• March 28, 2023

১৯৫২ পর্যন্ত পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের অনুসৃত অর্থনৈতিক নীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধর।

অথবা, ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের অনুসৃত বৈষম্য নীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধর।
অথবা, ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে যে অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি হয় তা আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
ব্রিটিশ শাসনাধীন থেকে ১৯৪৮ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে। পাকিস্তান দুটি অংশে বিভক্ত ছিল। স্বভাবতই স্বাধীনতার সূচনালগ্ন থেকেই পাকিস্তান প্রশাসনে অবাঙালি মুসলমানদের একচেটিয়া আধিপত্য কায়েম হয়। ফলে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানকে অর্থনৈতিকভাবে শোষণ করা অব্যাহত রাখে। পাকিস্তান আমলে ব্রিটেন আমেরিকার অনেক নিরপেক্ষ অর্থনীতিবিদ এজন্য বলেছেন যে, “The economic development of East Pakistan was sadly neglected and that something ought to be done about it.”
১৯৫২ পর্যন্ত পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক নীতির বিভিন্ন দিক : নিচে পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক নীতির বা বৈষম্যের বিভিন্ন দিক আলোচনা করা হলো : পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের মাথাপিছু আয় এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য ১৯৫১-৫২ সালেই স্পষ্ট হয় এবং তা পরবর্তী বছরগুলোতে ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় থেকেই পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের চেয়ে অধিকমাত্রায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি লাভ করতে থাকে। ফলে দুই অংশের মধ্যে বৈষম্যও বাড়তে থাকে। ১৯৪৮-৪৯ আর্থিক বছরে পাকিস্তানের জাতীয় আয়ের ৫৭-৫৯ ভাগ অর্জিত হয় পূর্ব পাকিস্তান থেকে। সে বছর পাকিস্তানের মোট রপ্তানি আয়ের ৬৮% আয় আসে পাট খাত থেকে। পূর্ব পাকিস্তানে উৎপাদিত চা, চামড়া, রেশম প্রভৃতি থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। এ প্রদেশের বনজ সম্পদ যেমন- বাঁশ ও কাঠ, কাগজ ও নিউজপ্রিন্ট তৈরিতে অবদান রাখে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় পাকিস্তানের উভয় অংশ শিল্প-কলকারখানার দিকে প্রায় সমান অবস্থান ছিল (সারণি- ৬ দ্রষ্টব্য)। পশ্চিম পাকিস্তান পশম, সিমেন্ট, চিনি শিল্প এবং যোগাযোগ অবকাঠামো ক্ষেত্রে অগ্রসর থাকলেও পূর্ব পাকিস্তান পাট, চা, চামড়া, সুতাকল, রেশম, তামাক প্রভৃতি।

এভাবে দেখা যায় যে, ১৯৪৭–৫২ সময়কালে দুই প্রদেশের মধ্যে ব্যাপক অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি হয়। মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে এ বৈষম্য ১৯৫১-৫২ সালে যেখানে ছিল ১৮%, ১৯৫৪-৫৫ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ২৪%।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে আমরা বলতে পারি যে, ১৯৫২ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক নীতির প্রধান দিক ছিল বৈষম্য। এর কারণে পূর্ব বাংলার জনগণকে দরিদ্রক্লিষ্ট জীবনযাপন করতে হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তারা এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তুলতে বাধ্য হয়। যে সংগ্রামের শেষ পরিণতি হিসেবে
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!