অথবা, সাম্প্ৰতিক বাংলাদেশের বিবাহ ব্যবস্থার পরিবর্তনের ধারা বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে বিবাহ ব্যবস্থার পরিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের বিবাহ প্রথা সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
পরিবার গড়ার জন্য বিবাহ হচ্ছে একটি মৌলিক বিষয়। বিবাহের মাধ্যমে নারী-পুরুষের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। পরিবার গ্রামীণ সমাজের কেন্দ্র। পরিবার কে ঘিরেই গ্রামীণ সমাজ আবর্তিত হয়। বর্তমানে
শিল্পবিপ্লব, কৃষিবিপ্লব, শিল্পায়ন নগরায়ণ ও আধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি আবিষ্কারের ফলে বিবাহ ও পরিবার প্রথায় ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। সাম্প্রতিক বাংলাদেশের পরিবার ও বিবাহ প্রথায় এর প্রভাব পড়ছে।
বাংলাদেশের বিবাহ ব্যবস্থার পরিবর্তনের ধারা : বাংলাদেশের গ্রাম সমাজে প্রধানত হিন্দু ও মুসলমান এই দুই সম্প্রদায়ের লোক বাস করে। উভয় সমাজের বিবাহ রীতি কিছুটা আলাদা নিম্নে তা আলোচনা করা হলো :
মুসলমান রীতি : ইসলাম ধর্মের সমাজে বহুবিবাহ প্রথা যেমন- একজন পুরুষ একাধিক বিবাহ করে থাকে। গ্রাম সমাজে এখনো বর ও কনের মতামতের উপর নির্ভর করে শুভকার্য সুসম্পন্ন হয়। তবে আগের দিনে বিয়ের প্রস্তাব পাত্র পাত্রী দেখা, আদর আপ্যায়ন বিয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে যতসব আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হতো তা কিছুটা বিলুপ্ত হয়েছে। আগের দিনে বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত পাত্রী পাত্র পক্ষের দেয়া গ্রহ ও কাপড় পরতো না। এখন পাত্রীরা গায়ে হলদের অনুষ্ঠানের পাঠানো কাপড় পরে এবং কসমেটিকস্ ব্যবহার করে।
ইসলাম ধর্মের বিবাহ রীর্তি তাৎপর্য : ইসলাম ধর্মের বিবাহ সম্পর্কে বলা হয়েছে, “আল্লাহ তায়ালা তাহার সৃষ্ট মানব জাতির মধ্যে প্রেম প্রীতি প্রদান করিয়া যে অসীম অনুকম্পা প্রদর্শন করিয়াছেন, তাহার মূলে মানবসমাজে নর-নারীর বিবাহ প্রথা। আল্লাহতায়ালা বলিয়াছেন, অর্থাৎ, আমি তোমাদিগকে জোড়া জোড়া সৃষ্টি করিয়াছি।”
হিন্দুরীতি : সাধারণত পাত্রপাত্রীর অভিভাবকবৃন্দ নিজেরাই অথবা ঘটক বা মধ্যস্থতা রক্ষাকারী ব্যক্তি সাহায্যে কথাবার্তা এবং চুক্তি সম্পাদনে করে। তবে পাত্রপাত্রী মতামতের গুরুত্ব দেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামীণ সমাজে অসমবর্ণ বিবাহ ঘটনা এখনো সীমিত। ১৯৫৫ সালে হিন্দু বিবাহ আইন পরিবর্তনের ফলে পরিবারে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটনা লক্ষণীয়। প্রাচীন পারিবারিক মর্যাদার চেয়ে এখন ছেলে মেয়ে রিবাহের সময় পাত্রপাত্রী নির্বাচনে পিতামাতার, শিক্ষা, অর্থনৈতিক পেশা ও সৌন্দর্য ইত্যাদির উপর গুরুত্ব দেন। অর্থ, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি বলয় বৃদ্ধিকরণে কিছু পিতামাতা বিশেষ বিশেষ পরিবারে বিবাহ দেন।
হিন্দু বিবাহ রীতি তাৎপর্য : হিন্দুধর্মে বিবাহের ত্রিবিধ উদ্দেশ্যের কথায় বলা হয়েছে। যথা : ধর্ম, প্রজা এবং রাত। সুতরাং বিবাহের উদ্দেশ্যের মধ্যে ধর্মই প্রধান। হিন্দুশাস্ত্রের নির্দেশ হলো বিবাহের পর স্বামীসহ ধর্মিনীর সহযোগে ধর্মাচরণ ও গার্হস্থ্য ধর্ম পালন করবে। এ প্রসঙ্গে মহাত্মা গান্ধী বলেন, “বিবাহ হচ্ছে ধর্মকে রক্ষাকারী বেষ্টনি। এই বেষ্টনি ভেঙে গেলেই ধর্ম টুকরো হয়ে যাবে। ধর্মের মূল হচ্ছে সংযম এবং বিবাহ সংযম ব্যতীত অন্য কিছু নয়।” বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে অদ্যাবধি চিরকুমার বা চিরকুমারী সংখ্যা অতিশয় নগণ্য। এতে বুঝা যায় বয়স্ক পুরুষ ও মহিলা সবাই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। পূর্বের বাল্যবিবাহ প্রথা আজকাল নিয়মের ব্যতিক্রম হিসেবে টিকে আছে। গ্রামে অল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত কৃষক পরিবারের গড় বিবাহের বয়স ২০ বছর এবং মেয়েদের বয়স ১৫ বছর । গ্রামাঞ্চলে প্রধানত অর্থনৈতিক কারণে যৌতুক প্রথা উদ্ভব ও প্রসারের কারণে অনেক পিতামাতা তাদের মেয়ে সন্তান ের বিবাহ দিতে বেগ পাচ্ছে। তবে আজকাল কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। বর পক্ষ এমন পাত্রী খুঁজছে যে পাত্রী চাকরী করছে বা চাকরী করার মতো যোগ্যতা অর্জন করছে। ইদানীং গ্রামীণ সমাজে বহুস্ত্রী গ্রহণ প্রথা অনেক কমে গিয়েছে। এর কারণ শিক্ষার প্রসার ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি। আধুনিক শিক্ষার আলো বাংলাদেশের গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে গেছে। কাজেই হিন্দু ও মুসলমান উভয় যোগ্য পাত্রী দেখলে এসব দিক আর তেমন লক্ষ্য করা হচ্ছে না। বিবাহবিচ্ছেদ ক্ষেত্রেও পরিবর্তন সুস্পষ্ট। আমাদের গ্রাম সমাজে পূর্বের তুলনায় বিবাহবিচ্ছেদ স্বামী স্ত্রী পৃথকাবাস বৃদ্ধি পেয়েছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বর্তমান সভ্যসমাজে বিবাহ ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এবং সমাজজীবনে নানান দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। সুতরাং বিবাহের ধারা সামাজিক জীবনে গুরত্ব অত্যধিক।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%aa%e0%a6%9e%e0%a7%8d%e0%a6%9a%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%aa%e0%a7%8d/
admin

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!