সম্যক চরিত্র বলতে কী বুঝ?
অথবা, সম্যক চরিত্র কী?
অথবা, জৈনরা সম্যক চরিত্র বলতে কী বুঝায়?
অথবা, জৈনদের সম্যক চরিত্র কী?
উত্তর৷ ভূমিকা : জীব বা আত্মার পূর্ণতা লাভের জন্য প্রয়োজন আত্মার মুক্তি লাভ। আর এ মুক্তি লাভের জন্য প্রয়োজন সম্যক জ্ঞান, সম্যক দর্শন ও সম্যক চরিত্র নামক কর্ম পদ্ধতি যাদের জৈনরা ত্রিরত্ন বলে অভিহিত করেছেন। মুক্তি বা মোক্ষলাভ এ ত্রিরত্নেরই যুগ্মফল। এ ত্রিরত্নের মধ্যেই অন্যতম একটি পথ হলো সম্যক চরিত্র। নিম্নে সম্যক চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
সম্যক চরিত্র : জৈন মতে, সম্যক চরিত্রের মূল কথা হলো ক্ষতিকর কিছু না করা এবং যা কিছু কল্যাণকর তা করা। সম্যক চরিত্র দ্বারা এমন আচরণ বুঝায় যার দ্বারা জীব কর্ম পুদগলের হাত হতে পরিত্রাণ লাভ করে। কারণ এ কর্ম পুদগলই জীবের বন্ধাবস্থা, তথা দুঃখ দুর্দশার জন্য দায়ী। এ সম্যক চরিত্রের দ্বারাই জীবের কর্ম পুদগলের অনুপ্রবেশের পথ রুদ্ধ হয় এবং প্রাক্তন কর্ম পুদগলের ক্রমশ বিনাশ সাধিত হয়। চিন্তা সংযম, ইন্দ্রিয় সংযম, বাক সংযম, প্রবৃত্তি সংযম এবং রাগ-দ্বেষ সংযমকে জৈনরা সম্যক চরিত্রের অঙ্গ বলেছেন। আবার কোন কোন জৈন দার্শনিক মহাব্রতকে সম্যক চরিত্রের অঙ্গ বলেছেন। এ পঞ্চ মহাব্রত হলো :
অহিংসা : অহিংসা বলতে বুঝায় সবরকম প্রাণিহিংসা থেকে বিরত হওয়া। চিন্তা, বাক্য ও কার্য সকল প্রকার অহিংসা থেকে বিরত হওয়াই জৈনদের লক্ষ্য।
সত্য : জৈন মতে, সত্য কেবল মিথ্যার বিরোধী দিকটা নয়। সত্য হলো যা মিথ্যা নয় এবং হিতকর ও মনোহর তাই বলা।
অস্তেয় : অপরের জিনিস চুরি না করা, এমন কি চুরি করার ইচ্ছাপোষণও না করাই অস্তেয়।
ব্রহ্মচর্য : সাধারণত জননেন্দ্রিয়ের নিবৃত্তিকেই ব্রহ্মচর্য বলা হয়। কিন্তু জৈন মতে, সমস্ত কামবৃত্তির নিরোধই ব্রহ্মচর্য।
অপরিগ্রহ : চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক এ পঞ্চইন্দ্রিয়ের গ্রহণীয় বিষয় হলো যথাক্রমে রূপ, শব্দ, রস, গন্ধ ও স্পর্শ। এসব বিষয়ের আকর্ষণ হতে নিজেকে মুক্ত রাখাই অপরিগ্রহ। জৈন মতে, অপরিগ্রহ ব্রতের সাহায্যে জীব বিষয় বাসনা হতে মুক্ত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জৈনরা কর্ম পুদগলকে জীবের বা আত্মার মুক্তির পথে বাধা বলে মনে করেন। আর সম্যক চরিত্রের সাহায্যে এ কর্ম পুদগল হতে মুক্ত হয়ে জীব মুক্ত হতে পারে।