সুফিবাদ ও গোঁড়া মুসলমানদের মধ্যে পার্থক্য লেখ।

অথবা, সুফিবাদ ও রক্ষণশীল মুসলমানদের মধ্যে পার্থক্য লেখ।
অথবা, সুফিবাদ ও গোড়া মুসলমানদের মধ্যে বৈসাদৃশ্য সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, সুফিবাদ ও গোড়া মুসলমানদের মধ্যে পার্থক্য কী?
অথবা, সুফিবাদ ও রক্ষণশীল মুসলমানদের মধ্যে বৈসাদৃশ্যসমূহ সংক্ষেপে তুলে ধর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
ইসলাম মানবজাতির জন্য আল্লাহ্ প্রদত্ত এক পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এটি এমন ধৰ্ম, যা পার্থিব ও অপার্থিব, লৌকিক ও অলৌকিক জীবনের মধ্যে সেতুবন্ধন করে। মানুষের পার্থিব লোকের মূল্যবোধকে অসীম লোকে উন্নীত করে। পার্থিব ও লৌকিক জীবন অসীমলোকে উন্নীত করার সাধনাকেই সংক্ষেপে সুফিবাদ বলা যায়।
সুফিবাদ ও গোঁড়া মুসলমানদের মধ্যে পার্থক্য : সুফিবাদ ও গোঁড়া মুসলমানদের মধ্যে কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়, যা নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. সুফিসাধকগণ আকলের উপর যতটা গুরুত্ব দেন তার চাইতে বেশি গুরুত্ব দেন নশিফ ও কাশমের উপর। অন্যদিকে গোঁড়া মুসলমানরা নফলের উপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করে; আকলকে অল্প গুরুত্ব দেয় এবং কাশকের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করে।
৩.গোঁড়া মুসলমানরা কলেমা তাইয়্যেবা বলতে বুঝেন, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহা বা উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (স) তার প্রেরিত রাসূল। অন্যদিকে সুফিগণ এ অর্থ অস্বীকার করেন। তাদের মতে, এ কলেমার অর্থ
হলো আল্লাহ্ ব্যতীত কোন সত্তা নেই। গোঁড়া মুসলমানরা কুরআনের শাব্দিক অর্থের উপর গুরুত্বারোপ করে থাকেন। অন্যদিকে সুফিগণ কুরআনের।আয়াতসমূহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ তাৎপর্যের কথা উল্লেখ করেন এবং কুরআনের অভ্যন্তরীণ অর্থই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বলে থাকেন।
৪. গোঁড়া মুসলমানরা আল্লাহর ভয়ে ইবাদত বন্দেগী করেন। অন্যদিকে সুফিরা আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য ইবাদত বন্দেগী করেন। স্বর্গ বা দোজখের ভয় তাদের বিচলিত করতে পারে না। গোঁড়া মুসলমানরা ইবাদত করেন কর্তব্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে বেহেশতের লোভে। অন্যদিকে সুফিরা ইবাদত করেন আল্লাহর প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল্লাহকে পাওয়ার আশায়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুফিবাদ ও গোঁড়া মুসলমানদের মধ্যে পার্থক্য এটাই প্রমাণিত হয় যে, এ পার্থক্য প্রকৃতপক্ষে বাতেনী দিকের বিশ্বাস-অবিশ্বাস নিয়েই বর্তমান। সুফিরা জাহেরী ও বাতেনী দিকের সমন্বয়পন্থি; কিন্তু গোঁড়া মুসলমানরা শুধু জাহেরী দিকের প্রবক্তা। সুতরা উভয়ের গুরুত্বকে মুসলিম দর্শনে অস্বীকার করা যায় না।