সামাজিক সমস্যার শ্রেণিবিভাগ কর।
অথবা, সামাজিক সমস্যার প্রকারভেদ আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিক সমস্যা কত প্রকার ও কী কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : প্রতিটি সমাজই সমস্যামুক্ত হতে চায়। তাই সামাজিক সমস্যারও সমাধান হওয়া উচিত। কিন্তু সামাজিক সমস্যা সমাধান করতে হলে আগে জানতে হবে সমস্যার উৎস কোথায়। মূলত সমাজ এবং সামাজিক সমস্যা পরস্পর ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। অপূর্ণতা হলো সমাজের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। কোন সমাজই এককভাবে পরিপূর্ণ নয়। সমাজবিজ্ঞানে এ অপূর্ণতা সমস্যা হিসেবে পরিগণিত হয়। সমস্যা না থাকলে সমাজ স্থবির হয়ে পড়ত। সমস্যা আছে বলেই মানুষ তার সমাধান করার প্রচেষ্টা করে। আর এ প্রচেষ্টার মাধ্যমে মানবসমাজ গতিশীল
থাকে। মানুষ, সমস্যা এবং সমাধান এ তিনটি উপাদানের আন্তঃক্রিয়ার ফলে এগিয়ে চলেছে সমাজ। প্রকৃতপক্ষে, মানবসমাজ পরিবর্তনশীল। তাই সামাজিক সমস্যার উৎস বা কারণ হিসেবে কোন একটি নির্দিষ্ট কারণকে দায়ী করা যায় না। এ সম্পর্কে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্ন কারণকে দায়ী করেছেন। যেমন- সামাজিক পরিবর্তন, প্রাকৃতিক বা জৈবিক, মানসিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক জনসংখ্যা স্ফীতি ইত্যাদি।
সামাজিক সমস্যার শ্রেণীবিভাগ : সামাজিক সমস্যাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে শ্রেণীবিভাগ করা যায়। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো :
ক. উৎসের ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ : সমাজবিজ্ঞানী C. M. Case উৎসের ভিত্তিতে সামাজিক সমস্যাকে চার ভাগে ভাগ করেছেন । যথা :
প্রতিকূল প্রাকৃতিক অবস্থাজনিত সামাজিক সমস্যা, জনসংখ্যার ত্রুটিপূর্ণ প্রকৃতির কারণে সৃষ্ট সামাজিক সমস্যা, সামাজিক বিন্যাসের অসংগতি ও ত্রুটিপূর্ণতার কারণে সৃষ্ট সামাজিক সমস্যা এবং আদর্শ ও মূল্যবোধের দ্বন্দ্বজনিত সামাজিক সমস্যা।
খ. কারণভেদে শ্রেণীবিভাগ : সমাজবিজ্ঞানী Harold A. Philips তাঁর ‘Contemporary Social Problem’ গ্রন্থে সামাজিক সমস্যাকে চার ভাগে ভাগ করেছেন। যথা :
অর্থনৈতিক কারণে সৃষ্ট সামাজিক সমস্যা,
শারীরতাত্ত্বিক কারণে সৃষ্ট সামাজিক সমস্যা,
মনস্তাত্ত্বিক কারণে সৃষ্ট সামাজিক সমস্যা এবং
সামাজিক সাংস্কৃতিক কারণে সৃষ্ট সামাজিক সমস্যা।
গ. সমাজভেদে শ্রেণীবিভাগ :
আদিম সমাজের সমস্যা; যেমন- খাদ্য সংগ্রহ করা, আগুন জ্বালানো,
কৃষিভিত্তিক সমাজের সমস্যা; যেমন- ফসল তোলা ও সংরক্ষণ করা এবং শিক্ষাজনিত সমস্যা।
ঘ. স্থানভেদে সমস্যার শ্রেণীবিভাগ :
১. শহরের সামাজিক সমস্যা; যেমন- চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, রাহাজানি এবং
২. গ্রামীণ সামাজিক সমস্যা; যেমন- বাল্যবিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, বহুবিবাহ ইত্যাদি ।
ঙ. সমাধানের ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ : সমাজবিজ্ঞানী H. Hart সামাজিক সমস্যাকে সমাধানের ভিত্তিতে চার ভাগে ভাগ করেছেন। যথা ঃ অর্থনৈতিক সমস্যা; যেমন- দারিদ্র্য, বেকারত্ব ইত্যাদি,
স্বাস্থ্যগত সমস্যা; যেমন- রাতকানা, পঙ্গুত্ব, অন্ধত্ব ইত্যাদি,
শিক্ষাগত সমস্যা; যেমন- নিরক্ষরতা, অজ্ঞতা ইত্যাদি এবং
রাজনৈতিক ও জনসামাজিক সমস্যা; যেমন- ভোট দানে বাধা দান।
চ. অনুভব ও সামাজিকতার ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ : সমস্যার অসহনশীলতা ও ব্যাপকতার ভিত্তিতে সামাজিক সমস্যাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা :
১. প্রাকৃতিক সূত্রের সমস্যা, ২. জৈবিক সূত্রের সমস্যা ও ৩. সামাজিক সূত্রের সমস্যা।
ছ. সার্বিকতার ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ : সার্বিকভাবে সামাজিক সমস্যাকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা :
এক কারণজনিত সামাজিক সমস্যা; যেমন- বিবাহবিচ্ছেদ, মাদকাসক্ত এবং নিরক্ষরতা ইত্যাদি। বহু কারণজনিত সামাজিক সমস্যা; যেমন- দারিদ্র্য, বেকারত্ব,
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সামাজিক সমস্যা মানবজীবনের সার্বিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে উন্নত জীবনমান লাভে বাধাগ্রস্ত করে। আর এ সামাজিক সমস্যার উৎসও Multidi
sciplinary বা বহুমুখী । মূলত সমাজ সৃষ্টির সূচনালগ্নে সমাজকাঠামো ছিল সহজ। তাই তখন সামাজিক সমস্যা ছিল একমুখী। কালক্রমে সমাজকাঠামো বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়ে জটিল রূপ নিয়েছে। তাই সামাজিক সমস্যা জটিল ও বহুমুখী রূপ নিয়েছে। সুতরাং, সামাজিক সমস্যার কারণেও ব্যাপক সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। সামাজিক সমস্যা সঠিকভাবে সমাধান করতে হলে তার প্রকৃত উৎস সম্পর্কে জ্ঞান থাকা দরকার