প্রশ্নের উত্তর

এরূপ “এরূপ চিন্তা নিতান্ত অসঙ্গত এবং অন্যায় তাহা স্বীকার করি, কিন্তু অস্বাভাবিক নহে।”— বুঝিয়ে দাও।

উৎস : উদ্ধৃত অংশটুকু বিরল প্রতিভার অধিকারী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্রেষ্ঠ ছোটগল্প ‘একরাত্রি’ থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : নায়ক তার হৃদয়ে সুরবালার উপস্থিতি নিয়ে বৈধতার প্রশ্নে আত্মপক্ষ সমর্থন করে আলোচ্য উক্তিটি করেছে।
বিশ্লেষণ : মানুষের অনেক চিন্তাভাবনাই সমাজ বাস্তবতার নিরিখে অসংগত হলেও হৃদয়ধর্মের কাছে তা সংগত ও সঠিক বলে পরিগণিত হয়। শৈশবের সুরবালা আজ নায়কের কেউ নয়। সে আজ অন্যের ঘরের ঘরণী। অথচ সুরবালা তার কী না হতে পারতো। সে তার সবচেয়ে অন্তরঙ্গ, সবচেয়ে নিকটবর্তী, তার জীবনের সুখদুঃখভাগিনী হতে পারতো। শুধুমাত্র একটু ভুলের জন্য আজ সুরবালাকে তার দেখা নিষেধ, তার সাথে কথা বলা দোষ, এমনকি তার বিষয়ে চিন্তা করাও পাপ। নায়কের প্রেমিক হৃদয় এ সব মানতে নারাজ। কোথাকার কোন রামলোচন মুখস্ত করা কয়েকটি মন্ত্র পড়ে সুরবালাকে সম্পূর্ণ করেনিজের করেনিয়েছে এটা মানতে নায়কের অবোধ মন সায় দেয় না। রামলোচনের গৃহভিত্তির আড়ালে যে সুরবালা বিরাজ করছে সে রামলোচনের চেয়ে বেশি করে নায়কের, সে-কথা সে কিছুতেই মনের কাছে অস্বীকার করতে পারে না। সমাজ বাস্তবতায় নায়কের এ দাবি হয়তো অযৌক্তিক। তবুও তো হৃদয় রাজ্য বলে কিছু আছে, নায়ক সে রাজ্যের রাজার কাছে তার বিচারের ভার ছেড়ে দিতে চায়। মানুষের মন সংগত অসংগত ভেবে চিন্তা করে না। কোন একটি বিশেষ ভাব এলে সে ব্যক্ত করে মাত্র।
মন্তব্য : নায়ক এখানে বাস্তবতাকে পরিহার করে হৃদয়াবেগের উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।

হ্যান্ডনোট থেকে সংগ্রহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!