General Knowledge

সৌত্রান্তিক ও বৈভাষিক সম্প্রদায়ের পার্থক্য সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, বৌদ্ধ দর্শনে সৌত্রান্তিক ও বৈভাষিকদের পার্থক্য সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, সৌত্রান্তিক ও বৈভাষিক দার্শনিক সম্প্রদায়ের মূল বিতর্কের বিষয়গুলো উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
গৌতম বুদ্ধের বাণী ও উপদেশের উপর ভিত্তি করে যে মতবাদ গড়ে উঠেছে সে মতবাদই বৌদ্ধ দর্শন। বুদ্ধদেবের অনুগামীর সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এবং জগৎ ও জীবন, ধর্ম ও দর্শনকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যেসব বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের আবির্ভাব হয়েছে তার মধ্যে সৌত্রান্তিক ও বৈভাষিক সম্প্রদায় অন্যতম।
সৌত্রান্তিক ও বৈভাষিকদের পার্থক্য : জগৎ ও জীবন সম্পর্কিত সৌত্রান্তিক ও বৈভাষিক সম্প্রদায়ের মত পর্যালোচনা করলে এ দুই সম্প্রদায়ের মতবাদের মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় :
১. প্রামাণ্য গ্রন্থ : সৌত্রান্তিক সম্প্রদায় তক্ষশীলার কুমারলাতের ‘সুত্ত-পিটক’কে প্রামাণ্য গ্রন্থ বলে স্বীকার করেন। অন্যদিকে বৈভাষিকরা সম্রাট কনিষ্কের রাজত্বকালে রচিত ‘অভিধম্ম’ গ্রন্থের ‘বিভাষা’ নামক ভাষ্যটিকে প্রামাণ্য বলে মনে করে।
২. বাহ্যবস্তুর অস্তিত্ব : সৌত্রান্তিক মতে, বাহ্যবস্তু অস্তিত্বশীল তবে তা ক্ষণস্থায়ী। তাদের মতে, বাহ্যবস্তু মনে সংবেদন সৃষ্টি করেই বিলুপ্ত হয়। কিন্তু বৈভাষিকরাবাহ্যবস্তুর বিলুপ্তির বিষয়টি স্বীকার করেন না।
৩. জ্ঞানের উদ্ভব : সৌত্রান্তিক সম্প্রদায়ের মতে, বাহ্যবস্তু মনে যে সংবেদনের সৃষ্টি করে তা থেকে জ্ঞান হয়। অন্যদিকে, বৈভাষিকরা মনে করেন, যখন সাক্ষাৎভাবে বস্তুকে প্রত্যক্ষ করা যায়, তখনই তার জ্ঞান হয়।
৪. অস্তিত্বের ভিত্তি : সৌত্রান্তিকদের মতে, বাহ্যবস্তুর অস্তিত্ব প্রত্যক্ষণলব্ধ নয়, অনুমানসিদ্ধ। বাহ্যবস্তুর সাথে যখন আমাদের ইন্দ্রিয়ের সংযোগ ঘটে তখন বস্তু আমাদের মনে কতকগুলো ধারণার সৃষ্টি করে। আর এ ধারণা থেকেই আমরা বস্তুর অস্তিত্ব অনুমান করি। কিন্তু বৈভায়িকদের মতে, বাহ্যবস্তুর অস্তিত্ব অনুমানসিদ্ধ নয়।
৫. বস্তুর গুণাগুণ : সৌত্রান্তিকরা মনে করেন, ইন্দ্রিয়ের দ্বারা বস্তুর গুণাগুণ সম্পর্কে আমরা যেসব প্রাথমিক তথ্য- উপাত্ত পাই, আমাদের মন কিংবা বুদ্ধি সেসব প্রাথমিক তথ্য দ্বারা বস্তুর বাহ্য অস্তিত্ব অনুমান করে। অন্যদিকে বৈভাষিকদের মতে, বাহ্যবস্তু আমাদের প্রত্যক্ষীভূত হলেই আমরা সাথে সাথে তার গুণ জানতে পারি।
৬. সাক্ষাৎ প্রত্যক্ষ : বৈভাষিকদের মতে, বাহ্যবস্তুর অস্তিত্ব অনুমান করাও সম্ভব নয় যদি কোন না কোন সময়ে বাহ্যবস্তুকে সাক্ষাৎভাবে প্রত্যক্ষ করা না হয়। কিন্তু সৌত্রান্তিকরা মনে করেন বাহ্যবস্তুর অস্তিত্ব মননির্ভর।
৭. আপেক্ষিক কার্যকারণ : বৈভাষিকদের মতে, বাহ্যবস্তু মাত্রই আপেক্ষিক কার্যকারণ নিয়মের অধীন। একটি উপাদানকে আশ্রয় করে অপর একটি প্রত্যয়ের সৃষ্টি হয়। এই প্রত্যয় না ঘটলে কোন নির্দিষ্ট কার্য সৃষ্টি হতে পারে না। কিন্তু সৌত্রান্তিকরা আপেক্ষিক কার্যকারণকে স্বীকার করেন নি।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, সৌত্রান্তিক এবং বৈভাষিক সম্প্রদায়ের মতবাদের মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকলেও তাদের মতবাদের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। বাহ্যবস্তুর অস্তিত্ব সম্পর্কে তারা যেসব ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন তা সমগ্র ভারতীয় দার্শনিক চিন্তাধারায় এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!