WID, WAD, GAD কী?
অথবা, উয়িড, ওয়াড ও গ্যাড এর বিস্তারিত বিবরণ দাও।
অথবা, উয়িড, ওয়াড ও গ্যাড কী?
বর্ণনা দাও।
অথবা, WID, WAD ও GAD সম্পর্কে
অথবা, WID, WAD ও GAD সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : উন্নয়নের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা বা প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশগ্রহণকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নারী বিষয়ক তিনটি কৌশল ও নীতিমালার উদ্ভব ঘটেছে। যথা : (ক) উন্নয়নে নারী (WID) (খ) নারী ও উন্নয়ন (WAD) এবং (গ) জেন্ডার ও উন্নয়ন (GAD)। নিম্নে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
ক. উন্নয়নে নারী (WID) : উন্নয়নে নারী বা WID মূলত একটি নারীবান্ধব উন্নয়ন মতবাদ। জাতিসংঘ নারীর মর্যাদা বিষয়ক কমিশন এবং মার্কিন উদারনৈতিক নারীবাদীগণ এ পদ্ধতির উদ্ভাবক। তবে এ পদ্ধতি বা নীতিমালার তাত্ত্বিক ভিত্তি রচিত হয় প্রখ্যাত নারীবাদী অর্থনীতিবিদ এস্টার বোসেরাপ (Ester Boserup) কর্তৃক লিখিত ‘Women’s Role in
Economic Development’ বা অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর ভূমিকা গ্রন্থটি প্রকাশের মধ্যদিয়ে। কেননা উক্ত গ্রন্থেই জেন্ডার সচেতন দৃষ্টিকোণ থেকে কৃষি অর্থনীতিতে লিঙ্গভিত্তিক শ্রম বিভাগের বিষয়টি তুলে ধরা হয় এবং তথ্যসহ প্রমাণ করা হয় যে, ৬০ ও ৭০ এর দশকে যে উন্নয়ন ঘটেছে তা পুরুষের তুলনায় নারীর কাছে খুব কমই পৌঁছেছে। পুরুষ ও
নারীর ভিন্ন ভিন্নভাবে উন্নয়নের অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। এমনকি নারীদের অবস্থা অনেক ক্ষেত্রে নিম্নগামী হয়েছে। তাই এসব প্রচলিত ধারণাগুলো বদলে দিয়ে অতীত উন্নয়ন তত্ত্বের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে WID নামক নারী উন্নয়ন নীতিমালা প্রণীত হয়।
খ. নারী ও উন্নয়ন (WAD) : বিংশ শতাব্দীর ৭০ এর দশকের মধ্যবর্তী সময়ে ‘আধুনিকীকরণ তত্ত্ব’ ও উন্নয়নে নারী বা WID নীতিমালার সমালোচনার প্রেক্ষাপটে ‘নারী ও উন্নয়ন’ WAD নীতিমালার উদ্ভব ঘটে। এটি মূলত একটি নব্য মার্কসীয় নারীবাদী ধারণা। অর্থাৎ এ নীতিমালা মাকর্সবাদ দ্বারা প্রভাবিত। নির্ভরশীলতা তত্ত্ব ‘নারী ও উন্নয়ন’ নীতিমালার ভিত্তি। এ নীতিমালা পরনির্ভরশীলতা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র নারীদের আরো বেশি করে সম্পৃক্ত করার কথা বলে। এ নীতিমালা অনুযায়ী নারীরা সব সময়ই উন্নয়ন প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাই নতুন করে নারীদের উন্নয়নে সম্পৃক্ত করার বিষয়টি অযৌক্তিক।
গ. জেন্ডার ও উন্নয়ন (GAD) : ৮০ এর দশকে উন্নয়নে নারী (WID) এবং নারী ও উন্নয়ন (WAD) নীতিমালার সীমাবদ্ধতার কারণে এগুলোর বিকল্প হিসেবে জেন্ডার ও উন্নয়ন বা GAD নামক নীতিমালার উদ্ভব ঘটে। জেন্ডার ও উন্নয়ন নীতিমালা হচ্ছে একমাত্র নীতিমালা, যা নারীর জীবনের সকল দিককে ধারণ করে। উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারী-পুরুষ উভয়ের
ভূমিকাকে এখানে সমভাবে দেখা হয়। এ নীতিমালার তাত্ত্বিকগণ মনে করেন, নারী-পুরুষ সকলের কাজ সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই শ্রমবিভাজন লিঙ্গের ভিত্তিতে না হয়ে সামর্থ্যের ভিত্তিতেই গড়ে উঠবে। তাই নীতিমালা শুধু নারী নয় পাশাপাশি পুরুষকেও উন্নয়নে সম্পৃক্ত করার দাবি জানায়। GAD নীতিমালা নারী- পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য দূর হচ্ছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখে। এটি এমন একটি সমাজ গঠনের কথা বলে,
যেখানে ধর্ম, বর্ণ, শেণি লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলেই সমতার মানদণ্ডে বিবেচিত হবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নারী উন্নয়নের নীতিমালা ও কৌশল হিসেবে উন্নয়নে নারী (WID); নারী ও উন্নয়ন (WAD) এবং জেন্ডার ও উন্নয়ন (GAD) এর উদ্ভব ঘটেছে। নারীর উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় তিনটি নীতিমালারই ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। আর এই তিন ধরনের নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য হলো উন্নয়নের মূল ধারার নারীদের সম্পৃত্ত বা সংযুক্ত করা।