজ্ঞানিক সমাজ গবেষণায় সমাজ গবেষকগণ যেসব একক নিয়ে অধ্যয়ন বা বিশ্লেষণ করতে
আগ্রহী হন, বিশাল সামাজিক পরিমণ্ডলে সেগুলো বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। সমাজ গবেষণায় সম্ভাব্য বিশ্লেষণ এককগুলো
হচ্ছে নিম্নরূপ :
ক. ব্যক্তি (Individuals)
খ. দল বা গোষ্ঠী (Groups)
গ. সামাজিক সংগঠন (Social organizations)
ঘ.সামাজিক শিল্পবস্তু (Social artifacts) যেমন- বই, কবিতা, চিত্রকলা (Painting), অট্টালিকা, গান, মৃৎপাত্র (Pottery), কৌতুক, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ইত্যাদি ।
৩. গবেষণার বিষয় : উপযুক্ত সম্ভাব্য বিশ্লেষণ এককের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সমাজ গবেষণার উপযোগী বিভিন্ন বিষয় নির্ধারণ করে দেয় । এগুলো তিন ধরনের। যেমন-
ক. বৈশিষ্ট্য : যেমন— উত্তরদাতা/ব্যক্তির বয়স, লিঙ্গ, উচ্চতা, বৈবাহিক অবস্থা, ধর্ম, পেশা, আয়, বিকলতা (Deformity), শ্রবণশক্তি, অবস্থান (Location), উদ্দেশ্য ইত্যাদি ।
খ. পরিচিতি : যেমন- ব্যক্তির মনোভাব, বিশ্বাস, ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য, কুসংস্কার, (Prejudices), দলগত উদ্দেশ্য, নীতি, বিধিব্যবস্থা (Regulations) ইত্যাদি ।
গ. কার্যক্রম : যেমন- ব্যক্তিগতভাবে ভোটদান, বন্ড (Bond) ক্রয়, বিনিয়োগ, বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া (Dropping out of school) উপাসনালয়ে গমন, দলগত ও প্রতিষ্ঠানগতভাবে সহযোগিতা, মূল্য নির্ধারণ, দেউলিয়া (Bankrupt) হয়ে পড়া ইত্যাদি ।
৪. সময়ের বিভিন্নতা : গবেষণা নকশায় সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । কেননা সামাজিক ঘটনাগুলো সময়ের দৃষ্টিতে স্বল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ায় ঘটে থাকে। সময়ের বিভিন্নতার দরুন ঘটনাসমূহের কার্যকরণ সম্পর্ক কিংবা সাধারণীকরণেও (Generalization) বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় । উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২৫ বছর পূর্বের কোন ঘটনা বা বিষয়ের গবেষণার বর্ণনা বর্তমান গবেষণার বর্ণনা এক রকম নয়। এ দৃষ্টিতে সমাজ গবেষকগণ গবেষণা বিষয় নির্বাচন করতে গিয়ে যেসব প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেন সেগুলো হলো :
ক. প্রস্থচ্ছেদমূলক অধ্যয়ন : এক্ষেত্রে একটি পর্যবেক্ষণ করা হয়। যেমন- আদমশুমারি (Census) কৃষিশুমারি ইত্যাদি ।
খ. দৈৰ্ঘ্যিক অধ্যয়ন : এক্ষেত্রে গবেষক দীর্ঘ সময়ব্যাপী তাঁর গবেষণার বিশ্লেষণের এককসমূহ সরজমিনে পর্যবেক্ষণ করে থাকেন । যেমন— নৃবিজ্ঞানের জনক লুইস হেনরি মর্গান (L. H. Morgan) আমেরিকার ইরোকুয়া সম্প্রদায়ের উপর দীর্ঘমেয়াদি নৃতাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণ করে তাঁর বিখ্যাত ‘The Ancient Society’ (আদিম সমাজ) গ্রন্থ রচনা করেন । দৈর্ঘ্যক অধ্যয়ন পদ্ধতিতে আবার তিন ধরনের বিশেষ গবেষণা হয়ে থাকে। যেমন-
i. ধারা অধ্যয়ন : যেমন- নির্বাচনি প্রচারণার সময় Gallup Polls এর সাহায্যে বিভিন্ন প্রার্থীর (Candidates) পক্ষে ভোটের প্রবণতা গণনা করা ।
ii. গোত্র অধ্যয়ন : এক্ষেত্রে মূলত একটি নির ্দিষ্ট বয়স বিভাগের (Age-group) জনসংখ্যা নিয়ে অধ্যয়ন করা হয় । যেমন- বৃদ্ধ বয়সের সামাজিক নিরাপত্তা ধারা অধ্যয়নে ৬৪+ বয়স্ক লোকদের জীবনধারা পর্যবেক্ষণ করা।
iii. প্যানেল অধ্যয়ন : এক্ষেত্রে কোনো বিষয়ের মতামত জরিপের জন্য একটি নির্দিষ্ট দল বা গোষ্ঠীর জনগণের উপর সময়ের ব্যবধানের সাথে মতামতের পরিবর্তন হয় কিনা তা অনুধাবন করা হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, বিখ্যাত সমাজ গবেষক Earl Babbie এর উপর্যুক্ত বিষয়াদি বিবেচনা করলে সমাজ গবেষণার জন্য উত্তম গবেষণা নকশা প্রণয়ন করা সহজ হয়।