গণমাধ্যমে নারীর উপস্থাপন সম্পর্কে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সুপারিশমালা তুলে ধর।

অথবা, গণমাধ্যমে নারীর উপস্থাপন সম্পর্কে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সুপারিশমালা বর্ণনা
কর।
উত্তরা৷ ভূমিকা :
নারীর অধিকার ও উন্নয়নে যেসকল প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে তার মধ্যে অন্যতম এ প্রধান হলো জাতিসংঘ। জাতিসংঘ নারীদের অধিকার রক্ষার জন্য নানা প্রকার পদক্ষেপ নিয়েছে। যা নারী উন্নয়নে ও তাদের সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ট সহায়ক। গণমাধ্যম ও নারী সম্পর্কিত জাতিসংঘ সুপারিশমালা : জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক নারীবর্ষ উদযাপন বিষয়ক কমিশন গণমাধ্যমে নারীসমাজকে সঠিকভাবে ও সততার সঙ্গে উপস্থাপিত করার ব্যাপারে নিম্নোক্ত সুপারিশ প্রদান করেছে-
১.গণমাধ্যমকে চূড়ান্ত লক্ষ্য হিসেবে শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে সমতা রেখে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে মেয়েদের চাকরি প্রবর্তন করতে হবে। যেসব মেয়েরা নারী সমাজের পরিবর্তিত ভূমিকা সম্পর্কে জ্ঞান ও আগ্রহ রাখেন, গণমাধ্যমে তাঁদের নিয়োগ করার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
২.গণমাধ্যমে সর্বস্তরে মেয়েদের নিয়োগ করতে হবে। আইন অনুযায়ী তাদের পুরুষ কর্মীদের সমান পারিশ্রমিক এবং প্রশিক্ষণ ও পদোন্নতির সুযোগ দিতে হবে।
৩.বার্তার (নিউজ) বর্তমান সংজ্ঞাকে সম্প্রসারিত করে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মেয়েদের তৎপরতার উপর আলোকপাত করতে হবে।
৪.গণমাধ্যমে নারীদের সম্পর্কে আরও বেশি খবর দিতে হবে। বর্তমানে ৯০ শতাংশের কন সংবাদে তারা স্থান পায়।
৫. নারীসমাজের কোন সংবাদকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না, আলাদা করে রাখা হয়। গণমাধ্যমে যে কোন সংবাদকে গুরুত্ব অনুযায়ী বিচার করতে হবে, নারী-পুরুষভেদে নয়। মেয়েদের সবরকম খবর অন্যান্য খবরের সমান সুযোগ ও সততার সাথে একাশ করতে হবে। নারীসমাজের তৎপরতার সংবাদ বেতার-টেলিভিশনের শেষ ৩০ সেকেন্ডে বা সংবাদপত্রের শূন্যস্থান কিংবা শেষ পৃষ্ঠায় স্থান দিলে চলবে না।
৬.মেয়েদের দৈহিক সৌন্দর্যকে ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করা চলবে না। এটি করা হলে নারীসমাজকে হেয় করা হয়, অসম্মান করা হয়।
৭.ব্যক্তিগত বিবরণ, তা নারীরই হোক বা পুরুষের হোক ব্যবহার করা চলবে না। যেমন- নারী বা পুরুষ তা আলাদা করে বলা, বয়স, বৈবাহিক অবস্থা, দৈহিক বর্ণনা, পোশাক পরিচ্ছদ, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক মতবাদ ইত্যাদি।
৮. মহিলাদের তৎপরতা বা সংগঠনকে সমাজের অন্যান্য তৎপরতা বা সংগঠনের সমান মর্যাদা দিতে হবে। মহিলাদের আন্দোলন নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রূপ বা হাসিঠাট্টা করা চলবে না। তাকে অন্য যে কোন নাগরিক অধিকার বিষয়ক আইনের সমান গুরুত্ব দিতে হবে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, উপরের পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত হলে সব গণমাধ্যমের সবাই জেণ্ডার সংবেদনশীল হবে এবং গণমাধ্যমে নারী ও পুরুষের প্রকৃত উপস্থাপন দেখতে পাব। গণমাধ্যমে যা দেখানো হয় তা সমাজে অত্যন্ত শক্তিশালী প্রভাব ফেলে। তাই গণমাধ্যমে নারীর ইতিবাচক ইমেজ তুলে ধরলে তা সমাজেও প্রভাব ফেলবে, মানুষের মনে নারীর সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার পরিবর্তন হবে এবং সমাজও জেন্ডার সংবেদনশীল হবে।