General Knowledge

সমাজকাঠামোর উপাদান সম্পর্কে আলোচনা কর।

অথবা, উপরি কাঠামোর সংজ্ঞা দাও।
অথবা, সুপার স্ট্রাকচার কী?
অথবা, উপরি কাঠামো কাকে বলে?
উত্তর৷ ভূমিকা :
সমাজবিজ্ঞানে ‘সমাজকাঠামো’ একটি মৌল প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রত্যেক জিনিসের একটি কাঠামো থাকে যার উপর ভিত্তি করে ঐ বিষয়টি টিকে থাকে। ঠিক তেমনি সমাজের একটি কাঠামো রয়েছে যা গঠিত হয় সমাজস্থ কিছু উপাদানের সমন্বয়ে। কাঠামো শব্দটি প্রথম চার্লস ডারউইন জীববিজ্ঞানে ব্যবহার করলেও সমাজবিজ্ঞানে এ প্রত্যয়টি অবতারণা করেন হার্বার্ট স্পেন্সার। তিনি হলেন সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম পথিকৃৎ।
উপরি কাঠামো : কার্ল মার্কসের মতে, উৎপাদন পদ্ধতি ও উৎপাদন সম্পর্ক সমাজের এ মৌল কাঠামোকে নির্ধারণ করে। এ মৌল কাঠামোই-Super structure বা উপরি কাঠামো। উপরি কাঠামো হলো রাষ্ট্র, আইন, ধর্ম, শিল্পকলা ও দর্শন সংক্রান্ত মতাদর্শ এবং রাষ্ট্রীয় আইন ও অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠান যারা ঐ মতাদর্শকে পরিপোষণ করে। তাই
মার্কসের বক্তব্য অনুযায়ী সমাজকাঠামো দ্বিমাত্রিক- Structure Basic (মৌল)} (i) অর্থনীতি Super (উপরি)} (ii) সামাজিক দিক (iii) সাংস্কৃতিক দিক এই তিনটি ইউনিট সমাজকাঠামোকে পরিচালিত করে। এখানে একথা বলা আবশ্যক যে মৌল কাঠামোর রূপান্তর উপরি কাঠামো দুটি ধরন তথা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উভয়দিকে প্রভাবিত করে। পক্ষান্তরে Super structure এর পরিবর্তনে Basic structure এর ক্ষেত্রেও পরিবর্তন হয়। তবে এ রূপান্তর একেবারে একসাথে নাও হতে পারে। বাস্তব সমাজে আমরা দেখতে পাই যে, সমাজব্যবস্থা কতকগুলো আইনদ্বারা পরিচালিত এবং সে আইন ও নিয়মশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সমাজে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে; সমাজব্যবস্থায় সেসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টিকে থাকে। এককথায় বলা যায় যে, সমাজ পরিবার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের যে একটি সমাজে চিত্র ফুটে উঠে তা হচ্ছে বাস্তব সমাজ। আর এ বাস্তব সমাজে ধারণা যে সামাজিক মানুষের বুদ্ধিমত্তা দ্বারা গঠিত তা অস্বীকার করা যায় না।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সমাজকাঠামো সম্পর্কে মার্কসীয় ধারণার যৌক্তিক ভিত্তি রয়েছে। সমাজকাঠামোর গতিশীলতা মূলত অজৈব প্রকৃতির হলেও ক্ষেত্র বিশেষে তার ব্যতিক্রম দেখা যায়। উপরি কাঠামো সমাজে সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে মত পরিপোষণ করে থাকে। সুতরাং এটি হচ্ছে সমাজের অন্তর্গত সকল উপাদানের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ও ভৌত সংশ্লেষের ফলে সুস্পষ্ট হয়ে উঠা সমাজের প্রতিচ্ছবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!