General Knowledge

সাংখ্য দর্শনে বিবর্তনের কারণ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।

অথবা, সাংখ্য দর্শনে বিবর্তনের কারণগুলো কী কী?
অথবা, সাংখ্য দর্শনে বিবর্তনের কী কী কারণ রয়েছে।
অথবা, সাংখ্য দর্শনে বিবর্তনের কারণগুলো লেখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সাংখ্য দর্শন ভারতীয় দর্শনের প্রাচীনতম চিন্তাধারার মধ্যে অন্যতম। এ দর্শনের প্রবর্তক ও প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি কপিল। প্রকৃতি এবং এর পরিণামসহ সমস্ত তত্ত্বকে সংখ্যা দ্বারা বিন্যাস করা হয় বলে একে সাংখ্য দর্শন বলে। সাংখ্য দর্শন মতে, অচেতন প্রকৃতি জগৎ কারণ, ব্রহ্ম জগৎ কারণ নয়। সাংখ্য দর্শনের গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বগুলো
হলো-জড়বস্তুর প্রকৃতিতত্ত্ব, কার্য-কারণতত্ত্ব, জ্ঞানতত্ত্ব ও বিবর্তনতত্ত্ব।
বিবর্তনের কারণ : জগৎ ও জগতের প্রত্যেক বস্তু ও বিষয়ের মূল কারণ হলো প্রকৃতি। জগৎ অব্যক্ত অবস্থায় অবস্থান করে এবং পরে এ প্রকৃতি হতে ক্রমে ক্রমে জগতের বিচিত্র অভিব্যক্তি বা বিবর্তন হয়। অর্থাৎ সৃষ্টির প্রাক্কালে প্রকৃতির উপাদান এবং শক্তিসমূহের বিরূপ-পরিণাম আরম্ভ হয়, একে অন্যকে প্রভাবিত করে। রজঃগুণের (যাবতীয় দুঃখের কারণ হলো প্রকৃতির রজঃগুণ) দ্বারাই প্রকৃতির সাম্যাবস্থা প্রথমে ভাঙে। প্রকৃতির প্রত্যেকটি উপাদান শক্তি এবং বৃত্তি একে অন্যের আপেক্ষিক, আকুতি অথবা প্রবণতাযুক্ত। সাংখ্যের প্রকৃতি অচেতন এবং সাংখ্যে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব অনুপস্থিত। এ দর্শনে আত্মা একটি স্বতন্ত্র তত্ত্ব, অসঙ্গ ও নিষ্ক্রিয়। আত্মা বহু, ভোক্তা এবং জ্ঞাতা। জগৎ ও জীরের বেলায় আত্মার প্রত্যক্ষ কোন কার্য নেই। আত্মার ভোগ ও মুক্তির জন্যই প্রকৃতির পরিণাম হয় এবং এ ধারণাটি কোন বাস্তব ব্যাপার নয়, অভ্যাসমাত্র। অতএব, পুরুষ ও প্রকৃতি এ দুটি মূলতত্ত্বের আসলে কোন সংযোগ হয় না। সৃষ্টি ও বিবর্তন প্রকৃতির নিজের কারণেই এবং উপাদান ও শক্তিসমূহের পারস্পরিক আকুতির ফলেই ঘটে। নিম্নে কখন এবং কিভাবে জগতের এ অভিব্যক্তি বা বিবর্তন হয় তা আলোচিত হলো :
জগৎ সৃষ্টির পূর্বে প্রকৃতি সত্ত্ব, রজঃ, তমঃগুণের সাম্যাবস্থায় থাকে। প্রকৃতির মধ্যে জগৎ অব্যক্ত থাকলেও প্রকৃতির সাম্যাবস্থার অবসান না ঘটলে জগতের অভিব্যক্তি সম্ভব নয়। প্রকৃতি ও পুরুষের যখন সংযোগ ঘটে তখন প্রকৃতির সাম্যাবস্থার অবসান ঘটে এবং জগতের অভিব্যক্তি আরম্ভ হয়। এ প্রসঙ্গে Chatterjee & Datta তাঁদের An Introduction to Indian Philosophy; গ্রন্থে বলেন, “The activity of prakrti must be guided by the Pintelligence of purusa, if there is to be any evalution of the world.” (Page-267) সুতরাং জগতের অভিব্যক্তির জন্য প্রকৃতি ও পুরুষের সংযোগ নিতান্তই প্রয়োজন। প্রকৃতি অচেতন ও বোধশক্তিহীন বলে সচেতন ও বুদ্ধিমান সত্তার নিয়ন্ত্রণ ব্যতিরেকে তার কাজ করা সম্ভব নয়। অপরপক্ষে, পুরুষ সচেতন এবং বুদ্ধিমান হলেও নিজে নিষ্ক্রিয় বলে পুরুষের পক্ষেও একা জগৎ সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। সুতরাং প্রকৃতির কর্মক্ষমতা ও পুরুষের বুদ্ধি এ দুটোর যখন সংযোগ হয় তখন জগতের অভিব্যক্তি বা বিবর্তন আরম্ভ হয়।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, সাংখ্য দর্শন জগতের বিবর্তনতত্ত্বের যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তা নিছক অধিবিদ্যাগত অনুধ্যান নয়, এতে শক্তির সংরক্ষণ রপান্তর এবং বিস্তার সম্পর্কিত প্রকৃতি-বিজ্ঞানী তত্ত্বের ভিত্তি আছে। তাই বলা হয়ে থাকে প্রকৃতিবিজ্ঞানের কয়েকটি মৌলিক ধারণার দ্বারা সাংখ্য দর্শন ভারতীয় দর্শনের ঐতিহ্যটিতে সমৃদ্ধ করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!