গবেষণা ও তত্ত্বের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা কর।

গবেষণা ও তত্ত্বের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা কর।
অথবা, তত্ত্ব ও গবেষণার পারস্পরিক সম্পর্ক দেখাও।
অথবা, তত্ত্ব ও গবেষণার সাদৃশ্য দেখাও।
অথবা, তত্ত্ব ও গবেষণার পারস্পরিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর।


উত্তর৷ ভূমিকা : শব্দগত দিক থেকে তত্ত্ব ও গবেষণা দুটি পৃথক বিষয় হলেও এরা সম্পূর্ণ পৃথক নয় বরং তত্ত্ব ও গবেষণা একে অপরের পরিপূরক ও পরস্পর নির্ভরশীল। গবেষণা যেমন তত্ত্ব গঠনে বিভিন্নভাবে সাহায্য করে থাকে, তেমনি তত্ত্বও গবেষণাকে সফল করে তোলার কাজে নানাভাবে সাহায্য করে থাকে। সুতরাং একটিকে বাদ দিয়ে
অন্যটি অচল।


গবেষণা ও তত্ত্বের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক : নিম্নে এদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা প্রথমত, কোনো বিষয়ে গবেষণা করতে হলে প্রথমে যে দীক্ষার প্রয়োজন হয় তা তত্ত্ব থেকে পাওয়া যায়। অর্থাৎ কোনো বিষয়ে গবেষণার জন্য তত্ত্ব পথনির্দেশ করে। অন্যদিকে, গবেষণা নতুন তত্ত্ব দিয়ে থাকে। অর্থাৎ যে বিষয় সম্পর্কে
আমাদের ধারণা নেই বা ছিল না সে বিষয় সম্পর্কে গবেষণা তত্ত্ব প্রদান করে থাকে।

দ্বিতীয়ত, কোনো তত্ত্বকে উন্নত করতে হলে গবেষণার মাধ্যমে অগ্রসর হতে হয়। কোনো একটি বিষয় সম্পর্কে অনুমান করতে হলে এবং অনুমান সম্পর্কে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হলে সে সম্পর্কে পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন। গবেষণার মাধ্যমে এ অনুমানের উপর অনুসন্ধান চালিয়ে একটি তত্ত্ব দাঁড় করানো হয়। তৃতীয়ত, কোনো বিজ্ঞানী কোনো বিষয়ের উপর তত্ত্ব দিতে পারে না, যদি না তাঁর কাছে উক্ত বিষয়ের প্রচুর তথ্য থাকে। আর এ তথ্য হচ্ছে গবেষণার মূল বিষয়। তত্ত্বের মধ্যে কোন শূন্যতা থাকলে গবেষণার মাধ্যমে তা পূর্ণ করা হয়। অর্থাৎ গবেষণা তত্ত্বকে বাঁচিয়ে রাখে।


চতুর্থত, তত্ত্ব গবেষণায় ধারণাগত কাঠামো প্রদান করে। কি ধরনের পদ্ধতি ও তত্ত্ব ব্যবহার করতে হবে, কিভাবে বিন্যস্ত করা হবে ইত্যাদি বিষয়ে এ কাঠামো গবেষককে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

পঞ্চমত, তত্ত্ব কল্পনাশ্রয়ী নয় বরং তথ্যের উপর ভিত্তিশীল ও অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের সাথে সংগতিপূর্ণ । এজন্য তত্ত্ব কি এবং কেন প্রশ্নের উত্তর দেয়, কিন্তু কি হওয়া উচিত (Should be) প্রশ্নের উত্তর দেয় না। যা বৈজ্ঞানিক গবেষণার অন্যতম ভিত্তি।

ষষ্ঠত, গবেষণা বাস্তব পরিস্থিতিতে তত্ত্বকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এবং পুরাতন তত্ত্বকে নতুনভাবে সাজায় বা পুনর্গঠন করে।

সপ্তম, তত্ত্ব প্রয়োজনীয় ধারণা, সাধারণীকরণ, অনুসিদ্ধান্ত, বিধি ইত্যাদির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়, এসব বিষয় বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য অতি প্রয়োজনীয় উপাদান যেগুলো তত্ত্ব সরবরাহ করে থাকে ।

অষ্টমত, তত্ত্ব বিদ্যমান বাস্তবতাকে বর্ণনা করে। কোনোকিছু বর্ণনা করা হচ্ছে বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রথম কাজ।
একদিক থেকে বলা যায় যে, তত্ত্বের বর্ণনামূলক ক্ষমতাও রয়েছে।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, তত্ত্ব ও গবেষণা পরস্পর গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত । তত্ত্ববিহীন
গবেষণা বিষয়বস্তুর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ দিতে পারে না। কেননা সুষ্ঠু, সংগঠিত, সমন্বিত ও বাস্তবভিত্তিক অনুসন্ধান কেবল
তত্ত্বের আলোকেই সম্ভব। অনুরূপভাবে, তথ্যভিত্তিক গবেষণা তত্ত্ব সৃষ্টি করে, প্রয়োজনে তত্ত্ব সংশোধন করে এবং অকার্যকর
তত্ত্বকে বাতিল করে।