• March 21, 2023

সামরিক শাসন কী? সামরিক শাসনের তিনটি বৈশিষ্ট্য লিখ।

অথবা, সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর।
অথবা, সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
অথবা, সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
যে কোনো রাষ্ট্রের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সামরিকবাহিনী একটি অপরিহার্য প্রতিষ্ঠান । বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের রাজনীতি বিশ্লেষণে সামরিকবাহিনীর ভূমিকাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঔপনিবেশিক শাসনের কবল থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে অনেক জটিল সমস্যার সম্মুখীন হয়। সামরিক শাসন বা রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপ তার মধ্যে অন্যতম।
সামরিক শাসনের সংজ্ঞা : সাধারণত বেসামরিক কার্যাবলি যখন সামরিক লোক দ্বারা পরিচালিত হয় তখন তাকে সামরিক শাসন বলে। অর্থাৎ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যখন বেসামরিক লোকের পরিবর্তে সামরিক লোক আসে তখনই ঐ অবস্থাকে সামরিক শাসন বলে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : সামরিক শাসন সম্বন্ধে অনেক তাত্ত্বিক তাদের মতামত দিয়েছেন, নিচে তাদের মতামত দেয়া হলো :
S. E. Finer বলেন, “বেসামরিক ক্রিয়াকলাপে দেশের শাসনকার্যে সামরিকবাহিনী জড়িয়ে পড়লে তাকেই সামরিক শাসন বলে । অর্থাৎ বেসামরিক কর্তৃপক্ষের জায়গায় সামরিক কর্তৃপক্ষ আসীন হবে এবং বলপ্রয়োগ নিহিত থাকবে।”
Nordlinger তাঁর ‘Soldiers in Politics’ গ্রন্থে বলেন, “সামরিক হস্তক্ষেপ হলো এমন একটা অবস্থা যেখানে সামরিক অফিসাররা তাদের প্রকৃত ক্ষমতা প্রয়োগ করে বা কর্তৃত্ব করে।” সুতরাং সামরিকবাহিনী যখন বেসামরিক প্রশাসনকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে নিজেরাই রাষ্ট্রীয় প্রশাসনযন্ত্রের দায়দায়িত্ব নিজের হাতে নেয় তখন তাদের শাসনকে সামরিকশাসন বলে।
সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্যসমূহ : নিচে সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো :
১. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগ : সামরিকবাহিনী নিজেদেরকে জাতির জিম্মাদার মনে করে। তাই যখন জাতির নাগরিক অধিকার খর্ব হয় এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজ করে তখন সামরিকবাহিনী ক্ষমতা চর্চা করে।
২. সংবিধান স্থগিত : সামরিকবাহিনী ক্ষমতায় এসে সংবিধান স্থগিত বা বাতিল ঘোষণা করে। সামরিক সরকারের আদেশ, নির্দেশ, অধ্যাদেশ ঘোষণা জবরদস্তিমূলক রাবার স্ট্যাম্প পার্লামেন্টে বৈধ করে সংবিধানে ঢুকিয়ে দেয়।
৩. রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস : সামরিকবাহিনী হত্যা, দমনপীড়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের চেষ্টা করে। যেমন- বাংলাদেশে ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এ অবস্থা বিরাজমান ছিল।
৪. প্রচার মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ : সামরিক শাসন আমলে প্রচারমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ ও বন্ধ করে দেয়া হয়।
৫. সামরিক আমলাদের সুযোগ-সুবিধা : সামরিক শাসন আমলে সামরিকবাহিনী থেকে বড় বড় প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেয়া হয় এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তাদের প্রচুর সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়। এ সময় সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়।
৬. জনপ্রিয়তা লাভের উদ্দেশ্য : সামরিকবাহিনী সস্তা জনপ্রিয়তা লাভের জন্য বিদেশ ভ্রমণ, বিদেশি কর্মকর্তা আনয়ন, অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করে থাকে। এতে জনপ্রিয়তা কিছুটা বাড়লেও প্রকৃতপক্ষে জনগণ গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা কামনা করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সামরিকবাহিনী দেশের অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানের চেয়ে একটি শক্তিশালী, সুসংগঠিত ও নিয়মতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। মূলত সামরিকবাহিনীর উদ্দেশ্য হলো দেশের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত দায়িত্ব বিশ্বস্ততার সাথে পালন করা এবং বিশেষ প্রয়োজনে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখে। কিন্তু ক্ষমতালোভী কিছু শাসক লোভে পড়ে ক্ষমতা চর্চা করে থাকে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b7%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%a0-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%b6%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%a8/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!