ইতিহাসের পরিধি আলোচনা কর।
অথবা, ইতিহাসের বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোচনা কর ।
অথবা, ইতিহাসের বিষয়বস্তু সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : ইতিহাসের জন্য মানুষ নয় মানুষের কারণেই ইতিহাসের সৃষ্টি হয়েছে। আর মানুষ ও তার প্রাকৃতিক পরিবেশ যদি ইতিহাসের মূলভিত্তি হয়, তবে ইতিহাসের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা একান্ত প্রয়োজন। মানুষের এ ধারাবাহিক বিবরণই ইতিহাসের আলোচ্য বিষয় বা বিষয়বস্তু।
ইতিহাসের বিষয়বস্তু : ইতিহাসের আলোচ্য বিষয় ব্যাপক ও বিস্তৃত। নিচে ইতিহাসের আলোচ্য বিষয় বা বিষয়বস্তু সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
১. মানুষের উদ্ভব ও বিকাশ : ইতিহাস মানুষের অতীত কার্যাবলির বিবরণ। তাই ইতিহাসের আলোচ্য বিষয় মানুষ। এ মানুষের সৃষ্টির রহস্য, মানুষের উদ্ভব, ক্রমবিকাশ সবকিছুই ইতিহাসের বিষয়বস্তু।
২. সভ্যতার উদ্ভব ও বিকাশ : সৃষ্টির পর মানুষের বসবাসের উপযোগী পৃথিবীতে যুগে যুগে বিভিন্ন সভ্যতার উদ্ভব, বিকাশ, চরমোৎকর্ষ এবং পতন ঘটেছে। ইতিহাস সভ্যতার এ উত্থানপতন, বিকাশ প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করে।
৩. কাল বিভাজন : সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ ও সভ্যতা নিয়ে পৃথিবী টিকে আছে। এর মধ্যে বহু মানবজাতি ও সভ্যতার উত্থানপতন ঘটেছে। এ দীর্ঘ পথপরিক্রমা সময় বা কাল নিয়ে বিভক্ত, যা ইতিহাসে কাল বিভাজন নামে পরিচিত। এ কাল বিভাজন ইতিহাসের আলোচ্য বিষয়।
৪. প্রকৃতি ও পরিবেশ : পৃথিবীতে মানুষ শুধু একাই বসবাস করে না, মানুষের জন্য সৃষ্টিকর্তা প্রকৃতিগত অনেক কিছু তৈরি করেছেন। মানুষ এসব প্রকৃতি ও সৃষ্টি নিয়ে যেভাবে বসবাস করে তা পরিবেশ নামে খ্যাত। এ প্রকৃতি ও পরিবেশ ইতিহাসের আলোচ্য বিষয়।
৫. সামাজিক ক্রমবিস্তার : মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সমাজে মানুষ বসবাস করে নিজেদের প্রয়োজনে এবং সুপ্রাচীন কাল হতেই সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলে। এ সমাজের উৎপত্তি, গঠন, প্রভাব বিস্তার ইত্যাদি ইতিহাস আলোচনা করে।
৬. অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড : মানুষের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় হচ্ছে অর্থ। তাই সুপ্রাচীন কালে মানুষের জীবিকা তথা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কীরূপ ছিল এবং ক্রমবিস্তারের মাধ্যমে মানুষ কীভাবে বর্তমান পর্যায় উন্নীত হয়েছে তাই ইতিহাসের আলোচ্য বিষয়।
৭. ধর্মীয় প্রভাব : সেই সুপ্রাচীন কালে মানুষ কীভাবে ধর্ম নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছে এবং ধর্মের প্রভাব কতটা ছিল, ধর্মের উৎপত্তি, ক্রমবিকাশ, সংগঠন, রীতিনীতি প্রভৃতি নিয়ে ইতিহাস আলোচনা করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মানুষের অতীত সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্ম, সংস্কৃতিসহ সকল কর্মকাণ্ডই ইতিহাসের বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত।