সংক্ষেপে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস উল্লেখ কর।
অথবা, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের পরিধি সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরিধি বাঙালির জাতীয় জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় যেমন একদিনে হয়নি, তেমনি সহজলভ্য ছিল না। দীর্ঘদিনের ত্যাগের ফসল হলো এই স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় । ৯ মাসের সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে জন্ম নেয় বাংলাদেশ। অর্জিত হয় বাংলার স্বাধীনতা।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের তিনটি পরিধি : ১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্তি ছিল উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পর্যন্ত হলো বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের পরিধি। নিচে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরিধি আলোচনা করা হলো :
১. সাংস্কৃতিক ঐক্য : স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে সাংস্কৃতিক ঐক্য ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বাঙালি জাতির ছিল অভিন্ন সংস্কৃতি। বাঙালির ভাষা, আচারআচরণ ও মূল্যবোধ ছিল অভিন্ন। ফলে জাতীয়তাবোধ ছিল সুদৃঢ়। এ জাতীয়তাবোধ দুর্বল করতে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালি সংস্কৃতির উপর আগ্রাসন শুরু করে। এ আগ্রাসনের অংশ হিসেবে তারা প্রথমে বাঙালির ভাষার উপর আঘাত হানে। সমগ্র পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬% এর মাতৃভাষা বাংলা হলেও তারা উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার চেষ্টা করে। ফলে বাঙালি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর এ প্রস্তাব মেনে নিতে পারেনি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে বাংলার জনগণ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে রাস্তায় নেমে পড়ে। এসময় পুলিশ মিছিলে গুলি বর্ষণ করলে রফিক, জব্বার, সালাম, বরকতসহ আরো অনেকে নিহত হয়। কিন্তু আন্দোলন অব্যাহত থাকে। এক পর্যায়ে পাকিস্তান সরকার বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। বাঙালির এ জয় এক পর্যায়ে বাঙালি জাতিকে পুরোপুরি স্বাধীন হতে উদ্বুদ্ধ করেছিল ।
২. পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণ : পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে বৈষম্যের বীজ নিহিত ছিল। শাসকরা ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানি এবং তারা পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের উপর প্রতিক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানে উন্নয়নের পরিবর্তে তারা সবসময় দমনপীড়ন চালাত। অর্থনৈতিক, সামাজিক, সামরিক প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে তারা বাঙালির উপর বৈষম্যমূলক আচরণ করতো। এর মধ্যে অর্থনেতিক বৈষম্য ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পূর্ব পাকিস্তানে ৬০% রাজস্ব আদায় হতো অথচ এর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ব্যয় হতো পশ্চিম পাকিস্তানে। কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়ন ব্যয়ের ২৫-৩০% ব্যয় হতো পূর্ব পাকিস্তানে যা পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাঙনের অন্যতম কারণ।
৩. একুশ দফা, ছয়দফা : ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট যে ২১ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করে তার প্রতি বাংলার জনগণ সমর্থন দিলে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা সে জনমতের গুরুত্ব দেয়নি। ছয়দফা ছিল বাঙালির প্রাণের দাবি। অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এ দফাগুলো দেশরক্ষার অধিকারে রূপ নেয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের পরিধি ছিল এক সংগ্রামী ইতিহাস। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে অর্জন করে স্বাধীনতা। জন্ম নেয় একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।