সম্যক বাক্ ও সম্যক কর্মান্ত বলতে কী বুঝ?
অথবা, বাক্ সংযম ও সংযত আচরণ বলতে কী বুঝ?
অথবা, সম্যক বাক্ ও সম্যক কর্মান্ত কাকে বলে?
অথবা, সম্যক বাক্ ও সম্যক কর্মান্তের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর ভূমিকা : গৌতম বুদ্ধের (খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩ অব্দ- খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৩ অব্দ) বাণী ও উপদেশের উপর ভিত্তি করে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে যে মতবাদ গড়ে উঠেছে সে মতবাদই ‘বৌদ্ধ দর্শন’ বা ‘বৌদ্ধধর্ম।’ বুদ্ধদেবের মতে, দুঃখের কারণ অপসারণ করার মার্গ বা পথই হলো দুঃখ নিবৃত্তির পথ। এ পথের আটটি অঙ্গ বা স্তর আছে। তাই এ পথকে বৌদ্ধ দর্শনে অষ্টাঙ্গিক মার্গ বলা হয়। বুদ্ধদেবের মতে, এ পথ সকলের জন্য উন্মুক্ত। এ মার্গের অন্যতম দু’টি স্তর হলো সম্যক বাক্ ও সম্যক কর্মান্ত, যা নিয়ে আলোচনা করা হলো :
সম্যক বাক্ বা বাক্ সংযম : মিথ্যা কথা, কটু কথা, অসার কথা, পরনিন্দা প্রভৃতি ত্যাগ করাই বাক্ সংযমের লক্ষণ। বুদ্ধদেব বলেছেন, কেবল সৎ-সংকল্প গ্রহণ করলে মুক্তি আসবে না, সংকল্প অনুসারে কাজও করতে হবে। এ জন্য প্রথমেই বাক্ সংযম প্রয়োজন। কারণ বাক্যের নিয়ন্ত্রণ হতে মুক্তিকামীর আত্মনিয়ন্ত্রণ আরম্ভ হয়। সুতরাং বুদ্ধদেবের মতে, সাধু সংকল্প শেষ কথা নয়; মুক্তিকামীকে মিথ্যা কথা, কটু কথা, অসার কথা, সত্যগোপন, পরনিন্দা এসব বর্জন করতে হবে। কারণ, এগুলো দ্বারা অপর ব্যক্তি মনে আঘাত পায়।
সম্যক কর্মান্ত বা সত্যত আচরণ : অহিংসা, অস্তেয় বা অচৌর্য, ব্রহ্মচার্য (অবৈধ ইন্দ্রিয়-সম্ভোগ-বিরতি), সত্য ও মাদকদ্রব্য বর্জন- এ পঞ্চশীল সম্যক কর্মাস্তেরই অন্তর্গত। বুদ্ধদেব বলেছেন, কেবল, সংযত বাক্য বললে চলবে না, সংযত আচরণেরও প্রয়োজন। প্রিয় ভাষণের সাথে প্রিয় কর্মের যোগ আছে। তাই মুক্তিকামীকে প্রাণী হত্যা, চৌর্যবৃত্তি ও
ইন্দ্রিয়সেবা হতে বিরত থাকতে হবে এবং স্বার্থবোধ ত্যাগ করে নিষ্কাম ভাবে কর্ম করতে হবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বৌদ্ধ দর্শনের অষ্টাঙ্গিক মার্গের মধ্যে সম্যক বাক্ ও সম্যক কমান্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।