প্রশ্নের উত্তর

আর আজ আমার বিদায়ের দিনে সে বিশ্বাস একেবারে দেউলিয়া হয়ে গেল।”— উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) সাহিত্য, সভা, সংবর্ধনা বিভিন্ন স্থানে ইতিহাস, সমাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর মতামত ব্যক্ত করেছেন। রবীন্দ্রনাথ দেশীয় ও আর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে দূরদর্শী প্রবন্ধ লিখেছেন। ‘কালান্তর’ প্রবন্ধ সংকলনটি তারই প্রমাণবাদী। এখানে তাঁর রাজনৈতিক দার্শনিকতার পরিচয় রয়েছে। ‘কালান্তরে’র একটি অতি তাৎপর্যপূর্ণ প্রবন্ধ হলো ‘সভ্যতার সঙ্কট’ (১৯৪১)। আশি বছর যেদিন কবির পূর্ণ হয়েছে, সেদিন তিনি প্রবন্ধটি লিখেছেন। নিজের আশি বছর জীবনে কবি তাঁর উপলব্ধ চিন্তাধারা প্রকাশ করেছেন এ উক্তির মধ্য দিয়ে।
ইংরেজ জাতি সম্বন্ধে কবি তাঁর পরিবর্তিত ধারণা চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, “আজ আমার বয়স আশি বছর পূর্ণ হলো, আমার জীবন ক্ষেত্রের বিস্তীর্ণতা আজ আমার সম্মুখে প্রসারিত। পূর্বতম দিগন্তে যে জীবন আরম্ভ হয়েছিল তার দৃশ্য অপর প্রান্ত থেকে নিঃসত্ত্ব দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছি এবং অনুভব করতে পারছি যে, আমার জীবনের এবং সমস্ত দেশের মনোবৃত্তির পরিণতি দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে।” প্রাবন্ধিক গভীর বেদনার সাথে উপলব্ধি করেছেন ইংরেজ জাতির ঔদার্যের প্রতি তাঁর যে পূর্ণ বিশ্বাস ছিল বিশ্বে তাদের নিষ্ঠুর আধিপত্যবাদ বিস্তারের কারণে তা ভঙ্গ হয়ে গেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম জীবনে ইংরেজদের মধ্যে যে মানবতা প্রত্যক্ষ করেছিলেন তা শাসক গোষ্ঠীর মধ্যে অনুপস্থিত প্রত্যক্ষ করে গভীর বেদনায় কাতর হয়েছেন। এভাবে মানব-মৈত্রীর পরিচায়ক ইংরেজ জাতির প্রতি তাঁর দীর্ঘদিনের বিশ্বাসে ফাটল ধরে। ফলে ইংরেজদের প্রতি তাঁর আশৈশব লালিত শ্রদ্ধাবোধের অপমৃত্যু ঘটে। তাই তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, “আর আজ আমার বিদায়ের দিনে সে বিশ্বাস একেবারে দেউলিয়া হয়ে গেল।”

হ্যান্ডনোট থেকে সংগ্রহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!