কেবল দুই জনে অন্ধকারের দিকে চাহিয়া রহিলাম। পদতলে গাঢ় কৃষ্ণবর্ণ উন্মত্ত মৃত্যুস্রোত গর্জন করিয়া ছুটিয়া চলিল।”— ব্যাখ্যা কর।

উৎস : আলোচ্য অংশটুকু বাংলা ছোটগল্পের রূপকার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিরচিত ‘একরাত্রি’ শীর্ষক ছোটগল্প থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : প্রাকৃতিক দুর্যোগাক্রান্ত এক ভয়াবহ রাতে নায়ক নায়িকার পাশে দাঁড়িয়ে তখনকার প্রকৃত অবস্থার বর্ণনা প্রসঙ্গে আলোচ্য মন্তব্য করা হয়েছে।
বিশ্লেষণ : ‘একরাত্রি’ গল্পের সুরবালা ছিল নায়কের ছোটবেলার খেলার সাথী। নায়কের অবহেলার কারণে সেই সুরবালা এখন নোয়াখালীর উকিল রামলোচনবাবুর গৃহিণী। ঘটনাক্রমে নায়ককে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের চাকরি নিয়ে ঐ নোয়াখালীতেই অবস্থান করতে হয়। সেখানে রামলোচনের সাথে নায়কের পরিচয় হয় এবং নায়ক মাঝেমধ্যে তাদের বাসভবনে গিয়ে গালগল্প করে। নায়ক মূলত সুরবালার জন্যই ওখানে যাতায়াত করতে থাকে। কিন্তু সুরবালা ভুলক্রমেও তার সামনে আসে না। সে এখন পরস্ত্রী। নায়কের সাথে তার দেখা করা ও কথা বলা অন্যায়। নায়ক সুরবালাকে দেখার জন্য পাগল হয়ে উঠে। এক ঝড়ের রাতে বন্যার জলে চতুর্দিক প্লাবিত হয়ে যায়। সেদিন রামলোচন বাড়িতে ছিলেন না। নায়ক আত্মরক্ষার্থে স্কুল সংলগ্ন পুকুর পাড়ের উঁচু ঢিবির উপর আশ্রয় গ্রহণ করে। তখন প্রলয়কাল। আকাশে তারার আলো ছিল না। পৃথিবীর সমস্ত প্রদীপ নিভে গিয়েছিল। এ সময় ঢিবির বিপরীত দিক থেকে সুরবালাও এখানে আশ্রয়ের জন্য এসে হাজির হলো। কিন্তু কেউ একটা কথাও বলতে পারল না। কেউ কাউকে কুশল প্রশ্নও করল না। কেবল দু’জনে অন্ধকারের দিকে চেয়ে থাকলো। তাদের পায়ের নিচে গাঢ় কৃষ্ণবর্ণ উন্মত্ত মৃত্যুস্রোত গর্জন করে ছুটে চলল। প্রকৃতি তার খেয়ালের ধ্বংসলীলা চালিয়ে যেতে লাগল।
মন্তব্য : যে সুরবালাকে নায়ক অহর্নিশি কামনা করত, দুর্যোগের রাতে হাতের মুঠোয় পেয়েও তাকে একটা কথাও বলতে পারল না। কেবল প্রতীক্ষাই করতে লাগল।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%8f%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%bf-%e0%a6%97%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%aa-%e0%a6%b0%e0%a6%ac%e0%a7%80%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a8/