অথবা, সাংখ্য দর্শন অনুসারে আপ্তবাক্য কী? আপ্তবাক্যে শ্রেণিবিভাগ দেখাও।
অথবা, সাংখ্য দর্শনে শব্দ কত প্রকার ও কী কী?
অথবা, সাংখ্য দর্শনে আপ্তবাক্যের শ্রেণিবিন্যাস কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : জ্ঞানতত্ত্বের আলোচনায় সাংখ্য দর্শনে তিনটি প্রমাণ স্বীকৃত হয়েছে। যথা : প্রত্যক্ষ (Perception), অনুমান (Inference) ও শব্দ (Testimony)। উপমান (Comparison), অর্থাপত্তি (Postulation),
অনুপলব্ধি (Non-Cognition) প্রভৃতি অন্যান্য প্রমাণগুলো এ তিনটি প্রমাণের অন্তর্ভুক্ত বলে সাংখ্য দার্শনিকগণ এদের স্বতন্ত্র প্রমাণ বলে স্বীকার করেন নি।
শব্দ বা আপ্তবাক্য (Testimony) : সাংখ্য মতে, শব্দ বা আপ্তবাক্য তৃতীয় এবং সর্বশেষ প্রমাণ। যেসব বস্তুকে প্রত্যক্ষ বা অনুমানের সাহায্যে জানা যায় না তাদের শব্দ প্রমাণের সাহায্যে জানা যায়। শব্দ জ্ঞানের যথার্থ (Validity) প্রধানত যে শর্তের উপর নির্ভর করে, সে শর্তটি হলো শব্দ বা আপ্তবাক্যের অর্থ উপলব্ধি করা। আপ্তবাক্যের অর্থ সঠিকভাবে বুঝতে না পারলে যথার্থ জ্ঞান সম্ভব নয়।
শব্দের প্রকারভেদ : শব্দ দুই প্রকারের। যথা : ১. লৌকিক এবং ২. বৈদিক।
১. লৌকিক শব্দ : লৌকিক শব্দ হলো বিশেষজ্ঞ ও বিশ্বাসযোগ্য সাধারণ লোকের বচন। যেমন- একজন কৃষক কর্তৃক তার কৃষি সম্পর্কে বর্ণনা। সাংখ্য দার্শনিকগণ লৌকিক শব্দকে স্বতন্ত্র প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করে না। কারণ লৌকিক শব্দ জ্ঞানকে প্রত্যাশা ও অনুমানের সাহায্যে লাভ করা যায়।
২. বৈদিক শব্দ : বৈদিক শব্দ হলো বেদের বচন। বেদ স্বর্গ, দেবতা, নরক, পাপ, পুণ্য প্রভৃতি প্রত্যক্ষের অতীত এবং অনুমানের অগম্য বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান দান করে। বেদ অপৌরুষেয়। কারণ বেদ কোন পুরুষের কৃত নয়। তাই মানুষ যে জাতীয় ভুল করে, সে জাতীয় ভুল বেদে থাকতে পারে না। বেদ অভ্রান্ত এবং স্বতঃপ্রমাণ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সাংখ্য জ্ঞানতত্ত্ব নিজস্ব অস্তিত্বের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে এবং ভিন্নধর্মী কিছু আলোচনার প্রয়াস পেয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা নৈয়ায়িকদের মতকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে সাংখ্য দর্শন এক নিজস্ব গতিময়তার দিকে ধাবমান হয়েছে তার এ গতিময়তা থেকেই উৎপত্তি লাভ করেছে তাদের বহুল আলোচিত জ্ঞানতত্ত্ব বিষয়ক মতবাদ। তাইতো ভারতীয় দর্শনে সাংখ্য জ্ঞানতত্ত্ব গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

ডিগ্রী অনার্স মাস্টার্স পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে পেতে Whatsapp এ ম্যাসেজ করুন। Whatsapp 01979786079