প্রশ্নের উত্তর

এখানে ইটের দেশে তো কেউ নেই, তার দেশের যারা বা আছে তারাও মন হারিয়েছে, শুধু গোঙানো পেট তাদের হা করে রয়েছে অন্ধ চোখে চেয়ে।”— ব্যাখ্যা কর।

উৎস : আলোচ্য অংশটুকু খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বিরচিত ‘নয়নচারা’ শীর্ষক গল্প থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : শহরের নিষ্ঠুর ও হৃদয়হীন প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পর্কে আমুর ধারণা ও মূল্যায়নটিই আলোচ্য উক্তিতে প্রকাশ পেয়েছে।
বিশ্লেষণ : বন্যার করাল গ্রাসে যাদের সবকিছু হারিয়ে গিয়েছে এমন একদল বানভাসি মানুষের সাথে নয়নচারা গ্রামের আমু শহরে এসেছে। শহরে এসে তারা আশ্রয় নিয়েছে খোলা আকাশের নিচে ফুটপাতে। সারাদিন এরা শহরের রাস্তায় রাস্তায় শহুরে মানুষের কাছে হাত পেতে বেড়ায় দু’মুঠো খাবারের জন্য। কিন্তু খাবার জোটে না তাদের। শহরে অসংখ্য মানুষ কিলবিল করে। তাদের অসংখ্য মাথা কালো রঙের সাগর সৃষ্টি করেছে যেন। এমন কালো সাগর আমু দেখেছে ময়ূরাক্ষী নদী তীরের ধানক্ষেতে, যেখানে হাওয়ায় দোলানো ধানক্ষেত বিস্তৃত প্রান্তর জুড়ে বিরাজ করে। কিন্তু এ মানুষের কালো মাথার সাগর আর ধান ক্ষেতের সাগরের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য। মাথা কালো, জমি কালো, মনও কালো। কিন্তু এখানকার মানুষের দেহের সাথে জমির কোন মিল নেই। ময়ূরাক্ষীর হাওয়ার সাথে শহরের আবহাওয়ার তুলনাই চলে না। এখানে অসহ্য রোদ, গাছ নেই, ছায়া নেই, ঘাস নেই। ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে পড়ে; অথচ বিশ্রাম নেওয়ার জন্য শীতল ছায়ার অভাব। এ অভিযোগ জানানোর মতো মানুষও খুঁজে পাওয়া যায় না। এখানকার এ ইটের শহরে তো তেমন কেউ নেই, আমুর সাথে যারা এসেছে তারাও সব হারিয়ে আনমনা হয়ে পড়েছে। তাদের ক্ষুধার্ত পেট হা করে আছে শূন্যের দিকে চেয়ে।

শহরের শুষ্ক পরিবেশ মানুষকে হৃদয়হীন করে ফেলে। গ্রাম থেকে এখানে যারা আসে তারাও মন হারিয়ে ফেলে।

হ্যান্ডনোট থেকে সংগ্রহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!