অথবা, ইয়াহিয়া খানের Legal Framework Order ( LFO) কী?
অথবা, আইনগত কাঠামো আদেশ কী? তার বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, আইনগত কাঠামো আদেশের বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখ।
উত্তর ভূমিকা :
১৯৭০ সালের নির্বাচন অবিভক্ত পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রথম ও শেষ সাধারণ নির্বাচন ছিল। এ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথম বাঙালি জাতির উত্থানের প্রথম সিঁড়ি অঙ্কিত হয়। ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি রাজনৈতিক কার্যক্রম চালু করে। তিনি ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া হিসেবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ বেছে নেন। আর নির্বাচন ব্যবস্থা অধিক কার্যকর করার জন্য কতিপয় পদক্ষেপ নেন যা Legal Framework order নামে খ্যাত। জেনারেল ইয়াহিয়ার আইনগত কাঠামো আদেশ : জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা গ্রহণের পর ১৯৭০ সালের ২৮ মার্চ / ড. আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার, পৃষ্ঠা- ৩৬৭/ সাধারণ নির্বাচনের ভিত্তি হিসেবে পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়ন, গ্রহণ এবং মূলনীতি ও নির্বাচনের পদ্ধতি সমন্বিত এক আইনগত কাঠামো আদেশ জারি করেন। এর পূর্বে তিনি ১ মার্চ এক আদেশবলে পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট ভেঙে দিয়ে পূর্বতন প্রদেশগুলোকে পুনরায় আগের অবস্থায় পুনরুজ্জীবিত করা হয়।
Legal framework order : ১৯৭০ সালের ২৮ মার্চ ইয়াহিয়ার Legal framework order এর বিধানসমূহ নিম্নরূপ :
ক. সাধারণ নির্বাচন সংক্রান্ত বিধান :
১. সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার;
২. এক ব্যক্তি এক ভোট, নীতি অনুসৃত;
৩. জাতীয় পরিষদে প্রত্যেক প্রদেশে বা অঙ্গরাষ্ট্রের জন্য জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন সংখ্যা বণ্টন ব্যবস্থা গ্রহণ ।
খ. জাতীয় পরিষদ গঠন সংক্রান্ত নিয়মাবলি :
৩১৩ জন সদস্য নিয়ে জাতীয় পরিষদ গঠিত হবে।
১.জাতীয় পরিষদের ৩১৩টি আসনের মধ্যে ৩০০টি সাধারণ আসন ও ১৩টি মহিলা আসন সংরক্ষিত থাকবে।
২.সাধারণ আসনের সদস্যগণ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবে।
৩. প্রত্যেক প্রদেশের জন্য একটি করে প্রাদেশিক পরিষদ গঠিত হবে।
ঘ. সংবিধান প্রণয়ন সংক্রান্ত বিধান :
১. পাকিস্তান হবে একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র।
২. দেশে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত থাকবে।
৩. প্রত্যেক প্রদেশ বা অঙ্গরাজ্যের জন্য সর্বাধিক স্বায়ত্তশাসন, কেন্দ্রের হাতে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা এবং দেশের স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা।
৪. নির্বাচিত প্রতিনিধিবৃন্দ কর্তৃক সংবিধান প্রণয়নের নির্ধারিত সময়সীমা ১২০ দিন ধার্য। নির্ধারিত সময়সীমা সংবিধান প্রণয়নে ব্যর্থ হলে প্রেসিডেন্ট কর্তৃক জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেয়া এবং নতুন সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন।
৫. জাতীয় পরিষদের প্রতিনিধিবৃন্দ কর্তৃক প্রণীত সংবিধান রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদিত হওয়া আবশ্যকীয় হবে।
৬. জাতীয় পরিষদ কর্তৃক প্রণীত শাসনতান্ত্রিক বিল প্রেসিডেন্টের অনুমোদন ছাড়া সংবিধানে রূপ নেবে না।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঘোষিত আইনগত কাঠামো আদেশ স্পষ্টতই প্রস্তাবিত জাতীয় পরিষদকে সার্বভৌম ক্ষমতা প্রদান করেনি। চূড়ান্ত ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতেই ন্যস্ত ছিল। কেননা তিনি জাতীয় পরিষদের গৃহীত সংবিধান বাতিল করার ক্ষমতা রাখতেন। কিন্তু তিনি সংযোজন করেন, জনগণ বা প্রতিনিধিদের ক্ষমতা খর্ব করার কোন ইচ্ছা নেই। তাই এ নির্বাচনে সকল দল অংশগ্রহণ করেছিল। ফলে সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছিল।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b7%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%a0-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%b6%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%a8/
admin

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!