এথনোগ্রাফি বলতে কী বুঝ?

অথবা, এথনোগ্রাফির সংজ্ঞা দাও।
অথবা, এথনোগ্রাফি কী?
অথবা, এথনোগ্রাফি কাকে বলে?
উত্তর৷ ভূমিকা :
আদিম মানুষ এবং তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে তথ্যসংগ্রহের জন্য নৃবিজ্ঞানীগণ সর্বপ্রথম এথনোগ্রাফিক অধ্যয়ন বা অনুসন্ধানের সূচনা করেন। ব্রিটিশ সামাজিক নৃবিজ্ঞানী রেডফিল্ড এবং রিভার্স সর্বপ্রথম ক্ষুদ্র সমাজ গবেষণার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে যেয়ে এ পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন। তাঁরা এ পদ্ধতির মাধ্যমে ক্ষুদ্র সমাজের গভীর সমীক্ষার জন্য দীর্ঘদিন গবেষণার ক্ষেত্রে অতিবাহিত করে গবেষণাধীন সমাজের বিশদ এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সংগ্রহ করেন ।
এথনোগ্রাফি : নৃবিজ্ঞানে এ অধ্যয়নের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হওয়ার প্রেক্ষিতে অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানের গবেষণায় ও এখনোগ্রাফিক অনুসন্ধান গুরুত্বের সাথে ব্যবহৃত হচ্ছে। গ্রিক শব্দ’এখনোস’
(Ethonos) এর অর্থ হলো জাতি বা মানুষ এবং ‘আফিইন’ (Graphein) এর অর্থ হলো লিখা। সুতরাং শাব্দিক অর্থে এথনোগ্রাফি বলতে জনগণের সম্পর্কে লিখা বুঝায় । মূলত মানব সমাজ সম্পর্কে বর্ণনামূলক লিখন বুঝাতে এখনোগ্রাফিক শব্দটির ব্যবহার শুরু হয় এবং কালক্রমে মানব সমাজ বা সংস্কৃতির বিজ্ঞানভিত্তিক বিবরণ হিসেবে এটি পরিচিতি পেতে থাকে। সাধারণভাবে বলা যায় যে, নৃবিজ্ঞানীগণ কোনো মানব জাতি বা সংস্কৃতি সম্পর্কে বিশদ বিবরণ তৈরি করতে সরেজমিনে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সূত্রে বা অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণে যে তথ্য বা উপাত্ত সংগ্রহ করেন তাকে এথনোগ্রাফিক পদ্ধতি বলে। এ পদ্ধতির মাধ্যমে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যসংগ্রহের জন্য গবেষককে গবেষণাধীন সমাজ বা এলাকায় দীর্ঘদিন অবস্থান করতে হয়, তাদের ভাষা শিখতে হয় এবং এলাকার মানুষের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক (Rapport building) স্থাপন করতে হয়। এককথায় গবেষককে গবেষণাধীন এলাকার জনগণের জীবনধারা ও সংস্কৃতির সাথে মিশে গিয়ে তাদেরই একজন হয়ে গভীরে অন্তর্দৃষ্টির সাথে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। এথনোগ্রাফিক অনুসন্ধানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণে বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় বলে এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকৃতির।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, এথনোগ্রাফিক অনুসন্ধানে গবেষক যেসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে চান তা পূর্ব থেকেই ঠিক করে নেন এবং সে পরিকল্পনা অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহ করে নিজের নোট বা ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করেন। এথনোগ্রাফিক অনুসন্ধানে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে গবেষক প্রশ্নমালা, সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ঘটনাজরিপ কিংবা পর্যবেক্ষণ প্রভৃতিকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়াও ক্যামেরা ও ভিডিও এর সাহায্যে বিশেষ মুহূর্তের ছবি ধারণ ও রেকর্ড করে থাকেন। এভাবে গবেষক বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে প্রত্যাশিত বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন।