“হয়তো তোমাকে চিনি, চিনি ঐ চিত্রিত তনুকা, বিচিত্র তুলিতে আঁকা বর্ণ সুকুমার।”— ব্যাখ্যা কর।
উৎস : বক্ষ্যমাণ অংশটুকু ইসলামি রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমদ রচিত ‘ডাহুক’ কবিতা থেকে নেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গ : কবি এখানে ডাহুকের অনুষঙ্গে বস্তুজগতকে চিনলেও অবস্তুগত জগৎ সম্পর্কে কবির অজ্ঞতার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
বিশ্লেষণ : ডাহুক গ্রামবাংলার একটি নিভৃতচারী পাখি। সদাচঞ্চল এ পাখিটি লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতেই ভালোবাসে। বিশেষ প্রজাতির এ পাখিটি দেখতেও খুব মনোহর। সৌন্দর্যের জন্য তার খ্যাতি আছে। ডাহুক কবির পরিচিত একটি পাখি। স্তব্ধ রাতে হৃদয় বিদীর্ণ করে ডেকে চলে ডাহুক। কবি একা রাত জেগে শুনছেন সে সুর কবির চির পরিচিত জগৎ ডাহুকের সুর মদিরায় অচেনা মনে হয়। ইসলামি ঐতিহ্যের কবি ফররুখ আহমদ তাঁর অর্ন্তলোকে যা দেখেন সেখানে শুধুই শূন্য। কবি নিজের শারীরিক সত্তারই কেবল প্রাধান্য দিয়েছেন। পরমসত্তাকে কবি চিনতে পারেননি। পরম স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভের জন্য যে একাগ্রতা এবং একনিষ্ঠতা প্রয়োজন তাও কবির ভিতর অনুপস্থিত। ডাহুককে তাই কবি দেখেছেন প্রেম ও জীবন বিনির্মাণের প্রতীক হিসেবে। কবির ভাবলিপ্ত মনে ডাহুক আজ শুধু বর্ণিল একটি পাখি মাত্র নয়- মুক্তির প্রতীক। এভাবেই ডাহুক কবির চেতনায় চেনা অচেনা অশরীরী এক মহানসত্তা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
মন্তব্য: আমাদের চারপাশের এ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতকে চিনলেও আমরা অতীন্দ্রিয় জগতকে একেবারেই বুঝতে পারি নি।