আমার বিচারককে কেহ নিযুক্ত করে নাই। এ মহাবিচারকের দৃষ্টিতে রাজা- প্রজা, ধনী-নির্ধন, সুখী-দুঃখী সকলে সমান।”— ব্যাখ্যা কর।

উৎস : আলোচ্য অংশটুকু খ্যাতনামা প্রাবন্ধিক কাজী নজরুল ইসলামের ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ প্রবন্ধ থেকে নেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গ : এখানে মহাবিচারক অর্থাৎ স্রষ্টার সাম্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গির মাহাত্ম্য প্রসঙ্গে বিচারকের অবস্থান বিচার করা হয়েছে।
বিশ্লেষণ : রাজার বিচার বিভাগে নিয়োজিত আছে পছন্দমতো বিচারক। সে বিচারককে তিনি পছন্দমতো নিয়োগ দিয়েছেন নিজের প্রয়োজন এবং সুবিধার স্বার্থের দিকে লক্ষ রেখে। বিচারের নিজস্ব মতামত প্রতিফলনের সুযোগ সীমিত। তার বিবেকের স্বাধীনতা রাজার আইনের সীমাবদ্ধতায় রুদ্ধ। ফলে বিচারকের দৃষ্টিতে রাজা-প্রজা, ধনী-নির্ধনের প্রভেদ থেকে যায়। কেননা, রাজা এবং ধনীর প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেন না বিচারক। তাদের নির্দেশ তাঁকে মেনে চলতে হয়। ফলে নির্ধন ও দুঃখী প্রজারা তাঁর কাছে সুবিচার পায় না। এ দৃষ্টিকোণ থেকে রাজার কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কবি রাজদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। কেননা, তিনি সাধারণ প্রজা, কাজেই বিচারকের রায় তাঁর পক্ষে যায়নি। তাতে রাজবন্দী কবির দুঃখ নেই। কেননা, তিনি রাজার বিচারকের অধীন নন তিনি মহাবিচারক অর্থাৎ বিশ্বস্রষ্টার অধীন। তাঁর ন্যায়বিচারে কবি অভিযুক্ত নন। কেননা, তিনি সাধারণ মানুষ, সত্য ও ন্যায়ের একনিষ্ঠ অনুসারী। পরাধীন, নির্যাতিত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের পক্ষে তিনি সত্য উচ্চারণ করেছেন। তাদের স্বাধীনতার ও অধিকার আদায়ের কথা দৃঢ়ভাবে উচ্চারণ করেছেন তিনি। অর্থাৎ সে মহাবিচারকের দৃষ্টিভঙ্গির কথাই তাঁর কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে।
মন্তব্য : সত্য ও ন্যায়ের ধারক স্রষ্টার বাণী উচ্চারণের মাধ্যমে কবি রাজার বিচারকের রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ প্রদর্শন করেছেন।