সাংখ্য দর্শন মতে প্রকৃতির অস্তিত্বের প্রমাণগুলো লিখ।
অথবা, সাংখ্য মতে প্রকৃতির অস্তিত্বের প্রমাণগুলো কী কী?
অথবা, সাংখ্য মতে প্রকৃতির অস্তিত্বের কী কী প্রমাণ রয়েছে?
অথবা, সাংখ্য দার্শনিকরা কীভাবে অস্তিত্বের প্রমাণ করেন?
উত্তর৷ ভূমিকা : সাংখ্য দর্শন ভারতীয় দর্শনগুলোর মধ্যে প্রাচীন। সাংখ্য দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রবর্তক হলেন মহর্ষি কপিল । সাংখ্য দর্শনের দুটি অর্থ আছে। যথা : প্রথমত, সম্যক জ্ঞান এবং দ্বিতীয়ত, সংখ্যাবোধক তত্ত্ব। সাংখ্য দর্শন হচ্ছে দ্বৈতবাদী দর্শন। কারণ সাংখ্য দার্শনিকগণের মতে, জগতের আদিকারণ বা আদিসত্তা হিসেবে দুটি সত্তায় বিশ্বাসী। যথা : ১. প্রকৃতি ও ২. পুরুষ ।
সাংখ্য মতে, প্রকৃতির অস্তিত্বের প্রমাণ : সাংখ্য দর্শন মতে, জগৎ ও জগতের প্রত্যেক বস্তু ও বিষয়ের মূল কারণ বা আদি উপাদান হলো অচেতন প্রকৃতি। প্রকৃতির অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য সাংখ্য দার্শনিকগণ কতকগুলো যুক্তির অবতারণা করেছেন যা নিম্নে আলোচনা করা হলো :
প্রথমত, সাংখ্য মতে, বুদ্ধি হতে ক্ষিতি পর্যন্ত জগতের সকল বস্তুই সসীম ও পরস্পর নির্ভর। কাজেই তাদের অসীম ও স্বনির্ভর কারণ থাকবেই। সেই কারণই হলো প্রকৃতি।
দ্বিতীয়ত, সাংখ্য দর্শন মতে, উৎপত্তির পূর্বে সকল কার্যই উপাদান-কারণে অব্যক্তভাবে বিদ্যমান থাকে। সুতরাং জগৎরূপ কার্যই কোন একটি উপাদান-কারণে অব্যক্তভাবে বিদ্যমান ছিল। সেই উপাদান-কারণই প্রকৃতি।
তৃতীয়ত, সাংখ্য দার্শনিকদের মতে, যে কোন কার্য কোন কারণ হতে উৎপন্ন হয়। সেই কারণ আবার আর একটি কারণ হতে উৎপন্ন হয়। এভাবে কারণের কারণ খুঁজতে গেলে এমন একটি কারণে উপনীত হতে হয় যার আর কোন কারণ নেই। সেই কারণই হলো প্রকৃতি।
চতুর্থত, সাংখ্য দর্শন মতে, শক্তি থেকেই কার্যের উৎপত্তি হয়। সুতরাং অসংখ্য বস্তুর পরিপূর্ণ এ জগৎ এক অপরিমেয় শক্তি থেকে উদ্ভূত এরূপ ধারণা বা অনুমান করতেই হয়। এ অপরিমেয় শক্তি যে কারণের মধ্যে অব্যক্তভাবে নিহিত ছিল তার নাম প্রকৃতি।
পঞ্চমত, সাংখ্য দর্শন মতে, জগতের প্রতিটি বস্তুই মনে সুখ, দুঃখ ও বিষাদ উৎপাদনে সক্ষম। সুতরাং এমন কোন সাধারণ কারণ আছে যার সুখ, দুঃখ ও বিষাদ এ তিনটিকে উৎপন্ন করার ক্ষমতা আছে। আর সেই সাধারণ কারণই হলো প্রকৃতি।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, সাংখ্য দর্শনের প্রধান মূল উপজীব্য বিষয় হচ্ছে প্রকৃতি ও পুরুষ। সাংখ্য দার্শনিকরা জগৎ এবং জগতের প্রত্যেক বিষয়ের মূল কারণ হিসেবে প্রকৃতিকে আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং জগৎ সৃষ্টির অনাদি উপাদান-কারণ হিসেবে সাংখ্য দার্শনিকেরা যে মতবাদ প্রচার করেছে তা ভারতীয় দর্শনে গুরুত্বপূর্ণ স্থান লাভ করে আছে।