অথবা, গণসংখ্যা নিবেশনের উদাহরণ দেখাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : তথ্যবিশ্বের কোনো একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির মধ্যে ঐ তথ্যবিশ্বের যতগুলো মান থাকবে তার সংখ্যাকে ঐ শ্রেণির গণসংখ্যা বলা হয়। পরিসংখ্যান পদ্ধতিতে এ গণসংখ্যা নিবেশনের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। এ প্রক্রিয়ায় সংগৃহীত তথ্যমালাকে সাজানো গোছানো হয় এবং একটি সারণির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় ।
গণসংখ্যা নিবেশনের প্রস্তুত প্রণালি : পরিসংখ্যানে প্রাথমিক উৎস থেকে সংগৃহীত উপাত্তসমূহ প্রথম অবস্থায় এলোমেলো বা অবিন্যস্তভাবে থাকে। এ ধরনের অবিন্যস্ত উপাত্তকে বিশেষ বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে শ্রেণিবদ্ধ করে সারণি বা তালিকায় উপস্থাপন করা হয়। এরূপ ছকবিশিষ্ট তালিকাকে গণসংখ্যা নিবেশন বলে। গণসংখ্যা নিবেশন প্রস্তুতকালে নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করতে হয়।
১. পরিসর নির্ণয় : অবিন্যস্ত উপাত্ত থেকে গণসংখ্যা নিবেশন প্রস্তুত করার জন্য প্রথমেই প্রদত্ত উপাত্তসমূহের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন সংখ্যামান শনাক্ত করে পরিসর নির্ণয় করতে হবে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সংখ্যামানের পার্থক্যই হলো পরিসর । অর্থাৎ পরিসর = সর্বোচ্চমান – সর্বনিম্নমান ।
২. শ্রেণিসংখ্যা নির্ণয় : গণসংখ্যা নিবেশনে কয়টি শ্রেণি থাকবে এ ব্যাপারে কোনো সর্বসম্মত নিয়ম নেই। তবে শ্রেণিসংখ্যা নির্ধারণে তথ্যের প্রকৃতি, মোট তথ্য সংখ্যা, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্নমানের পার্থক্য ইত্যাদি বিবেচনা করে সাধারণ জ্ঞান ও বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করে শ্রেণিসংখ্যা নির্ধারণ করা হয় । শ্রেণিসংখ্যা নির্ধারণে পরিসংখ্যানবিদগণ মোটামুটিভাবে ধারণা প্রদান করেছেন । তাঁদের মতে, শ্রেণিসংখ্যা ৫ থেকে ২৫টির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা ভালো । শ্রেণিসংখ্যা নির্ণয়ের সূত্র নিম্নরূপ :
পরিসর শ্রেণিসংখ্যা = শ্রেণিব্যাপ্তি বর্তমানে শ্রেণিসংখ্যা নির্ধারণে পরিসংখ্যানবিদ Struges এর সূত্র প্রচলিত রয়েছে । Struges এর সূত্রটি নিম্নরূপ : K = 1 + 3.322 log N এখানে, K = শ্রেণিসংখ্যা N = মোট উপাত্ত ৩. শ্রেণিব্যবধান বা শ্রেণিব্যাপ্তি নির্ধারণ : গণসংখ্যা নিবেশন প্রস্তুতকালে শ্রেণিব্যবধান বা ব্যাপ্তি নির্ধারণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । শ্রেণিব্যবধান বা ব্যাপ্তি সাধারণত ৫/১০/১৫ ইত্যাদি যে কোনো পূর্ণ সংখ্যার মান হতে হবে। শ্রেণিব্যাপ্তি নির্ধারণের দুটি পদ্ধতি রয়েছে। যথা : ক. সাধারণ নিয়ম খ. Struges এর নিয়ম ।
ক. সাধারণ নিয়ম : সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী পরিসরকে ৫ অথবা ২৫ দ্বারা ভাগ করে যে ভাগফল পাওয়া যাবে তার মধ্যবর্তী কোনো পূর্ণসংখ্যাকে শ্রেণিব্যাপ্তি ধরা হয়। ধরা যাক এ পরিসর = ৩৫ এবং শ্রেণিসংখ্যা = ৬ তাহলে ৩৫ + ৬ = ৫.৮৩ অর্থাৎ ৬ হবে শ্রেণিব্যাপ্তি । কেননা ৫ এর পরবর্তী পূর্ণসংখ্যা হলো ৬।
খ. Struges এর নিয়ম: Struges এর নিয়ম অনুযায়ী শ্রেণিব্যাপ্তি নির্ধারণের সূত্রটি নিম্নরূপ :
পরিসরপরিসর শ্রেণিব্যাপ্তি = শ্রেণিসংখ্যা ১ + 3.322 log N
৪. শ্রেণিসীমা নির্ধারণ : শ্রেণিব্যাপ্তি অনুযায়ী প্রতিটি শ্রেণির নিম্নসীমা ও ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত প্রদত্ত তথ্যের সর্বনিম্ন মান বা উক্ত মানের পূর্ববর্তী যে সংখ্যার ডান পার্শ্বে ০ অথবা ৫ থাকে সে সংখ্যা থেকে প্রথম শ্রেণির নিম্নসীমা শুরু করতে হবে এবং প্রদত্ত তথ্যের সর্বোচ্চ সংখ্যামান ঊর্ধ্বসীমায় অন্তর্ভুক্ত না হওয়া পর্যন্ত শ্রেণিসীমা চলতে থাকবে । শ্রেণিসীমা নির্ধারণে দুটি পদ্ধতি রয়েছে । যথা :
ক. অন্তর্ভুক্ত পদ্ধতি (Inclusive Method) এবং
খ. বহির্ভুক্ত পদ্ধতি (Exclusive Method) ।
ক. অন্তর্ভুক্ত পদ্ধতি : যখন কোনো শ্রেণির নিম্নসীমা ও ঊর্ধ্বসীমাকে ঐ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ধরে যে শ্রেণির পরিসীমা নির্ধারণ করা হয় তাকে অন্তর্ভুক্ত পদ্ধতি বলে । উদাহরণ :
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjTTG2ATgOAJfUqUL9sXyGVThx-Lin565RuQ3wG9zX5Ak8lYvNXlPxOLAs_LqIIbHSaxcYbLOZVaNODZxUQeXiwptRlTw7XsgDGAHUOtNTQHqihuMkdgKfdlamRAW9xtEatq9doC8YE_pjsOpafNlAWGlZRBEzdpVXk4fKxYCO4JIPdxZLApcyNkZkbzA/s1225/Document_3.jpg)
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjqo-eo9r9qoq6_QC0OkwctxWNgm390nzzOHNYMawPYPSaFiqCk3XiEAlrcyAqUHCnwsCJuaYg1Dls2PK_KU-xKsdpprjPCuOiHqONpnCQSCWc3j6l3_hLBawKlovN6a_QN7KZAyYM7nu4w5o8se5b3OBIgi6C53nNA164Q2tOyapMG0Y6oIvjIVkStyw/s1792/Document_4.jpg)
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, পরিসংখ্যানে গণসংখ্যা নিবেশন উপর্যুক্ত প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত করা হয়ে থাকে ।