
ডিগ্রী অনার্স মাস্টার্স পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে পেতে Whatsapp এ ম্যাসেজ করুন। Whatsapp 01979786079
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা উল্লেখ কর।
admin
- 0
অথবা, ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের ইশতেহার তুলে ধর।
উত্তর৷ ভূমিকা : ১৯৪৭ সালে বাঙালিরা ব্রিটিশদের কবল থেকে মুক্ত হন বটে কিন্তু পরে বাঙালিরা আবার পশ্চিমা শাসকচক্রের খপ্পরে পড়ে যান। প্রথমে পশ্চিমা শাসকচক্র আঘাত হানে বাঙালির ভাষা সংস্কৃতির উপর। কিন্তু এতে বাঙালিরা জয়যুক্ত হন। পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন ১৯৫১ সালে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী অনেক ধাপ্পাবাজি করে ১৯৫৩ সালের ১ আগস্ট তৎকালীন পূর্ববাংলার মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিন ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে নির্বাচনের ঘোষণা দেন। ফলে ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানের কয়েকটি রাজনৈতিক দল একত্রিত হন ‘যুক্তফ্রন্ট’ নাম নিয়ে। এ যুক্তফ্রন্ট গঠন করার উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম লীগকে পরাজিত করার জন্য।
১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের পটভূমি : ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের উত্থাপক শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক মুসলিম লীগ থেকে বের হয়ে এসে ‘কৃষক শ্রমিক পার্টি’ নামে একটি দলে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের অবদান ছিল সর্বাধিক। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অবদান ছিল সর্বাধিক। এ নির্বাচনের পর অগণতান্ত্রিক উপায়ে নাজিম উদ্দিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন। এ অন্যায়মূলক ঘটনার প্রতিবাদ করে ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম হয়। ফলে বাঙালিদের আন্দোলনের ক্ষেত্রে অগ্রসর হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়। অন্যদিকে, ভাষা আন্দোলনের প্রেরণা বাঙালিদের মধ্যে নতুন আশা-আকাঙ্ক্ষার জন্ম দেয়। তাই ১৯৫৩ সালের ১ আগস্ট নির্বাচনের কথা ঘোষিত হলে আওয়ামী লীগ, কৃষক শ্রমিক দল, নেজামে ইসলাম প্রভৃতি ঐকমত্যে এসে যুক্তফ্রন্ট নামে একটি জোট গঠন করেন। এ জোটের প্রতীক ছিল নৌকা। নির্বাচনের প্রাক্কালে যুক্তফ্রন্ট ২১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ একুশ দফা হলো :
১. বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হবে।
২. বিনা খেসারতে জমিদারি প্রথা ও খাজনা আদায়কারী মধ্যস্বত্ব উচ্ছেদ করে ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে উদ্বৃত্ত জমি বণ্টনের ব্যবস্থা করা হবে। উচ্চহারের খাজনা ন্যায়সংগতভাবে হ্রাস ও সার্টিফিকেট জারি করে খাজনা আদায় করার প্রথা রহিত করা হবে।
৩. পাট ব্যবসায় জাতীয়করণ ও পাটের ন্যায্যমূল্য প্রদান করা হবে। মুসলিম লীগ মন্ত্রিসভার শাসনামলে পাট কেলেঙ্কারি তদন্ত ও অপরাধীদের শাস্তি প্রদান করা হবে।
৪. সমবায় কৃষি পদ্ধতির প্রবর্তন এবং সরকারি সাহায্যে কুটিরশিল্পের উন্নতি সাধন করা হবে।
৫. পূর্ব বাংলাকে লবণের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হবে। মুসলিম লীগ শাসনামলে লবণ কেলেঙ্কারি তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদান করা হবে।
৬. অবিলম্বে বাস্তুহারাদের পুনর্বাসন করা হবে।
৭. সেচ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও দুর্ভিক্ষ রোধ করা হবে।
৮. পূর্ব বাংলাকে শিল্পায়িত করা এবং শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
৯. অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন ও শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করা হবে।
১০. সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের ব্যবধান দূর করা হবে এবং বাংলা ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করা হবে।
১১. বিশ্ববিদ্যালয়সংক্রান্ত সকল কালাকানুন বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হবে।
১২. প্রশাসনিক ব্যয় সংকোচন ও কর্মচারীদের বেতনের সামঞ্জস্য বিধান করা হবে।
১৩. ঘুস, দুর্নীতি বন্ধ করা, সম্পত্তির হিসাব গ্রহণ করা এবং ১৯৪০ সাল থেকে অর্জিত অবৈধ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে।
১৪. সকল নিরাপত্তা বন্দিকে মুক্তিদান, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধান করা হবে।
১৫. শাসন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করা হবে।
১৬. বর্ধমান
হাউসকে (বর্তমানে বাংলা একাডেমি) আপাতত ছাত্রাবাস এবং পরে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণাগার করা হবে।
১৭. বাংলা ভাষার জন্য শহিদদের সম্মানে শহিদমিনার নির্মাণ করা হবে।
১৮. একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস এবং সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করা হবে।
১৯. লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী পূর্ব বাংলাকে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন প্রদান, পূর্ব বাংলায় নৌবাহিনীর সদরদপ্তর স্থাপন, অস্ত্র কারখানা নির্মাণ এবং আনসার বাহিনীকে মিলিশিয়া হিসেবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা হবে।
২০. যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার দ্বারা আইনসভার আয়ু বর্ধিত করা হবে না। সাধারণ নির্বাচনের ছয়মাস পূর্বেই মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করবে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে।
২১. আইনসভার শূন্যপদ তিন মাসের মধ্যে পূরণ করা হবে এবং পরপর তিনটি উপনির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থীরা পরাজিত হলে মন্ত্রিসভা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পাকিস্তানের ইতিহাসে ১৯৫৪ সালে নির্বাচন ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সুস্পষ্ট ব্যবধান লক্ষ করা যায়। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পূর্ব পাকিস্তানের দাবিদাওয়া ও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিছবি পরিলক্ষিত হয় যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে।