৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী ছিল?
অথবা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের লক্ষ্য কী ছিল?
অথবা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর৷ ভূমিকা : পূর্ব পাকিস্তানে যে সকল গণআন্দোলন হয়েছে তার মধ্যে ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনকেই কেবল গণঅভ্যুত্থান রূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ আন্দোলন সমগ্র বাঙালি কতৃক পরিচালিত ও তাদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে হয়েছিল। ১৯৬৯ সালে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলিই ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি তৈরি করেছে। এ আন্দোলন বা গণঅভ্যুত্থান কতকগুলো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নিয়ে গড়ে উঠেছিল, যা স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাথমিক স্তর বলা যেতে পারে।
‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের পিছনে রয়েছে ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তার প্রশ্ন, এর সাথে যুক্ত হয়েছে ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন (১৯৬৬),
আগরতলা মামলা (১৯৬৮), ১৯৬৯ সালে ছাত্রদের ১১ দফা দাবি প্রভৃতি। ন্যায়সংগত দাবি, ন্যায্য অধিকার যখন উপেক্ষিত হয় তখন জনমনে তৈরি হয় ক্ষোভ। তৈরি হয় বঞ্চনা থেকে সৃষ্ট সচেতনতা, সোচ্চার হয় প্রতিবাদী কণ্ঠ, জেগে উঠে জনগণ। ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এর মাধ্যমে আইয়ুব খানের ষড়যন্ত্র ধূলিসাৎ হয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এ আন্দোলন বা অভ্যুত্থানে নিম্নোক্ত লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কাজ করেছে-
১. গণতন্ত্রের আদর্শকে বাস্তবায়ন করা,
২. প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন অর্জন করা,
৩. সকল প্রকার বৈষম্যের অবসান ঘটানো,
৪.গণবিরোধী অশুভ শক্তির মূল উৎপাটন করা,
৫.সামরিক কর্তৃত্বে সমতা আনয়ন,
৬. আর্থসামাজিক উন্নয়নে সমতা রক্ষা,
৭.প্রাদেশিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা,
৮.অর্থনৈতিক কল্যাণের দায়িত্ব কেন্দ্রের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়া,
৯. সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ,
১০. প্রকৃত যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার গঠন করা,
১১. শিল্প ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা,
১২. ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার ও আটকদের মুক্তি প্রভৃতি। উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের কাছে আইয়ুব-মোনায়েম চক্রের সকল ষড়যন্ত্র বাতাসে মিলিয়ে গেল। পাকিস্তান সরকার সাধারণ নির্বাচনের কথা চিন্তা করতে লাগল, মন্ত্রিপরিষদ গঠন, সংবিধান রচনা ও সংশোধন, প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন, যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন, পূর্ব পাকিস্তানের দাবিদাওয়া মেনে নেওয়া প্রভৃতি উদ্যোগ গ্রহণ করা হলো। এভাবে বিদায় হয় আইয়ুবের শাসনকাল ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শোষণ মুক্তির আকাঙ্ক্ষা, সংস্কৃতি রক্ষার প্রচেষ্টা, অর্থাৎ এ স্বাধীনতা অর্জনের বীজমন্ত্র। আন্দোলন থেকেই পরবর্তীতে মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। আমরা উদ্বুদ্ধ হয়েছি মুক্তিযুদ্ধে। পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ।